জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর একজনের পরিবার চার দিন ধরে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছে।
Published : 09 May 2017, 07:38 PM
মাসখানেক আগের এই ঘটনাটি নিয়ে গত শনিবার মামলার পর তুমুল আলোচনা চলছে; গণমাধ্যমেও শিরোনাম হচ্ছে এই বিষয়ক নানা খবর।
এর মধ্যেই ধর্ষণের অভিযোগকারী এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চার দিন ধরে গণমাধ্যমকর্মীরা বাসার সামনে ক্যামেরা নিয়ে বসে আছেন। লোকজন জানতে চায়, কেন সাংবাদিকরা বাসার সামনে দিনের পর দিন বসে আছে।”
মেয়ের উপর নির্যাতনের বিচারে গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকার প্রত্যাশা করলেও বাড়ির সামনে অবস্থানের বিষয়টি বিবেচনা করতে সংবাদকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
“আমরা বুঝি, তাদের আন্তরিকতার অভাব নেই, তারা দেশবাসীকে কিছু একটা জানাতে চাইছেন। তবে আমাদের তো সমাজে চলতে হয়।”
“আমরা প্রভাবশালী না, ধনী না, রাজনীতি করিও না, আর বুঝিও না। আমি জানি না, আমরা ন্যায়বিচার পাব কি না? তবে সবার সহযোগিতা যেমন পেয়েছি। সেটা সব সময় চাই। তবে এজন্য আমাদের জীবনটা যেন দুর্বিষহ না হয়, সেটাও আপনারা বিবেচনা করবেন,” কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন এই মা।
ওই তরুণীর মা বলেন, মামলার পর ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে এখন বাড়িতেই আছেন তার মেয়ে।
“সে অন্যায়ের শিকার হয়েছে। কিন্তু তার অভিযোগ করার কারণে তাকেই শাস্তি পেতে হচ্ছে।”
সংবাদকর্মীদের ধর্ষিতের বাড়ির সামনে অবস্থানে উষ্মা প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক ও প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমানও।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুবই অন্যায় কাজ, এ ধরনের সাংবাদিকতা মানসম্পন্ন সাংবাদিকতা হতে পারে না।
“এটা সাংবাদিকতার নীতির বাইরে, ভিকটিমকে আইডেন্টিফাই করে তার বাসায় যাওয়া ঠিক না।”
সাংবাদিকরা ভিকটিমের বাড়ির সামনে ভিড় জমালে তা নির্যাতিতকে সমাজে আরও হেয় করার পথ তৈরি করে দেবে বলে মনে করেন গোলাম রহমান।
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের এগুলো করার কথা না। কী হবে,না হবে, সেটা পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে বের করবে। মিডিয়া ট্রায়াল পরিহার করতে হবে।”
সংবাদকর্মীদের এই ধরনের আচরণ নিরুৎসাহিত করতে গণমাধ্যমের কর্তাব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ধর্ষিত তরুণীর মামলা দায়েরের পর তিন দিন গড়ালেও পাঁচ আসামির কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
তার ভাষ্য অনুযায়ী, গত ২৮ মার্চ তিনি ও তার বান্ধবী আরেক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে।
মামলায় আসামি করা হয়েছে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ (২৬) ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ (৩০)। ধর্ষণে সহযোগিতা করায় আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
পালিয়ে থাকায় আসামিদের কোনো বক্তব্যও সংবাদকর্মীরা পাচ্ছে না।
তবে প্রধান আসামি সাফাতের বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের দাবি, ষড়যন্ত্র করে তার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে।