একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের মামলায় বগুড়ার আদমদীঘির সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা আব্দুল মোমিন তালুকদার ওরফে খোকার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
Published : 18 May 2017, 01:04 PM
প্রসিকিউশনের আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার পরোয়ানা জারির এই আদেশ দেয়।
পরোয়ানা জারির আবেদনে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন সুলতান মাহমুদ সীমন। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল।
আদেশের পর প্রসিকিউটর সিমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আব্দুল মোমিন তালুকদার একাত্তরে আদমদীঘি এলাকায় রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। সে সময় হত্যা, গণহত্যার মত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মোমিন তালুকদার খোকা এলাকায় ‘প্রভাবশালী’ হওয়ায় এবং সঠিক তদন্তের স্বার্থে তাকে গ্রেপ্তারের আবেদন করা হয় বলে এই প্রসিকিউটর জানান।
আব্দুল মোমিন তালুকদার বগুড়া-৩ আসন (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) থেকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর বন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও হয়েছিলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর আনুমানিক ১১টার দিকে আদমদীঘি বাজারে পশ্চিমে খারির ব্রিজের উত্তর শ্মশান ঘাটে আব্দুল মোমিন তালুকদার গুলি করে মুক্তিযোদ্ধা মনসুরুল হক তালুকদার টুলু, আব্দুস ছাত্তার, আব্দুল জলিল, আলতাফ হোসেনসহ আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেন।
বাদীর অভিযোগ, আব্দুল মোমিনের বাবা আব্দুল মজিদ তালুকদার (বর্তমানে মৃত) মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। বাবা-ছেলে দুজনেই সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেন।
অবশ্য আব্দুল মোমিন সে সময় সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল মাত্র সাড়ে ১৭ বছর এবং তিনি কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
‘রাজনৈতিকভাবে হয়রানির উদ্দেশ্যেই’ তাকে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে সে সময় অভিযোগ করেছিলেন এই বিএনপি নেতা।
অভিযোগটি ট্রাইব্যুনালে আসার পর প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থা গত বছরের জানুয়ারি থেকে তদন্ত শুরু করে। তদন্ত কর্মকর্তা জেড এম আলতাফুর রহমান ওই এলাকায় গিয়ে আদমদীঘির সুদিন, খাড়িপাড় শ্মশানঘাটি ও সান্তাহার রথবাড়ী (জমিদার সুরেন্দ্রনাথের বাড়ি) বধ্যভূমি ঘুরে দেখেন এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষতিগ্রস্তদের বক্তব্য রেকর্ড করেন।
ওই তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পরই সাবেক এই সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে বলে প্রসিকিউটরদের ভাষ্য।