বাংলাদেশের বৃহত্তম বিমানবন্দরটিতে আগুন নেভানোর অত্যাধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি নেই।
Published : 12 Sep 2017, 08:40 PM
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তদন্তে এই বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি আধুনিক বিমানবন্দরে আগুন নেভানোর জন্য যেসব যন্ত্রপাতি থাকার কথা, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সেগুলো নেই।”
বাংলাদেশের রাজধানীর শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে দুই ডজনের বেশি বিমান সংস্থার দুই শতাধিক ফ্লাইট ওঠানামা করে।
দেশের ব্যস্ততম এই বিমানবন্দরের আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার সুপারিশ করেছে ফায়ার সার্ভিস। এক্ষেত্রে বাহিনীর পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান।
গত ১১ অগাস্ট শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ এ এয়ার ইন্ডিয়ার কার্যালয়ে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট ও কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে বেলা সোয়া ৩টার দিকে আগুন নেভায়।
অগ্নিকাণ্ডের কারণে আন্তর্জাতিক পথের অন্তত ছয়টি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়। হঠাৎ করে এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েন হজযাত্রীসহ বিদেশগামী শতাধিক যাত্রী। প্রায় দুই ঘণ্টা বিমান উড্ডয়নসহ টার্মিনাল ভবনে কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, অগ্নিকাণ্ডে কোনো প্রাণক্ষয় না হলেও ৩৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
তখন উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ফায়ার সার্ভিস। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও (বেবিচক) সংস্থার পরিচালক মো. সাইফুল ইসলামকে প্রধান করে আরেকটি কমিটি করে।
ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা আধুনিক না। একটি আধুনিক ফায়ার স্টেশনে যেসব যন্ত্রপাতি থাকে, তা এই বিমানবন্দরে নেই।
ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর কেপিআই আওতাভুক্ত হলেও সেখানে একটি ফায়ার স্টেশন নেই। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে উত্তরা ও তার আশে পাশের ফায়ার স্টেশন থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে বিমানবন্দরে আসেন।”
ওই কর্মকর্তা জানান, গত দেড় বছরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছয় বার অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানবন্দরের বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন ও রেস্তোরাঁগুলোয় আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থাই নেই। এ ছাড়া আগুন নেভাতে ফায়ার স্প্রিংকলার সিস্টেম, ফায়ার ওয়াটার পাম্প সিস্টেমের মতো অত্যাধুনিক ব্যবস্থা নেই।
বিমানবন্দরটিতে স্থায়ী একটি ফায়ার স্টেশন স্থাপন, বিমানবন্দর-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আগুন নেভানো ও প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। একই সঙ্গে রেস্তোরাঁগুলোকে ফায়ার লাইসেন্স নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।
দেবাশীষ বর্ধন বলেন, তদন্ত কমিটি বিমানবন্দরের মূল ভবন, কার্গো ভিলেজ, অভ্যন্তরীণ টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে তাদের প্রতিবেদন মহাপরিচালকে জমা দিয়েছেন। সেটি বেবিচকে পাঠানো হবে।
বিমানবন্দরের পুরো এলাকাকে ফায়ার ডিটেকশনের আওতায় আনার পক্ষেও মত দেন দেবাশীষ।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, শাহজালাল বিমানবন্দরে বেবিচকের অগ্নিনির্বাপক কর্মী থাকলেও তারা উড়োজাহাজ ওঠা-নামার সময় অগ্নি নিরাপত্তায় কাজ করেন। উড়োজাহাজে আগুন নেভানোয় তারা দক্ষ হলেও বিমানবন্দরের অবকাঠামো রক্ষায় অভিজ্ঞ নন।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিমানবন্দরে আগুন নেভানোর যেই সিস্টেম রয়েছে তার ইমপ্রুভ করতে হবে। বিমানবন্দর এলাকায় একটি ফায়ার স্টেশন করলে খুব দ্রুত সেখানে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পৌছে আগুন নেভানোর কাজ করতে পারবে।”
ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদনটি বুধবার বেবিচকে পাঠানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি কোনো সহযোগিতা চাইলে ফায়ার সার্ভিস সহযোগিতা করবে।
আগুন শর্ট সার্কিট থেকে
গত ১১ অগাস্টের ঘটনাটি নাশকতা ছিল না বলে তদন্তে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা দেবাশীষ বর্ধন।
তিনি বলেন, টার্মিনাল-১ ভবনের তৃতীয় তলায় দুটি কক্ষ নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার অফিস। তারএকটি কক্ষে কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত বিদ্যুতের তারে শর্টসার্কিটে আগুন লাগে। এ আগুন কক্ষের উপরের অংশে ছড়িয়ে যায়।