মন্ত্রীর সুনাম ক্ষুণ্ণের অভিযোগে সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে করা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় অভিযোগ গঠনের একবছর পর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।
Published : 24 Aug 2017, 08:35 PM
বৃহস্পতিবার সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিন ঢাকায় সাইবার ক্রাইম ট্রাইবুনালে জবানবন্দি দেন মামলার বাদী ফরিদপুর জেলা পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা এবং ফরিদপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি স্বপন পাল।
বিচারক মো. সাইফুল ইসলাম বাদীর আংশিক সাক্ষ্য নিয়ে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যের দিন রাখেন।
পরে বাদীকে জেরা করেন প্রবীর সিকদারের আইনজীবী আমিনুল গণী টিটো।
ফরিদপুর এলাকার যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, প্রবীর সিকদারের পরিবারের শহীদ সদস্য, তার লেখালেখি, লেখা পুস্তক, দৈনিক জনকন্ঠে, প্রথম আলোতে প্রকাশিত খবরের বিষয় নিয়ে বাদীকে প্রশ্ন করা হয়।
একাত্তরে শহীদের সন্তান প্রবীর সিকদার উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এবং দৈনিক বাংলা ৭১ নামের পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি এর আগে সমকাল ও কালের কণ্ঠে কাজ করেছেন।
২০০১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকার সময় সন্ত্রাসীর হামলায় গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু জীবন যাপন করছেন তিনি।
ফেইসবুকে লেখালেখির কারণে হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে গতবছর থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন প্রবীর সিকদার। কিন্তু পুলিশ তা নেয়নি বলে ফেইসবুকে এক লেখায় তিনি জানান।
ওই বছরের ১০ অগাস্ট ‘আমার জীবন শঙ্কা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’ শিরোনামের একটি স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন- “আমি খুব স্পষ্ট করেই বলছি, নিচের ব্যক্তিবর্গ আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন : ১. এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, ২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের, ৩. ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিনজনের অনুসারী-সহযোগীরা।”
এরপর ১৬ অগাস্ট সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্দিরা রোডের কার্যালয় থেকে প্রবীরকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। রাতেই তাকে নেওয়া ফরিদপুরে।
ফেইসবুকে লেখার মাধ্যমে মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফের সুনাম ক্ষুণ্ণের অভিযোগ এনে প্রবীরের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন জেলার এপিপি স্বপন পাল।
এ ঘটনায় সে সময় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তথ্য-প্রযুক্তি আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয় বিভিন্ন মহল থেকে।
ওই মামলায় সাংবাদিক প্রবীরকে রিমান্ডেও পাঠিয়েছিল আদালত। তবে রিমান্ডের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই জামিনে মুক্তি পান প্রবীর সিকদার। পরে আদালত তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকেও অব্যাহতি দেয়।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. মনির হোসেন গত ১৬ মার্চ ফরিদপুরের আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে বিচারক মামলাটি ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে পাঠান।
গতবছর ৪ অগাস্ট ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম শামসুল আলম এ মামলায় অভিযোগ গঠন করেন।
এ আইন অনুযায়ী, কেউ ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে কোনো কিছু প্রকাশের মাধ্যমে কারও মানহানি ঘটলে বা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে প্রমাণিত হলে তার ৭ থেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।