মা-ছেলে খুন; মামলায় বাবাও আসামি

ঢাকার কাকরাইলে মা ও ছেলেকে খুনের ঘটনায় বাবার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2017, 05:56 PM
Updated : 2 Nov 2017, 06:18 PM

নিহত শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী বাদী হয়ে হত্যাকাণ্ডের একদিন বাদে বৃহস্পতিবার বিকালে রমনা থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় তিনি ভগ্নিপতি করিম (৫৬), করিমের তৃতীয় স্ত্রী শারমিন আক্তার মুক্তা (২৫) এবং মুক্তার ভাই আল আমিন জনিকে আসামি করেছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলী হোসেন।

পারিবারিক বিরোধ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে পুলিশ ধারণা করছে।

বুধবার হত্যাকাণ্ডের পর ব্যবসায়ী করিমকে আটকের পর বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনের একটি বাড়ি থেকে মুক্তাকেও আটক করে পুলিশ।

পুলিশ কর্মকর্তা আলী হোসেন বলেন, “এই মামলা হওয়ার ফলে জিজ্ঞাসাবাদে থাকা করিম ও তার তৃতীয় স্ত্রী মুক্তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।”

পারিবারিক শত্রুতার কারণে শামসুন্নাহার (৪৬) ও তার ছেলে সাজ্জাদুল করিম শাওনকে (১৮) হত্যা করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন আশরাফ আলী। তিনি অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করেছেন।

মুন্সীগঞ্জের শামসুন্নাহার ব্যবসায়ী করিমের প্রথম স্ত্রী। করিমের দ্বিতীয় স্ত্রী ফরিদার সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর তিনি চার বছর আগে মুক্তাকে বিয়ে করেন বলে পুলিশ জানায়।

করিম গ্রোসারি ব্যবসা ছাড়াও এফডিসিকেন্দ্রিক চলচ্চিত্রের প্রযোজনা ও পরিচালনায় যুক্ত বলে পুলিশ জানিয়েছে।

কাকরাইলে রাজমনি প্রেক্ষাগৃহের পশ্চিম দিকে রাজমনি কার সেন্টার ও বায়রা ডাটাবেইজ প্রতিষ্ঠানের মাঝের গলিতে তার দুটি বাড়ি। তার একটির পঞ্চম তলায় খুন হন শামসুন্নাহার ও ছেলে শাওন। শামসুন্নাহারের বড় দুই ছেলে বিদেশে থাকেন।

বাড়ির পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটে ধারাল অস্ত্রের আঘাতে মা ও ছেলেকে হত্যা করা হয়। শামসুন্নাহারের লাশ শোবার ঘরে ছিল, সিঁড়িতে পড়ে ছিল শাওনের লাশ।

নিহত সাজ্জাদুল করিম শাওন

করিমের একাধিক বিয়েকে কারণ দেখিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা পারিবারিক বিরোধকে সন্দেহের করার ভিত্তি হিসেবে দেখাচ্ছেন। ওই পরিবারের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলেও পারিবারিক জটিলতার আঁচ পাওয়া গেছে।

করিমের প্রথম স্ত্রীর ঘরে তিন ছেলে, তালাকপ্রাপ্ত দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে এক ছেলে রয়েছে। তৃতীয় স্ত্রী মুক্তার কোনো সন্তান নেই।

আশরাফ অভিযোগ করেছেন, তৃতীয় বিয়ের পর থেকে শামসুন্নাহার ও ছেলের খোঁজ ঠিকমতো নিতেন না করিম।

মুক্তা তিন-চার মাস আগে এই বাড়িতে এসে শামসুন্নাহারকে ভয়-ভীতি এবং হত্যার হুমকি দিয়ে গিয়েছিলেন বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়।

জনি (৩৩) কয়েকজনকে নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন আশরাফ।

হত্যাকাণ্ডের পর বাড়ির দারোয়ান নোমান এবং গৃহকর্মী রাশিদাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

নোমানের ভাষ্য, সন্ধ্যার পর এক ব্যক্তি ওই ভবন থেকে নামার সময় তাকে উপরে ঝামেলা হচ্ছে বলে গিয়েছিলেন। তখন তিনি উপরে গিয়ে লাশ দেখতে পান।

ওই সময় ঘরে থাকা রাশিদার দাবি, তিনি রান্নাঘরে কাজ করার সময় হঠাৎ বাইরে থেকে কেউ দরজা আটকে দিয়েছিল। পরে দারোয়ান নোমান ছিটকিনি খুলে দিলে তিনি বেরিয়ে আসেন। ততক্ষণে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে খুনিরা পালিয়ে গেছে।

ভবনের নিচে অফিস এবং পাশে করিমের আরেকটি ভবনের নিচে দরজি দোকান থাকলেও কেউ কিছু টের পায়নি বলে পুলিশকে জানিয়েছে।