কোনো দলের প্রতি দুর্বলতা নেই: সিইসি নূরুল হুদা

এক মাস পূর্ণ করতে যাচ্ছে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন, যাদের অধীনে হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2017, 03:25 PM
Updated : 14 March 2017, 03:53 PM

নূরুল হুদার নিরপেক্ষতা নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন তুলে আসা বিএনপির অবস্থানের কোনো বদল না ঘটার মধ্যে তিনি দাবি করেছেন, কোনো দলের উপর তার কোনো ধরনের পক্ষপাত নেই।

দায়িত্ব পালনের এক মাস পূর্ণ করার আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নূরুল হুদা আরও বলেছেন, ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের দিন পেরিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে যাত্রা শুরু করছেন তারা এবং তা অব্যাহত থাকবে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সিইসি কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী শপথ নিয়ে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ যে সার্চ কমিটি গঠন করেন, সেই কমিটি রাজনৈতিক দলগুলো থেকে নাম নিয়ে নতুন ইসি গঠনের প্রস্তাব রাখে; তার মধ্য থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি এই ইসি গঠন করেন রাষ্ট্রপ্রধান।

দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দলের না আসার কারণে সবার অংশগ্রহণমূলক একাদশ সংসদ নির্বাচন করা বর্তমান ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সব দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছেন নূরুল হুদা। এক্ষেত্রে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিতেও কার্পণ্য করবেন না বলে জানান তিনি।

বিএনপি আমলে অবসরে যেতে বাধ্য হওয়া নূরুল হুদা আদালতের রায় নিয়ে তার চাকরি ফেরত পেয়েছিলেন, সচিব হিসেবে ভূতপূর্ব পদোন্নতি নিয়ে যখন তিনি অবসরে গিয়েছিলেন, তখন ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ।

‘জনতার মঞ্চ’র লোক ছিলেন বলে বিএনপির অভিযোগ আগেই নাকচ করেছিলেন নূরুল হুদা; কর্মজীবনের ঘটনার কারণে বিএনপির প্রতি প্রতিশোধপরায়ণ হওয়ার আশঙ্কাও এখন উড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি।

শপথ নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি কে এম নূরুল হুদা- ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

দায়িত্ব নেওয়ার পর ছোটখাটো কয়েকটি নির্বাচ করে ফেলেছে নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি; এসব নির্বাচনে কোনো গোলযোগের ঘটনা ঘটেনি।

তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনই যে ভাবনার কেন্দ্রে, সাক্ষাৎকারে তাই বলেছেন নূরুল হুদা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: একমাস হতে চলল, মানুষের আস্থার তৈরির কথা বলেছিলেন; স্বল্প সময়ে অর্জন কেমন মনে করছেন?

সিইসি: আমি আশাবাদী। আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। এখানে আন্তরিকতা ও পরিবেশের ঘাটতি নেই। সুতরাং এটা অর্জন করা সম্ভব হবে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: দেশের মানুষ বিতর্কিত নির্বাচন দেখতে চায় না, আগামী দিনে কেমন নির্বাচন হবে?

সিইসি: (আগামীতে কোনো নির্বাচন বিতর্কিত হবে বলে) আমার মনে হয় না। সব চেয়ে বড় কথা হলো নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে অংশ নিতে হবে। আর তা না করলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এককভাবে (ভালো) নির্বাচন সম্পন্ন করা কঠিন। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ করা, না করা- সেটা নির্বাচন কমিশনের নিরপক্ষেতার উপর যতটা না নির্ভর করে, রাজনৈতিক ইস্যু তার চেয়ে ভিন্নতর বলে আমি মনে করি। তারা যদি যোগদান করেন তা হলে নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে; সবার আসাও দরকার। তাহলে নির্বাচনও ভালো হবে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: আপনারা নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য একটি রোডম্যাপের কথা বলছেন, দলগুলোর সঙ্গে বসবেন?

সিইসি: নির্বাচন কাছাকাছি আসলে, আরও কিছু দিন পরে আমরা চেষ্টা করব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করার। রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ, প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ, তাদের প্রশিক্ষণ কী ধরনের হবে, এসব বিষয় নিয়েও আমরা আলোচনা করব। রোডম্যাপ চূড়ান্ত হলে সে অনুযায়ী কাজ হবে।

সিইসি হিসেবে শপথ পাঠ করছেন কে এম নূরুল হুদা- ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: একাদশ সংসদ নির্বাচনের তারিখ কখন হতে পারে?

সিইসি: সাংবিধানিকভাবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অথবা ২০১৯ সালের জানুয়ারির শুরুতে (ভোট হবে)। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করব। তবে আগে কোনো ইস্যু থাকলে দলগুলোর সঙ্গে বসা হতে পারে। এখন আলোচনার কোনো ইস্যু নেই। আমরা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করব; করে যাচ্ছি। তবে সবার আস্থা অর্জন ও তাদের প্রত্যাশা পুরণে কাজ করছি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: আওয়ামী লীগ-বিএনপি অংশ নিচ্ছে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে; প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান দলগুলোয় ইসির প্রতি আস্থা তৈরির ক্ষেত্র কি এই ভোট থেকে হতে পারে?

সিইসি: অবশ্যই আশা করি।এই নির্বাচনকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। আশা করি, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।

শপথ নেওয়ার পর সহকর্মীদের নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি কে এম নূরুল হুদা- ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: দলের প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে এই প্রথম কমিশনের সদস্যরা নিয়োগ পেয়েছে। সে জন্যে আপনাদের কি কোনো বিশেষ দলের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে কিংবা থাকবে?

সিইসি: (কারো প্রতি দুর্বলতা) কোনোদিনও না, কখনোই না; প্রশ্নই ওঠে না, একেবারেই না। আমরা সংবিধান, আইন-বিধি অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করব, নিরপেক্ষ থাকব।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: নির্বাচন নিয়ে মানুষের জন্য কী বার্তা

সিইসি:  আমরা চাই ইনক্লুসিভ নির্বাচন। সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের চেষ্টা করবো আমরা। বিতর্কিত নির্বাচনের দিন শেষ; সুষ্ঠু নির্বাচনের যাত্রা শুরু। আমাদের সবার প্রচেষ্টা সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়া।