নিখোঁজ হওয়ার একদিন পর ঢাকার শুক্রাবাদ এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে এক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
Published : 18 Dec 2017, 10:55 AM
রফিকুল হাসান রিমন নামের ওই ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে শনিবার ঢাকার নিউ মার্কেট থানায় একটি জিডি করেছিল তার পরিবার।
রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শুক্রাবাদের একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে বলে শেরেবাংলা থানার ওসি গনেশ গোপাল বিশ্বাস জানান।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্ত্রী কানিজ ফাতেমার সঙ্গে রিমনের বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছে। এ কারণে রিমন উত্তরায় তার বোনের বাসায় এবং কানিজ সায়েন্স ল্যাবরেটরি রোডে তার বাবার বাড়িতে থাকছিলেন। তাদের দুই সন্তানের মধ্যে একজনের বয়স ১০ বছর, আরেকজনের সাড়ে চার।
পারিবারিক জটিলতার পাশাপাশি আগারগাঁওয়ে একটি ফ্ল্যাট নিয়ে সায়েদুল করিম রনি নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে রিমনের মামলা চলছিল।
এক সময় জাহাজের ক্যাপ্টেন হিসেবে চাকরি করলেও এসব কারণে গত ছয় মাস ধরে কাজ বাদ দিয়ে রিমন ঢাকাতেই থাকছিলেন বলে তার বাবা বাবা মো. খলিলউল্লাহ জানান।
আর পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যার সঙ্গে ফ্ল্যাট নিয়ে ঝামেলা, সেই রনিকে হেফাজতে নিয়ে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
পরিবারের বরাত দিয়ে ওসি গনেশ গোপাল বিশ্বাস জানান, গত ১৬ ডিসেম্বর রিমন উত্তরা থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি রোডে শ্বশুরবাড়িতে আসেন।
সেখানে বাচ্চাদের রেখে তিনি ধানমণ্ডি যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে যান। এর পর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
রোববার রাতে শুক্রাবাদের একটি নির্মাণাধীন ভবনে একটি লাশ পড়ে থাকার খবরে পুলিশ সেখানে যায়। পরে দুই বন্ধু ওই ব্যক্তিকে রিমন হিসেবে শনাক্ত করেন।
রিমনের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেন, “প্রায় আট মাস ধরে আমাদের সম্পর্ক নেই। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের কথা চলছিল। আমি যতদূর জানি সে বিচ্ছেদের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তবে আমি এখনও কোনো কাগজ পাইনি।”
তদন্তে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, এক মামাতো বোনের সঙ্গে রিমনের প্রেমের সম্পর্কের জেরেই স্ত্রীর সঙ্গে তার জটিলতার সূত্রপাত হয়। রিমন তার মোবাইল থেকে শেষবার কথা বলেন ওই তরুণীর সঙ্গেই।
কানিজ জানান, আগারগাঁওয়ে রিমনের দুটি ফ্ল্যাট ছিল, যার একটি রনি দখল করে রেখেছেন। ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে মামলাও চলছে।
তিনি বলেন, “কোনো সুবিধা পাওয়ার জন্য ওই রনিই হয়ত রিমনের পেছনে কোনো মেয়েকে লাগিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।”
তবে রিমনের বাবা পুরান ঢাকার সরকারি মুসলিম হাই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক খলিলউল্লাহ বলছেন, কানিজের পরিবারকে নিয়েই তার সন্দেহ রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ওরা অনেকদিন ধরে আমার ছেলেকে হুমকি দিয়ে আসছিল। কানিজের পরিবারের সাথে রনি কোনো গোপন যোগসাজস করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে কি না- তা পুলিশকে তদন্ত করে দেখতে হবে।”
খলিলউল্লাহ বলেন, কানিজের সঙ্গে রিমনের তালাকের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। কাবিনের টাকাও পরিশোধ করা হয়েছিল। কেবল আইনগত প্রক্রিয়াটাই বাকি ছিল।
ছেলের হত্যাকারীদের যেন সাজা হয়, সেজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন এই বাবা।
নিউ মার্কেট থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুস সালাম বলেন, জিডি হওয়ার পর তদন্তে নেমে পুলিশ শুক্রাবাদের মেট্রো শপিং মল এলাকার সিসি ক্যামেরায় রিমনের সর্বশেষ অবস্থান পান। এরপর কী ঘটেছিল তা পুলিশ জানার চেষ্টা করছে।