উপাচার্যকে ‘লাঞ্ছিত’ ও ছাত্রলীগের নারী শিক্ষার্থীদের ওপর ‘হামলায়’ জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে তারা।
বুধবার উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে প্রায় দুই ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, “আজকের পর থেকে কেউ যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে, তাহলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমরা দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব।”
সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে এই কর্মসূচি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।
ছাত্রী নিপীড়নে জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের বহিষ্কারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী’ ব্যানারে মঙ্গলবার দুপুরে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করে একদল শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে সক্রিয় ছিলেন বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা।
অন্তত তিনটি ফটক ভেঙে তারা উপাচার্যের দরজার সামনে করিডোরে অবস্থান নেন। তিন ঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ থাকার পর উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান পেছনের ফটক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও আন্দোলনকারীরা তাকে আটকে দেয়।
পরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি দল উপাচার্যকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে যায় এবং রড-লাঠি নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়।
বাম সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করা এবং ছাত্রলীগের নারী কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় অপরাজেয় বাংলার সামনে মানববন্ধন করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান সেখানে বলেন, “যদি আমার বাবাকে রক্ষা করতে গিয়ে, আমার শিক্ষককে রক্ষা করতে গিয়ে আমাকে জেলে যেতে হয়, মৃত্যুবরণ করতে হয় আমি তাতেও রাজি আছি।”
এরপর বেলা সোয়া ১২টার দিকে প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী উপাচার্য ভবনের তালাবন্ধ গেইটের সামনে আসেন ছাত্রলীগ নেতাদের দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলার জন্য। তবে ছাত্রনেতাদের বক্তব্য শেষ হলে শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে চলে যাবেন জানালে প্রক্টর চলে যান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স অবস্থান কর্মসূচিতে বলেন, “আমরা ডাকসুর জন্য আড়াই বছর ধরে কাজ করছি, আর বামেরা ২০-২৫ জন লোক নিয়ে কলাভবনের গেট বন্ধ করে।”
এ সময় তিনি সমবেত কর্মীদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেন- “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসে গাঁজা খায় কারা?”
সমস্বরে উত্তর আসে- ‘বামেরা’।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এই কর্মসূচিতে একাত্মতা জানাতে দুপুরে ভিসি কার্যালয়ের সামনে আসেন।
তিনি বলেন, “কোনো গেইট ভেঙে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ লুটপাট করে কোনো আন্দোলন সংগ্রাম হতে পারে না। তারা কী উদ্দ্যশ্যে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গেট ভেঙেছে তা আপনারা দেখেছেন। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ওপর হামলা করেছে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে থাকতে পারে না। গতকালও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বামদের এই আন্দোলনকে প্রতিহত করে দিয়েছিল।
ঘটনার সম্পূর্ণ অনুসন্ধান করে ‘সঠিক তথ্য’ উপস্থাপনের জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান ছাত্রলীগ সভাপতি।
“আমাদের একটি দাবি, এই ষড়যন্ত্রকারীদের, এই অছাত্র, কুলাঙ্গাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে এবং তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।”
এই কর্মসূচিতে এসে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ হাজার ছাত্রছাত্রীর অভিভাবক উপাচার্য মহোদয়কে কীভাবে ঘিরে ধরা হয়েছে- তা আমরা দেখেছি। আমাদের বোনদের কীভাবে ঘিরে ঘরে লাঞ্ছিত করেছে, হামলা করেছে- তা আমরা দেখেছি। এই হামলা যারা করেছে তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বহিষ্কার করতে হবে।”
টিএসসিকেন্দ্রিক সংগঠনগুলোর মধ্যে স্লোগান ’৭১ এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতারাও এ অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন।
কর্মসূচি শেষে ছাত্রলীগ কর্মীদের মিছিল মল চত্বর, কলাভবন, কেন্দ্রীয় মসজিদ হয়ে অপরাজেয় বাংলায় এসে শেষ হয়।
কর্মসূচির সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক নোমান সুমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আগামীকাল বেলা ১১টায় আবার মানববন্ধনের ডাক দিয়েছি। আগামীকালের কর্মসূচি থেকে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হবে।”