এই ইসির অধীনে ভোটের বিষয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত ‘পরিস্থিতি দেখে’

নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়ার বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না বিএনপি।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2017, 02:07 PM
Updated : 15 Feb 2017, 02:11 PM

“জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা যাব কি যাব না, সেটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে সেই সময়ে কোন ধরনের সরকার থাকবে, নির্বাচন কমিশনের কী ভূমিকা থাকছে তার উপরে,” বলেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। নির্বাচনকালীন দলীয় সরকার নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসা দলটি এখন নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’ নিয়ে আলোচনা চাইছে।

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আলোচনা শুরুর পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন সরকারের একটি প্রস্তাব তুলে ধরেন; তবে তাতে সাড়া দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।

বিগত কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিলেও সংসদের কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। নতুন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে দলটি। 

বুধবার নতুন নির্বাচন কমিশনের শপথ অনুষ্ঠানের পরপরই ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় ফখরুলকে পেয়ে বিএনপির এই সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চান সাংবাদিকরা।

ফখরুল বলেন, “আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো করছি এবং প্রত্যেকটিতেই আওয়ামী লীগ কমিশনকে ব্যবহার করে ফলাফল নিয়ে গেছে। এর মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি যে দলীয় সরকার যদি থাকে এবং নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে কখনোই সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।

“এবারও এই একটা কারণেই আমরা গেছি, আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাচ্ছি, আমরা যাব।”

এরপরই সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান।

বিগত ইসিকে ‘সরকারের আজ্ঞাবহ’ বলে আসা বিএনপি কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশনকে সরকারি প্রত‌্যাখ‌্যান না করলেও তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

ফখরুল বলেন, “প্রধান নির্বাচন কমিশনার একজন দলীয় ব্যক্তি, খুব পরিষ্কার করে বলেছি, এখানে রাখ-ঢাক করার কিছু নাই।”

নতুন সিইসি নূরুল হুদার বিষয়ে বিএনপি মহাসচ্বি বলেন, “তিনি একজন দলীয় ব্যক্তি, ছাত্রজীবনে নেতা ছিলেন। পররবর্তীকালে দলীয় সম্পর্কের কারণে উনি তার চাকরিও হারিয়েছিলেন।

“চিহ্নিত একজন আওয়ামী লীগার হিসেবে পরিচয় তার আছে। সিইসি হওয়ার পর ছবিও বেরিয়েছে পত্র-পত্রিকায় যে, আওয়ামী লীগের নেতারা তাকে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছে।”

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর যুগ্মসচিব নূরুল হুদাকে বাধ‌্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে পক্ষে রায় নিয়ে সচিব হিসেবে পদোন্নতি নিয়ে অবসরে যান তিনি, তখন ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ।

বিএনপি তাকে ১৯৯৬ সালের ‘জনতার মঞ্চের লোক’ বললেও নূরুল হুদা তা অস্বীকার করে আসছেন। সিইসি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর নিরপেক্ষভাবে কাজ করার অঙ্গীকারও করেছেন তিনি।

ফখরুল বলেন, “২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাকে (নূরুল হুদা) সুস্পষ্ট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনে ক্যাম্পেইন করার জন্য। এগুলোর প্রমাণ আছে, আমরা প্রমাণ ছাড়া একটা কথাও বলছি না। এই মানুষটি আজকে শপথ নিয়েছেন, আমরা তার সম্পর্কে জনগণকে যা জানানো দরকার, তা জানিয়ে দিয়েছি।”

রাষ্ট্রপতির কাজে হতাশা

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটি গঠন করে তাদের সুপারিশ করা ১০টি নাম থেকে পাঁচজনকে নিয়ে নতুন ইসি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ; তবে এক্ষেত্রে তার ভূমিকায় সন্তুষ্ট নয় বিএনপি।

ফখরুল বলেন, “আমাদের একটা আস্থা আশা ছিল যে রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগের জায়গা থেকে উঠে এসে দেশের জন্য, মানুষের জন্য এই রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য একটি ভূমিকা রাখবেন।

“দুর্ভাগ্য আমাদের, তিনি সেই রাষ্ট্রনায়কোচিত রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি, সেই ভূমিকা পালন করতে পারেন নাই।”

গঠিত সার্চ কমিটি নিয়েও বিএনপির প্রশ্ন তোলার কথা আবারও তুলে ধরেন ফখরুল।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রত‌্যাশা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা গণতন্ত্র চাই, নির্বাচন চাই। সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সেই নির্বাচনটা কী আওয়ামী লীগ যে ফাঁদ পেতেছে, তারা যে নীল নকশা তৈরি করেছে, সেই নীল-নকশার মধ্য দিয়ে হবে?

“সেই নির্বাচন কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, সেই নির্বাচন কখনোই জনগণের যে আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে না।”

“আমরা নির্বাচন করতে চাই, তবে সেই নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে লেভেল প্লেইং ফিল্ডের মধ্য দিয়ে, সেই নির্বাচন হতে হবে ইনক্লুসিভ, সকলকে নিয়ে,” বলেন ফখরুল।

খালেদাকে জেলে পাঠালে ভোট ‘হবে না’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে নির্বাচন হবে না বলেও সরকারকে হুঁশিয়ার করেন ফখরুল। 

“দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে যদি কেউ মনে করেন যে, এখানে নির্বাচন হবে, নির্বাচন হবে না। খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়, তাহলে এদেশে নির্বাচন হবে না। দেশপ্রেমিক মানুষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।”

আওয়ামী লীগ সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নীতি অনুসরণ করছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ওয়ান-ইলেভেনে শুরু হয়েছিল বিরাজনীতিকরণের ধারা। রাজনৈতিক নেতাদেরকে ও রাজনীতিকে ধ্বংস করার এই ধারা আওয়ামী লীগ বহন করে চলেছে।

“আমার মাথায় আসে না তারা কীভাবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হলেন? সেই ভয়াবহ জাতি বিধ্বংসী নীতির মধ্য দিয়ে তারা চলছেন।”

জোট শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির আলোচনা সভায় বক্তব‌্য রাখেন ফখরুল।

এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা বক্তব্য রাখেন।