ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের কার্যালয়ে ‘নিপীড়নবিরোধী’ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ২৯ জানুয়ারি সারাদেশে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।
Published : 24 Jan 2018, 12:23 PM
তার আগে ২৬ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংহতি সমাবেশ এবং ২৮ জানুয়ারি সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর এই জোট।
বুধবার মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে জোটের নেতা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের একাংশের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
অন্যদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি জি এম জিলানী শুভ, ছাত্রফ্রন্টের আরেক অংশের সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবির, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, ছাত্রফ্রন্টের একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন এ সংবাদ সম্মেলনে।
ইমরান হাবিব রুমন বলেন, “আদালত ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করার রায় দিয়েছে। সেই নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যেই গতকাল ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।”
ভিসি কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে দুই দফা হামলার ঘটনায় দায়ী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, প্রক্টর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচির সময় ভাঙচুরের অভিযোগে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
ইমরান হাবিব রুমন বলেন, মঙ্গলবার হামলার ঘটনার প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্রজোট বুধবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট এমসি কলেজ ও ঢাকায় মিরপুর বাংলা কলেজে তাদের এ কর্মসূচিতেও হামলা হয়েছে।
ছাত্রী নিপীড়নে জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের বহিষ্কারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী’ ব্যানারে মঙ্গলবার দুপুরে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করে একদল শিক্ষার্থী। বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারাও সেখানে সক্রিয় ছিলেন।
বিক্ষোভকারীরা অন্তত তিনটি ফটক ভেঙে উপাচার্যের দরজার সামনে অবস্থান নেন। তিন ঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ থাকার পর উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান পেছনের ফটক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও আন্দোলনকারীরা তাকে আটকে দেয়।
পরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি দল উপাচার্যকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে যায় এবং রড-লাঠি নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ফ্রন্টের নেতা রুমন লিখিত বক্তব্যে বলেন, “নির্যাতনবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠন ও সচেতন শিক্ষার্থীরা বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছে। প্রক্টরের পদত্যাগ ও মামলা প্রত্যাহারসহ শিক্ষার্থীরা উপচার্য কার্যালয়ে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে উপচার্যকে অবরুদ্ধ করে। তখন ছাত্রলীগ ত্রিমুখী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। রড লাটিসোঁটা দিয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা দফায় দফা হামলা করে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক বিভিন্ন আন্দোলনের খবর নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সাত কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্কট তীব্র হবে বিবেচনায় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। ওই আন্দোলনের প্রতি জোটের কোনো সমর্থন বা সম্পৃক্ততা ছিল না।
জোটের সংবাদ সম্মেলনের পর নির্যাতনবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানারে এ আন্দোলনের সমন্বয়ক মাসুদ আল মাহাদীর নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেন, যারা মঙ্গলবারের ঘটনায় হামলার শিকার হয়েছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শ্রবণা শফিক দীপ্তি বলেন, “মিছিল নিয়ে যখন বের হওয়ার চেষ্টা করছি, এমন সময় সিনেট ভবনের পাশে আমার ওপর হামলা করে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা। বেধড়ক মারধর করে; কিল ঘুষি মারে। আমরা কাপড় ছিঁড়ে দেয় তারা।”
ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজিরকেও হামলাকারীরা মারধর করে বলে জানান তিনি।
দীপ্তি বলেন, “বেনজির আপাকে ছাত্রলীগের নারী নেত্রীসহ ছাত্রলীগ নেতার মারধর করে। তার বুকে-পেটে তারা লাথি মারে।”
অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র ফারহান শাহরিয়ার পুলক বলেন, “উপাচার্য কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যখন রেজিস্ট্রার ভবনের গেইট দিয়ে বের হচ্ছিলাম, তখন আন্দোলনরত একজনকে ছাত্রলীগের ১০-১২ নেতাকর্মী মিলে মারছিল। আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে পালাতে সহায়তা করি।
“উনি যেতে পারলেও তখন আমার ওপর হামলা করে তারা। গেইট থেকে মারতে মারতে সূর্যসেন হলের সামনে ফেলে আসে আমাকে।”
এ আন্দোলনের সমন্বয়ক মাসুদ আল মাহাদী বলেন, উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা না বলে পেছনের গেইট দিয়ে বেরিয়ে যেতে চাইছিলেন বোর্ড অব অ্যাডভান্স স্টাডিজের মিটিংয়ে যোগ দিতে।
“আমরা বলেছিলাম, ডাকসু নির্বাচন দিতে না পারলে, শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে না পারলে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিটিং করতে না পারলে ওই মিটিং করে কী হবে? প্রক্টরের পদত্যাগ এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে তদন্ত লাগে না- আমাদের দাবি মানবেন, তারপর এখান থেকে যাবেন। অথবা যৌক্তিক বক্তব্য দিয়ে যাবেন।
“এরপর কী হল? পাকিস্তান আমলে মোনায়েম খানের এনএসআই ডেকে আনার মত ছাত্রলীগকে ডেকে নিয়ে এলেন। আমাদের ওপর দফায় দফায় হামলা হল। ওই হামলার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে নাটকও সাজানো হল- বলা হল, আমরা নাকি হামলা করেছি। যারা আমাদের মেরেছে তারাই আবার ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নাটক সাজাল।”
চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগের ছাত্রী সামান্থা শারমিন প্রগতিশীল জোটের ২৯ জানুয়ারি ডাকা ধর্মঘটে সমর্থন জানান।
তিনি বলেন, “উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে; স্যারের ওপর হামলা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতিতে যে ধরনের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করছে, তা ভিত্তিহীন এবং ছাত্রলীগের ওপর হামলার অভিযোগ হাস্যকর।”
সংবাদ সম্মেলন শেষে চার দফা দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্রজোট এবং প্রক্টরের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে ‘নির্যাতনবিরোধী’ শিক্ষার্থীবৃন্দ মধুর ক্যান্টিন থেকে আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে বের হয়।