মা-ছেলেকে একাই খুন করেন জনি: র‌্যাব

ঢাকার কাকরাইলে মা-ছেলে হত্যামামলায় গ্রেপ্তার আল আমিন জনি খুনের কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2017, 11:45 AM
Updated : 4 Nov 2017, 03:39 PM

এই যুবক র‌্যাবকে বলেছেন, বোন পারভিন আক্তার মুক্তাকে তার স্বামী আব্দুল করিম তালাক দিতে চেয়েছিলেন। তাতে মুক্তা আত্মহত্যার চেষ্টা চালানোর পর তিনি এই হত্যার পরিকল্পনা করেন।

মুক্তা ব্যবসায়ী করিমের তৃতীয় স্ত্রী। খুন হওয়া শামসুন্নাহার তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন।

গত বুধবার হত্যাকাণ্ডের দিন করিমকে এবং পরদিন মুক্তাকে আটক করে পুলিশ।

শামসুন্নাহারের ভাইয়ের করা মামলায় তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে শনিবার ভোররাতে র‌্যাব গোপালগঞ্জে গ্রেপ্তার করে জনিকে (৩৩)।

বিকালে র‌্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন জনি, পরদিন পালিয়ে যান নিজের জেলা গোপালগঞ্জে।

শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী মামলায় অভিযোগ করেছিলেন জনি কয়েকজনকে নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।

তবে জনি র‌্যাবকে যে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তাতে আর কারও কথা বলেননি তিনি।

র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ঢাকার নিউ মার্কেট থেকে ‘১০০ টাকায় একটি চাকু কেনার পর’ শামসুন্নাহারের কাকরাইলের বাসায় গিয়েছিলেন জনি।

“সে কলিংবেল চাপলে কাজের বুয়া দরজা খুলে দিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। তখন সে রান্নাঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়ে প্রথমে চাকু দিয়ে শাওনকে আঘাত করে এবং তাকে চুপচাপ বসে থাকতে নির্দেশ দেয়। এরপর সে শামসুন্নাহারের ঘরে গিয়ে তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। শাওন উঠে গিয়ে তার মাকে রক্ষার চেষ্টা চলালে তাকে আবার আঘাত করে আল আমিন।”

এরপর শাওন বাসা থেকে বের হয়ে সিঁড়ির কাছে গিয়ে পড়ে যান বলে র‌্যাবকে জানিয়েছেন জনি।

সেদিন ভবনের পঞ্চম তলায় ঘরের ভেতরে শামসুন্নাহারের (৪৬) লাশ পাওয়া গিয়েছিল; তার ১৮ বছর বয়সী ছেলের লাশ পড়েছিল সিঁড়িতে।

হত্যাকাণ্ডের পর বাড়ির দারোয়ান নোমান এবং গৃহকর্মী রাশিদাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

নোমানের ভাষ্য, সন্ধ্যার পর এক ব্যক্তি ওই ভবন থেকে নামার সময় তাকে উপরে ঝামেলা হচ্ছে বলে গিয়েছিলেন। তখন তিনি উপরে গিয়ে লাশ দেখতে পান।

জনিকে গ্রেপ্তারের পর নোমান তাকে শনাক্ত করেছে বলে জানান মুফতি মাহমুদ।

“নোমান বলেছে, এই যুবকই বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় বলেছিল উপরে গণ্ডগোল হচ্ছে।”

ওই সময় ঘরে থাকা রাশিদার দাবি, তিনি রান্নাঘরে কাজ করার সময় হঠাৎ বাইরে থেকে কেউ দরজা আটকে দিয়েছিল। পরে দারোয়ান নোমান ছিটকিনি খুলে দিলে তিনি বেরিয়ে আসেন। ততক্ষণে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে খুনিরা পালিয়ে যায়।

শামসুন্নাহারকে ২৮ বছর আগে বিয়ে করেন করিম। পরে তিনি ফরিদা নামে এক নারীকেও বিয়ে করেন। ফরিদার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর তিনি চার বছর আগে মুক্তাকে বিয়ে করেন। তাদের কোনো ছেলে-মেয়ে নেই।

করিম গ্রোসারি ব্যবসা ছাড়াও এফডিসিকেন্দ্রিক চলচ্চিত্রের প্রযোজনা ও পরিচালনায় যুক্ত বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এই পথ দিয়েই ‍ওঠা হয় বাড়িটিতে, যার পাঁচতলায় খুন হন মা-ছেলে

শামসুন্নাহারের ভাইয়ের মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, তৃতীয় বিয়ের পর থেকে শামসুন্নাহার ও ছেলের খোঁজ ঠিকমতো নিতেন না করিম। মুক্তা তিন-চার মাস আগে এই বাড়িতে এসে শামসুন্নাহারকে ভয়-ভীতি এবং হত্যার হুমকি দিয়ে গিয়েছিলেন।

করিমের অধিকাংশ সম্পত্তি প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারের নামে হওয়ায় তা নিয়ে মুক্তার অসন্তোষ ছিল বলে জানিয়েছেন মুফতি মাহমুদ।

তিনি বলেন, “এই সব নিয়ে মুক্তার সঙ্গে দ্বন্দ্ব শামসুন্নাহারের। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে এই দ্বন্দ্বের কারণে প্রায় চার মাস আগে মুক্তাকে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল করিম।

“এই বিরোধের জের ধরেই হত্যাকাণ্ডের চার দিন আগে মুক্তা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। ওই সময় মুক্তার বাসায় স্বামী করিম ও তার ভাই ছিল। তাদের চেষ্টার কারণে সে আত্মহত্যা করতে পারেনি। এরপরই শামসুন্নাহারকে হত্যার পরিকল্পনা করে আল আমিন জনি।”

এই হত্যাকাণ্ডে অন্য কারও সম্পৃক্ততা আছে কি না জানতে চাইলে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, “মামলার এজাহারভুক্ত অপর দুই আসামি ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না তা বেরিয়ে আসবে।”

হত্যাকাণ্ডের পর জনি পাশের একটি পরিত্যক্ত ভবনে গিয়ে রক্তমাখা কাপড় পরিবর্তন করে জানিয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, “গোপালগঞ্জ যাওয়ার সময় ওই কাপড় সে পদ্মা নদীতে ফেলে দিয়েছে বলে জানিয়েছে।”

হত্যাকাণ্ডের সময় জনির ডান হাতের দুই আঙুল কেটে যায় তিনি বলেন, “শামসুন্নাহারকে ছুরিকাঘাত করার সময় চাকুটি আটকে গিয়েছিল। সেটা জোর করে বের করার সময় সে আহত হয় “

ঘটনার পর নিজের চিকিৎসার জন্য একটি ক্লিনিকে গিয়েছিলেন জনি। কিন্তু কাছে টাকা না থাকায় পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ভুয়া নাম ব্যবহার করে চিকিৎসা নেন তিনি।

কাকরাইলে রাজমনি প্রেক্ষাগৃহের পশ্চিম দিকে রাজমনি কার সেন্টার ও বায়রা ডেটাবেইজ প্রতিষ্ঠানের মাঝের গলিতে করিমের একটি বাড়ির পঞ্চম তলায় ছেলে শাওনকে নিয়ে থাকতেন শামসুন্নাহার। তার বড় দুই ছেলে বিদেশে থাকেন।