শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার দুর্ভোগ লাঘবে সমন্বিত পরীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
Published : 02 Nov 2016, 04:45 PM
বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বাংলাদেশের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটিতে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের আলাদা আবেদনের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় গিয়ে পরীক্ষা দিতে হওয়ায় বিপুল অর্থও ব্যয় হয়।
বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ‘অষ্টম ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপ্রধান শিক্ষার্থীদের এই দুর্ভোগের বিষয়টিতে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি বলেন, “অন্যান্য বছরের ন্যায় এবছরও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের এক শহর থেকে অন্য শহরে ছোটাছুটি করতে হয়েছে।
“বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা যে অবর্ণনীয় সমস্যা বিশেষ করে যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার সমস্যায় পড়েছে, তা কল্পনাতীত।”
বিভিন্ন শহরে ছেলে-মেয়েদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পাঠাতে অনেক অভিভাবকদের সামর্থ্য না থাকার কথা বলেন আবদুল হামিদ। আবার সামর্থ্য থাকলেও এক দিনে এত সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভার নিতে বিভিন্ন শহরের অসামর্থ্যের বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।
“তাই উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে এই অবস্থার অবসান হওয়া একান্ত আবশ্যক। কেন্দ্রীয়ভাবে বা অঞ্চলভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা করলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পারে বলে আমি মনে করি,” বলেন রাষ্ট্রপতি।
এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাবলিক পরীক্ষার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রস্তাব দিলেও তাতে সাড়া দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষার কোনো উদ্যোগও আলোর মুখ দেখেনি।
আচার্য আবদুল হামিদ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের বিষয়টি নিয়ে ‘বাস্তবমুখী উদ্যোগ’ নেওয়ার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষামন্ত্রীর তৎপরতাও প্রত্যাশা করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, “উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা চাই, দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী যাতে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পায়।”
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, “এসব অপকর্মের সাথে কিছু বিপথগামী তরুণের পাশাপাশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিছু ছাত্রের সম্পৃক্ত হওয়ার খবর আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে।
“এটা বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, গোটা জাতির মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করেছে। উঠতি মেধাবী তরুণদের যারা উগ্র মৌলবাদ, সন্ত্রাসী বা জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার মদদ দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে সমূলে উৎপাটন করতে হবে।”
পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, নিয়মিত পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশসহ খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম জোরদার করতে বলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাস্তবমুখী গবেষণার দিকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “গবেষণার উদ্দেশ্য যাতে কেবল ডিগ্রি অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তবমুখী হয় এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে আসে সেদিকে সবিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত ১৯ জনের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেন আবদুল হামিদ।
ইউজিসি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মৌলিক গবেষণা ও প্রকাশনায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন শাখায় প্রবন্ধ ও পুস্তকের জন্য এ পুরস্কার দিয়ে আসছে।
অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রকাশিত প্রবন্ধের জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং বইয়ের জন্য ৭৫ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়।
ইউজিসি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ইউজিসির সদস্য দিল আফরোজা বেগম।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা
২০১৪ সালে গবেষণায় পুরস্কারপ্রপ্তরা হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. অসিত রায়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রভাষক আবদুল্লাহ-আল-আরিফ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. প্রণব কুমার পান্ডে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম, বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাসরীন আক্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মমিনুল ইসলাম, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির প্রভাষক মো. ইমরান হাসান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. শেখ জামাল উদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোর্বারা সিদ্দিকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খান তৌহিদ ওসমান।
২০১৫ সালের পুরস্কাপ্রাপ্তরা হলেন- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. জগন্নাথ বড়ূয়া, বেসরকারি উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রভাষক মোহাম্মদ বদরুজ্জামান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মনির উদ্দিন আহমেদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. আহমদ হুমায়ুন কবির, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইফতেখার শামস্, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম মোহাম্মদ ভূঁঞা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ অছিয়র রহমান, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আয়শা আখতার ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাছুদুর রহমান।