ভোট জয়ের পরিকল্পনায় ‘আজ্ঞাবহ’ সিইসি: খালেদা

‘আজ্ঞাবহ’ ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নিয়োগ দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় নির্বাচনে জয়ের পরিকল্পনা সাজিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2017, 05:47 PM
Updated : 26 Feb 2017, 06:22 PM

ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জয়ী দল সমর্থক আইনজীবীদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানে এই অভিযোগ করেছেন তিনি।

গুলশানের কার্যালয়ে রোববার রাতে এই অনুষ্ঠানে খালেদা বলেন, “আগামী দিনের ইলেকশনের কী পরিকল্পনা, সেটা তারা (সরকার) করে রেখেছে। কীভাবে বিজয়ী হবে সেটাও করে রেখেছে, যার জন্য বসিয়েছে তাদের আজ্ঞাবহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার।”

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন কমিশনের মেয়াদ শেষে রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটির সুপারিশ করা নাম থেকে নতুন নির্বাচন কমিশন-ইসি গঠন করা হয়, যাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক সচিব কে এম নূরুল হুদা। এই কমিশনের অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।

মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হুদাকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার আমলে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। পরে আদালতের রায়ে চাকরি ফিরে পান তিনি।  

খালেদা জিয়া বলেন, “এই সিইসি কোনোভাবে একজন যোগ্য নিরপেক্ষ ব্যক্তি নন। তাহলে বুঝতে পারছেন, আওয়ামী লীগের মতলবটা মোটেও ভালো নয়।”

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ আবার তাদের ক্ষমতায় বসাবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি প্রধান।

তিনি বলেন, “আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চাই। সব দলের অংশগ্রহণের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। আর আওয়ামী লীগ চোরাপথে ক্ষমতায় যেতে চায়।

“আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আইনের শাসনে বিশ্বাস করি, জনগণের কল্যাণে বিশ্বাস করি, ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করি, আমরা চাই- সুষ্ঠু নির্বাচন।”

ঢাকা বারের মতো আসন্ন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও দল সমর্থিত প্যানেলকে বিজয়ী করতে আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।

গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফলে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক নীল প্যানেল থেকে খোরশেদ আলম সভাপতি ও আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চু সাধারণ সম্পাদকসহ ২১টি পদে জয় এসেছে। মোট ২৭টি পদের মধ্যে কোষাধ্যক্ষসহ ৬টি পদে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের সাদা প্যানেল।

ঢাকা বারের নবনির্বাচিত আইনজীবীরা অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান।

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “ক্ষমতাসীনরা অনেক বেতন-টেতন পায়, টাকা-পয়সা আয় করার অনেক সোর্স আছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, গ্যাসের দাম কম ছিল, সেজন্য বাড়ানো হয়েছে। দেখেন, এদের আমলেই বোধহয় পাঁচ দফা গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।

“আবার বলছে, বিদ্যুতের দাম বাড়াবে। তাহলে মানুষ তো গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল দিতে দিতে শেষ হয়ে যাবে। গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে, অথচ গ্যাসের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। গ্যাসের চাপ এতো কম, কোনো কোনো দিন রান্না করাই মুশকিল হয়ে যায়।”

জনঘনিষ্ঠ এসব বিষয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “মানুষের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। আমাদের কর্মসূচি দিতে হবে।”

উন্নয়নের নামে বৃহৎ বৃহৎ প্রকল্প করে উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি, ‘দুর্নীতি-লুটপাট, জমিদখল, টেন্ডারবাজি’ প্রভৃতি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা দেশেকে অস্বস্তিকর পরিবেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

পুলিশকে দলীয়ভাবে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়, কীভাবে কী করবে তারা। আপনারা দেখেছেন, গাইবান্ধায় সাঁওতাল পল্লীতে পুলিশ কীভাবে আগুন ধরিয়ে গরিব মানুষের বাড়ি-ঘর পুড়িয়েছে। তাহলে বোঝা যায়, এই গাড়ি-ঘোড়ায় কারা আগুন দেয়? আমরা যখন আন্দোলন করেছি, তখনও কিন্তু পুলিশ দিয়ে তারা আগুন দিয়ে কিংবা বোমা মেরে দোষ আমাদের নামে চাপিয়েছে, আমাদের মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। কিন্তু ওই সব কাজ করেছে পুলিশ।”

গাইবান্ধায় মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যায় মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ আব্দুল কাদের খানের ‘সম্পৃক্ততার’ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সরকারের শরিকরাই এসব করছে। তাদের শরিকদের মধ্যে এমনও আছে, যাদের ইতিহাস আছে অতীতে অনেক মানুষ খুন করার, হত্যা করার। জনগণ তাদের বিশ্বাস করে না, তারা কখনো নিজের এলাকা থেকে নির্বাচিত হতে পারে নাই। এবার আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে জোর-জুলুম করে পুলিশের সাহায্য নিয়ে নির্বাচনে জিতেছে।

“আগামী দিনেও তারা (সরকার) এভাবে জিততে চায়। তারা মুখে বলছে, মানুষকে দেখানোর জন্য, আগামীতে বিএনপি আসলে নির্বাচন টাফ হবে। এটা বলার জন্য বলছে। কিন্তু আগামী দিনের নির্বাচনে কী পরিকল্পনা, তা তারা করে রেখেছে।”

ক্ষমতায় গেলে সবার আগে দেশের স্বার্থ দেখার অঙ্গীকার করে খালেদা জিয়া বলেন,  “আমি আমার বাংলাদেশের স্বার্থ আগে দেখব, তারপর অন্যের কথা হবে। অবশ্যই সকলের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক থাকবে, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে, কিন্তু আমার দেশের স্বার্থের বাইরে যেয়ে আমি কাউকে অধিক কিছু দিয়ে দেব, আর বাংলাদেশ থাকবে না, সেটা হতে পারে না।

“আমাদের বন্ধুত্ব হবে সমানে সমান। কেউ বলে দেবে, তার ইচ্ছামতো তা করব, তাদের খুশি রাখার জন্য- সেটা নয়। এখন তিস্তার পানি নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা চাই, তিস্তার পানির ন্যায্য হিৎসা আমাদের দিতে হবে, তাছাড়া অন্য কোনো কিছু আমরা মানব না।”

দলের কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ সংগঠনগুলো নতুনভাবে সংগঠিত করার কথা বলেন খালেদা জিয়া।

অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন, আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি খোরশেদ আলম, সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা বারে নবনির্বাচিত রুহুল আমিন, কাজী আবদুল বারিক, সারওয়ার কায়সার, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আবদুল কালাম আযাদ ও আফানুর রহমান রহমানসহ আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খোরশেদ মিয়া আলম, মোসলেহউদ্দিন, ইকবাল হোসেনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।