মিরপুরের মাজার রোডের ‘জঙ্গি আস্তানায়’ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধারের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনের দীর্ঘ অভিযান শেষ করেছে র্যাব।
Published : 08 Sep 2017, 05:56 PM
‘জঙ্গি আস্তানায়’ আরও বোমার সরঞ্জাম
‘৭ খুলির দুটি শিশুর, লিঙ্গ পরিচয় বোঝার উপায় নেই’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান শুক্রবার বিকাল ৪টায় দারুস সালাম থানার বর্ধনবাড়ি এলাকায় ‘কমলপ্রভা’ নামের ওই বাড়ির সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সামনে এসে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
আগের দিন যে ২৩টি ফ্রিজ ওই বাড়িতে পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলো খুলে কিছু পাওয়া না গেলও দুটি ফ্রিজের সঙ্গে ইম্প্রোভাইজড বোমার সংযোগ ছিল বলে জানান মুফতি মাহমুদ।
ছয়তলা ওই ভবনের প্রতিটি তলায় চারটি করে ইউনিট। তার মধ্যে পঞ্চম তলার দুটি ইউনিটে সন্দেহভাজন জঙ্গি আবদুল্লাহ পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন। ষষ্ঠ তলার অর্ধেক অংশে তিনি কবুতর পুষতেন। বাকি খোলা জায়গাও কবুতর রাখতে ব্যবহার করা হত।
টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় সোমবার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ‘জেএমবির জঙ্গি’ দুই ভাইকে ড্রোন ও দেশীয় অস্ত্রসহ আটকের পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেদিন মধ্যরাতে মিরপুরের ওই বাড়িতে অভিযান শুরু করে র্যাব।
মঙ্গলবার সারাদিন র্যাবের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে আবদুল্লাহকে আত্মসমর্পণে রাজি করানোর চেষ্টা চলে। সন্ধ্যায় জানানো হয়, আবদুল্লাহ আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু রাত পৌনে ১০টার দিকে ওই ভবনে বিকট শব্দে তিনটি বিস্ফোরণ ঘটে।
বুধবার সকাল থেকে সারা দিন তল্লাশি চালিয়ে বিকালে পঞ্চম তলার ওই বাসা থেকে সাতজনের খুলি ও পোড়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাওয়ার কথা জানায় র্যাব।
শুক্রবার অভিযান শেষ করার আধা ঘণ্টা আগে সাংবাদিকদের ঘটনাস্থল দেখাতে নিয়ে যায় র্যাব। অন্যান্য তলার বাসিন্দাদেরও তাদের বাসায় ঢোকার সুযোগ দেওয়া হয়।
বাসিন্দাদের অনেকেই যার যার বাসা থেকে কাপড়চোপড়, টাকা, ওষুধের মতো জরুরি জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে যান। অভিযানের প্রথম দিন তাদের সরিয়ে স্থানীয় একটি স্কুলে রাখা হলেও পরে তারা যার যার মত আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আশ্রয় নেন।
কমল প্রভার তৃতীয় তলার বাসিন্দা মোহাম্মদ রাব্বী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার কিছু জামা, মায়ের কাপড় এবং বাবার ওষুধপত্র নিয়েছি। র্যাব জানিয়েছে, আগামীকাল যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়, তাহলে আমরা বাসায় উঠতে পারব।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, “বোমা বিস্ফোরণে ভবনের স্ট্রাকচারাল কী ক্ষতি হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উনারা এসে পরীক্ষা করার পর জানাবেন- বসবাসের উপযোগী আছে কি-না। কোন কোন ফ্লোরের কী ক্ষতি হয়েছে- তা জানার পর উঠতে দেওয়া হবে।”
তবে ভবনের যে দুটি তলা জঙ্গি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণে ছিল, সেই পঞ্চম ও ষষ্ঠতলা র্যাবের তদারকিতে থাকবে বলে জানান তিনি।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মুফতি মাহমুদ বলেন, বাড়ির মালিক ও নৈশপ্রহরীকে সাভার থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এছাড়া দারুস সালাম থানায় অপমৃত্যুর একটি মামলা হয়েছে।
অভিযানের শেষে ছয়তলার খোলা অংশে গিয়ে দেখা যায়, আব্দুল্লাহর কবুতরগুলোর মধ্যে বেশ কিছু বিস্ফোরণে মারা গেছে। কিছু ঝিমাচ্ছে, আর কিছু স্বাভাবিক আছে।
কবুতরগুলোর বিষয়ে কী করা হবে জানতে চাইলে মুফতি মাহমুদ বলেন, “আমরা কবুতরগুলোর পরিচর্যা করছি। পরবর্তীতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা হস্তান্তর করব।”