বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তার পরিবারের সদস্যদের ‘সৌদি আরবে সম্পদ থাকার খবর’ বাংলাদেশের গণমাধ্যম এড়িয়ে যাওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 07 Dec 2017, 06:42 PM
বাংলাদেশে শুধু দুটি সংবাদপত্র ও দুটি টেলিভিশনে ওই ‘খবর’ পাওয়ার তথ্য জানিয়ে তিনি সংবাদটি চেপে যাওয়ার ক্ষেত্রে অন্য সাংবাদিকদের লেনদেনের কোনো স্বার্থ রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন।
বেশ কয়েকজন সম্পাদকসহ শতাধিক সাংবাদিকের উদ্দেশে বৃহস্পতিবার গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেছেন, “আমার হলে তো হুমড়ি খেয়ে পড়তেন।”
কম্বোডিয়া সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই সংবাদ সম্মেলনে সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার,দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, বিএফইউজের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, এটিএন বাংলার বার্তা প্রধান জ ই মামুনসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে দুর্নীতি মামলায় বিচারের মুখে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের সৌদি আরবে সম্পদ থাকার তথ্য বাংলাদেশের গুটিকয়েক সংবাদ মাধ্যমে সম্প্রতি আসে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর লিখিত বক্তব্যের পরপরই বিএফইউজের একাংশের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল সৌদি আরবে খালেদা জিয়ার সম্পদের তথ্যের বিষয়ে জানতে চান।
প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করছেন বিএফইউজে সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল
এর জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী অনেকটা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “সৌদি আরবে যে বিশাল শপিং মল পাওয়া গেল; এটা তো আমরা বলিনি। এই খবর দেওয়ার কোনো আগ্রহ দেখলাম না।
“আমরা তন্ন তন্ন করে দেখেছি। শুধু দুটি চ্যানেল ও দুটি পত্রিকা শুধু নিউজটা করেছে।”
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী সম্পাদিত দ্য ডেইলি অবজারভারে এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল গত ১ ডিসেম্বর। প্রতিবেদনে সংবাদের উৎস বলা হয়েছিল, আরবভিত্তিক টিভি চ্যানেলগুলোকে উদ্ধৃত করে ‘গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক (জিআইএন)’ এবং ‘কানাডার টিভি চ্যানেল দ্য ন্যাশনাল’ এই খবর দিয়েছে।
ইন্টারনেট ঘেঁটে ‘দ্য নাশনাল’ নামে কানাডার কোনো টিভি চ্যানেলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কানাডার রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে দ্য নাশনাল নামে একটি নিউজ প্রোগ্রামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তবে সেখানে সার্চ দিয়ে খালেদা সংক্রান্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আর গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক নামে কোনো গণমাধ্যম ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
‘বাংলা ইনসাইডার’ নামে একটি ইন্টারনেট সংবাদপত্রেও ‘খালেদার সম্পদের’ খবরটি ছাপা হয়েছে। সেখানে কোনো সূত্রের উদ্ধৃতি নেই। এই সংবাদপত্রটি ইতোপূর্বে ভুয়া খবর প্রকাশের জন্য আলোচনায় আসে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা ওই খবরটি না ছাপানোর কারণ জানতে চেয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “এত দুর্বলতা কিসের জন্য? বিনা পয়সায় শপিং করার কার্ড পেয়েছেন?”
“কেন? আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি বলে? আর, তারা (খালেদা জিয়া) যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছে।”
শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, “আপনাদের প্রশ্নের জবাব কেন দেব?”
২০০৯ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই অনেক বেসরকারি বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমতি দেওয়ার কথাও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।
সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “সরকারের বিরুদ্ধে না লিখলে নাকি পত্রিকা চলেই না।
“আমি তো পত্রিকা পড়ে দেশ চালাই না। দেশকে ভালোবেসে দেশ চালাই। আমি বাবার কাছ থেকে শিখেছি।”
একাত্তর টিভির মোজাম্মেল বাবু প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে গিয়ে তার চ্যানেলের অনেক সাহসিকতাপূর্ণ প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করলে প্রধানমন্ত্রী হাসতে হাসতে বলেন, “অনেকেই অনেকক্ষেত্রে সাহস দেখান। অনেক সময়ে আবার তারেক রহমানের ধমক খেয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকেন।”