প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয় পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি উঠে যায় বাড়িঘর, দোকানপাটে।
Published : 12 Jul 2017, 05:28 PM
ফলে বছরের এই সময়টাতে চকবাজার, বেগমবাজার, জেলখানা, বংশাল এলাকায় যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই চলতে হয় এলাকাবাসী ও পথচারীদের।
ঢাকা ওয়াসা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, এই সড়কে ওয়াসার দেড় ফুট প্রশস্ত একটি পুরোনো নিষ্কাশন নালা আছে। সড়কের দুপাশের এই সরু নালা দিয়ে পানি সরতে দেরির কারণেই জলাবদ্ধতা হয়।
গত বুধবার নাজিমুদ্দিন রোডের মামুন বিরিয়ানির সামনে থেকে জেলখানার মোড় পর্যন্ত সড়কে হাঁটু পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। হোসাইনি দালান রোডের জেলখানা মোড় থেকে বকশিবাজার পর্যন্ত সড়ক, আশপাশের জল্লার রাস্তা, বাগিচার গলি, তাঁতখানা লেন, সুকু মিয়ার গলি, নিমতলী, জমিদারগলি, কবিরাজ মসজিদ গলি এবং বকশিবাজার লেন- সব অলিগলিই পানিতে তলিয়ে।
সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকার শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টি হলে চাঁনখারপুলের বাসা থেকে স্কুলে যাওয়া-আসায় ভোগান্তির কথা জানায় আনোয়ারা বেগম মুসলিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী তহুরা আক্তার বিপাশা।
“গত রাতে বৃষ্টি হয়েছে। এখন রিকশা ছাড়া যাওয়ার কোনো উপায় নাই। বৃষ্টি হলেই সড়কে কোমর সমান পানি জমে যায়। তখন স্কুলে যেতে আসতে খুব কষ্ট হয়। রিকশা পাওয়া যায় না ঠিকমতো, আবার পেলেও ভাড়া বেশি চায়।”
বৃষ্টি হলেই সড়কের ময়লা পানি মাড়াতে হয় বলে অভিযোগ করেন নাজিমুদ্দিন রোডের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন।
গত প্রায় বিশ বছর ধরে প্রতি বর্ষায় এই সড়ক জলাবদ্ধ হয় বলে জানালেন নাজিমুদ্দিন রোডের ব্যবসায়ী সাগির হোসেন।
“ঢাকার মধ্যে এইটা মনে হয় একমাত্র রাস্তা যেখানে একটু বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। আর এইখানে সব সময় ভ্যানওয়ালারা রেডি থাকে। তারাও জানে বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি জমব। হ্যাগো ট্রিপ মারার সুযোগ হইব।”
মামুন বিরিয়ানির সামনে দেখা গেল, পানির অংশটুকু পার করে দিতে যাত্রীদের ডাকাডাকি করছেন ভ্যান চালকরা।
সড়কের ওই অংশটা নিচু হওয়ায় পানি জমে বলে জানান ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী পরিচালক (ড্রেনেজ সার্কেল-১) ফিরোজ আলম।
“সড়কের ওই অংশটা অনেকটা নৌকার মতো। দু্ই প্রান্ত উঁচু, মাঝখানটা নিচু। এই অংশের পানি সবার শেষে যায় বলে পানি সরতে সময় বেশি লাগে।”
এখানকার নিষ্কাশন নালাটি প্রায় বিশ বছরের পুরোনো হলেও তা দিয়ে ঠিকমতো পানি যায় বলে তার দাবি। তবে এ এলাকার পানি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়ায় সময় লাগে।
তিনি বলেন, “এইখানের পানি যেখানে গিয়ে পড়ে তার ট্রাভেলিং ডিসটেন্স প্রায় ৫ কিলোমিটার। ওই খালে গিয়ে পানিটা পড়ে। যে কারণে পানি স্লো যায়।”
“এই জায়গার প্রতি মেয়র মহোদয়ের বিশেষ নজর আছে। এজন্য স্যার একটা প্রজেক্ট পাস করিয়ে দিয়েছেন। ঠিকাদার নিয়োগ শেষ, তারা কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে শুরু করেছেন।
“এখানে সড়কের লেভেল কারেকশন করতে হবে। এজন্য পাইপলাইনসহ সড়ক উন্নয়ন করা হবে। তিনমাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।”
আগামী বর্ষায় এ এলাকায় আর জলাবদ্ধতা থাকবে না বলে জানান এই কর্মকর্তা।