রাজমনি প্রেক্ষাগৃহের পশ্চিম দিকে তমা সেন্টারের পাশের গলির ৭৯/১ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটে বুধবার সন্ধ্যায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
নিহতরা হলেন- ওই ভবনের মালিক আব্দুল করিমের স্ত্রী শামসুন্নাহার ও তার ছোট ছেলে সাজ্জাদুল করিম শাওন। বাড়ির মালিক ব্যবসায়ী করিম তখন ঘরে ছিলেন না।
কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা জানা যায়নি। পুলিশ গৃহকর্তা করিমকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
সন্ধ্যায় ওই ভবনে মা-ছেলে হত্যাকাণ্ডের খবর শুনেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় বলে ডিএমপির রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলী হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কামাল হোসেন তালুকদার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, ফ্ল্যাটের ভেতরে শোবার ঘরে মায়ের গলাকাটা লাশ পড়ে আছে। ২০/২২ বছর বয়সী ছেলের লাশ পড়ে রয়েছে বাইরের সিঁড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায়।
ঘটনাস্থলে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিহত দুজনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
শাওনের মাথার কাছে একটি ছুরি পড়ে ছিল বলে জানান তিনি।
পাশের ভবনের এক বাসিন্দা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নিহত যুবকের নাম শাওন। তার বড় দুই ভাই বিদেশে থাকেন।
শাওন, তার মা শামসুন্নাহার ছাড়াও তখন ঘরে ছিলেন গৃহকর্মী রাশিদা।
রাশিদা সাংবাদিকদের বলেন, তিনি রান্নাঘরে কাজ করছিলেন। হঠাৎ কেউ রান্নাঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়।
“চিৎকার করে বলেছিলাম, আম্মা দরজা বন্ধ করলেন কেন, দরজা খোলেন। কিন্তু কারও কোনো সাড়া পাইনি, দরজাও কেউ খোলেনি। এর মধ্যে চিৎকার শুনি। কিছুক্ষণ পর বাড়ির দারোয়ান এসে ছিটকিনি খুলে দেয়।”
দারোয়ান নোমান জানিয়েছেন, ওপর থেকে একজন লোক নিচে এসে বলে, ‘ওপরে যান, সেখানে মারামারি লাগছে’। তখন তিনি উপরে উঠে পাঁচ তলার সিড়িতে শাওনের লাশ ও ভেতরে শামসুন্নাহারের লাশ দেখতে পান।
ভবনের নিচ তলার একটি অফিসের কর্মচারী স্বপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা নিচেই কাজ করছিলাম। কোনো ধরনের হৈ-হুল্লোড় শুনিনি। শুধু দারোয়ান বলেছিল, উপরে মারামারি লাগছে।”
ডিএমপির রমনা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার নাবিদ কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কীভাবে ঘটনা ঘটছে, আমরা তদন্ত করছি।”
দুর্বৃত্তরা কীভাবে ঢুকেছে- জানতে চাইলে তিনি দারোয়ানের দেওয়া বক্তব্যই বলেন।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নেওয়া হয়।
গৃহকর্তা করিম, দারোয়ান নোমান ও গৃহকর্মী রাশিদাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা কৃষ্ণপদ।
তিনি বলেন, করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার। তাদের বড় ছেলে মুন্না যুক্তরাজ্যে থাকেন বেশ আগে থেকে; মেজ ছেলে অনিক কানাডায় গেছেন কয়েক মাস হল।
বাড়ির মালিক করিমের নয়া পল্টনে পলওয়েল মার্কেটে দোকান রয়েছে। এছাড়া ‘গ্রোসারি ব্যবসার’ সঙ্গেও তিনি যুক্ত বলে কৃষ্ণপদ রায় জানান।
সেখানে করিমের দুটি ছয়তলা ভবন, যার সামনেরটিতে হত্যাকাণ্ড ঘটে।
এই ভবনের দুই পাশে দুটি অফিস রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর গিয়ে এক পাশের গার্মেন্টসের অফিসটি খোলা দেখা যায়; অন্য অফিসটি ছিল বন্ধ।
পেছনের ভবনের নিচ তলায় ফেরদৌস টেইলার্সের কারখানা আছে। ওই ভবনের ছাদের উপরে চারটি কক্ষে ‘ব্যাচেলর’ ভাড়া দেওয়া রয়েছে।
পেছনের ভবনের এক বাসিন্দা জানান, এ দুটি ভবনের কলাপসিবল গেইট সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দারোয়ান একজনই নোমান।
ভাড়াটিয়ারা জানান, পঞ্চম তলার এক পাশে করিম স্ত্রী শামসুন্নাহার ও ছোট ছেলে শাওনকে নিয়ে থাকতেন। অন্য পাশে কেউ থাকতেন না।
শামসুন্নাহার হজ করে এসেছিলেন জানিয়ে এক ভাড়াটিয়ার বলেন, “এখানে অনেক মহিলা আসত। অন্যপাশের খালি ফ্ল্যাটে তারা থাকতও।”
ফেরদৌস টেইলার্সের নজরুল নামে এক কর্মচারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছোট ছেলে তেমন মিশত না; তার বন্ধুদেরও আসতে দেখিনি।”
ঘটনার সময় কোনো কিছু আঁচ করতে পারেননি বলে জানান পাশের ভবনের নিচতলায় থাকা নজরুল।