রাজধানীতে স্মার্ট কার্ড বিতরণের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও নানা সমস্যয় এখনও অর্ধেক এলাকায় বিতরণের কাজ শেষ হয়নি। যেসব এলাকায় কার্ড বিতরণ চলছে, সেসব এলাকার প্রায় ২৫ লাখ নাগরিকের মধ্যে মাত্র ১৪ লাখের হাতে পৌঁছেছে স্মার্ট কার্ড।
Published : 25 Apr 2017, 04:44 PM
স্মার্টকার্ড: প্রস্তুত হয়নি অর্ধেকের বেশি
রাজধানীতে শেষ ধাপের স্মার্ট কার্ড বিতরণ ১০ এপ্রিল থেকে
স্মার্টকার্ড বিতরণে অব্যবস্থাপনা, নাগরিকদের ভোগান্তি
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা আগামী নভেম্বরের মধ্যে রাজধানীতে বিতরণযোগ্য সব নাগরিকের হাতে স্মার্ট কার্ড পৌঁছে দেওয়ার কথা বললেও পর্যাপ্ত প্রচারের অভাব, ভাসমান ভোটার, স্থানান্তরিত ভোটার, চাকরিজীবী, কারিগরি ত্রুটি ও সমন্বয়হীনতার কারণে স্মার্ট কার্ড বিতরণে আশানুরূপ ফল মিলছে না।
নানা কারণে এখনও ৪০ শতাংশ নাগরিক কেন্দ্রে উপস্থিতই হতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম।
গত বছরের ৩ অক্টোবর রাজধানীতে স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হয়। চলতি বছর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিতরণ কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে চোখের আইরিশ ও দশ আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৬৩ জন নাগরিক নিজেদের স্মার্ট কার্ড নিয়েছেন; যা বিতরণযোগ্য ভোটারের ৫৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ঢাকার ৫২ লাখ ৬৫ হাজার ৬৫৭ ভোটারের স্মার্ট কার্ড বিতরণ করবে ১৫টি থানা নির্বাচন অফিস। ইতোমধ্যে কোতোয়ালী, উত্তরা, গুলশান, ধানমণ্ডি, মতিঝিল, সবুজবাগ ও রমনা থানা নির্বাচনী এলাকায় বিতরণ শেষ হয়েছে।
চলমান রয়েছে মিরপুর, লালবাগ, ক্যান্টনমেন্ট, মোহাম্মদপুর, ডেমরা, পল্লবী, তেজগাঁও ও সুত্রাপুর এলাকায়।
এই ১৫টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ১২টি এলাকায় কার্ড বিতরণের পরিসংখ্যান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসেছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এসব এলাকার ২৪ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮টি স্মার্ট কার্ডের মধ্যে ১৩ লাখ ৮২ হাজার ৮৫০টি বিতরণ করা হয়েছে। নানা জটিলতায় কার্ড পাওয়া যায়নি এক লাখ এক হাজার ১১৩ জনের।
ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকায় স্মার্ট কার্ড বিতরণের হার প্রায় ৬০ শতাংশ। বাকি ৪০ শতাংশ নাগরিক নানা কারণে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে কার্ড নিতে পারেনি।”
নির্ধারিত সময়ে স্মার্ট কার্ড নিতে না পারলেও পরে থানা নির্বাচন অফিস থেকে তা সংগ্রহ করা যাবে বলে তিনি জানান।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক আবদুল বাতেন জানান, ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকায় ৫৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ; কুড়িগ্রামে ৬১ দশমিক ২৪ শতাংশ; চট্টগ্রামে ৫৮ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং রাজশাহীতে ৮০ দশমিক ১৫ শতাংশ কার্ড বিতরণ হয়েছে।
ফ্রান্সের একটি কোম্পানি থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ৯ কোটি ‘ব্ল্যাঙ্ক কার্ড’ আমদানি করে স্থানীয়ভাবে মুদ্রণ ও বিতরণের কার্যক্রম চলছে।
নতুনদের লেমিনেটেড কার্ড ও দেশিয় স্মার্ট কার্ড
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম গত ১৭ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, নির্বাচন কমিশনের তথ্য ভাণ্ডারে ১০ কোটি ১৭ লাখেরও বেশি নাগরিকের তথ্য সংরক্ষিত আছে।
চলমান বিতরণ কার্যক্রমের আওতায় ৩১ জানুয়ারি, ২০১৪ সাল পর্যন্ত নিবন্ধিত নাগরিকদের মধ্যে থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে নয় কোটি স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ করা হবে।
তিনি জানান, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নিবন্ধিত নাগরিকদের লেমিনেটেড পরিচয়পত্র বা স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়নি।
“ এসব নাগরিকদের জন্য আপাততঃ কাগজে মুদ্রিত লেমিনেটেড পরিচয়পত্র দেওয়া হবে,” বলেন তিনি।
আর স্মার্ট কার্ড দেওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির মাধ্যমে সম্পূর্ণ গুণগত মান অক্ষুন্ন রেখে দেশেই স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র উৎপাদনের প্রক্রিয়া নেওয়া হচ্ছে বলে জানান এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক।