ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচন ও সম্প্রসারিত অংশের কাউন্সিলর নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে দিয়েছে আদালত।
Published : 17 Jan 2018, 10:45 AM
সেই সঙ্গে ওই নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে হাই কোর্ট রুল জারি করেছে।
দুটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়।
আনিসুল হকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য গত ৯ জানুয়ারি তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। সেখানে ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন ঠিক করে নির্বাচনের বিস্তারিত সময়সূচি দেওয়া হয়।
ওই তফসিলের বৈধতা চ্যালঞ্জ করে এবং তফসিলের কার্যকরিতার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে মঙ্গলবার হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম।
তাদের মধ্যে আতাউর ভাটারা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, আর জাহাঙ্গীর বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাদের দুই ইউনিয়নকে সিটি করপোরেশনের সম্প্রসারণে ওয়ার্ড হিসেবে যুক্ত করে নেওয়া হয়েছে।
আতাউর রমানের পক্ষে হাই কোর্টে শুনানি করেন মোস্তাফিজুর রহমান খান ও আহসান হাবিব ভূঁইয়া। আর জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী ও মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন সেলিম।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
হাই কোর্টের শুনানিতে রিটকারী পক্ষের আইনজীবী বলেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৮ জানুয়ারি মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বলা হলেও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত ভোটার তালিকাই প্রকাশ করা হয়নি।
আহসান হাবিব ভূঁইয়া যুক্তি দেন, “এখন যিনি প্রার্থী হবেন, তিনি কিন্তু জানেন না তিনি ভোটার কিনা। তাছাড়া মনোনয়নপত্রে ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষর থাকতে হবে। ভোটার তালিকা প্রকাশ না হলে সেটা কীভাবে সম্ভব?”
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ৫ (৩) উপধারায় বলা হয়েছে, “মেয়রের পদসহ করপোরেশনের শতকরা পঁচাত্তর ভাগ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইলে এবং নির্বাচিত কাউন্সিলরগণের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হইলে, করপোরেশন, এই আইনের অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে, যথাযথভাবে গঠিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।”
আহসান হাবিব ভূঁইয়া বলেন, “উত্তর সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টির ওয়ার্ড ধরলে কাউন্সিলরের সংখ্যা পঁচাত্তর শতাংশ হয় না। কারণ নতুন ১৮টিতে তো নির্বাচনই হয়নি। সে হিসাবে মেয়র পদই তো গঠিত হচ্ছে না।”
তাছাড়া সম্প্রসারিত ১৮টি ওয়ার্ডে যারা কাউন্সিলর হবেন, তারা পুরো পাঁচ বছর পাবেন না- কেন সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হয় ওই রিট আবেদনে।
বুধবার হাই কোর্টের আদেশের পর মোস্তাফিজুর রহমান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত নির্বাচনের তফসিল তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে এবং তফসিলটি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- সেই মর্মে রুল দিয়েছে।”
আদালতের আদেশ নির্বাচন কমশিনকে অবহিত করা হয়েছে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “এখন কমিশন আদালতের আদেশ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এদিকে বিএনপি অভিযোগ করেছে, ঢাকার সিটি নির্বাচন স্থগিত হয়েছে ‘সরকারের ইঙ্গিতে’।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, “কী সুন্দর খেলা! সরকার যখন বুঝতে পেরেছে যে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র উপ-নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হবে, তখন কোর্টে নিজেদের লোক দিয়ে রিট করিয়ে নির্বাচন স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।”
এ অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “এখানে সরকারের যোগসাজশের কোনো বিষয় নেই। আমরা এই নোংরা পলিটিক্স করি না, এতে বিশ্বাসও করি না।”
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হয়নি, সীমানাও সেভাবে নির্ধারিত হয়নি- এরকম কিছু ‘বেসিক কারণে’ রিট হওয়ায় নির্বাচন স্থগিত হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।
“স্থগিত হলেও আমাদের কিন্তু কোনো অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে না। সিটি কপোরেশনের মেয়র মারা যাওয়ার প্রায় ছয় মাস হয়ে গেল, সিটি করপোরেশন ভালোভাবেই চলছে, ওখানে প্যানেল মেয়র মহোদয় আছেন, উনি উনার কমিশনারদের নিয়ে ভালোই চালাচ্ছেন।”