চীনা প্রেসিডেন্টের ‘ঐতিহাসিক’ বাংলাদেশ সফরে ‘সফল’ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের ‘নতুন দিগন্ত’ উন্মোচিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।
Published : 14 Oct 2016, 06:35 PM
‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক
চীন-বাংলাদেশ ব্যবসায়ীদের ১৩.৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি
চীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইলেন রাষ্ট্রপতি
চীনা প্রেসিডেন্টের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ
চীনের সঙ্গে সংসদীয় সম্পর্ক বাড়াতে চান স্পিকার
শুক্রবার চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী প্রেস সচিব ইহসানুল করিমও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, শি জিনপিংয়ের এই সফরের মধ্য দিয়ে চীন ও বাংলাদেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক ‘কৌশলগত সম্পর্কে’ রূপ নিয়েছে।
সহযোগিতা এগিয়ে নিতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুই দেশের সরকারের মধ্যে ১৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক এবং ১২টি ঋণ ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। দুই নেতা ছয়টি বড় প্রকল্পের ফলকও উন্মোচন করেছেন।
তবে ঋণ চুক্তির আর্থিক পরিমাণ ও বিস্তারিত জানতে কয়েক দিন সময় লাগবে বলে পররাষ্ট্র সচিব জানান।
‘সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে’ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ‘সফল’ হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, “চীনের রাষ্ট্রপতির সফর ঐতিহাসিক, দুই দেশের মধ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
“বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক কৌশলগত সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। কৌশলগত সম্পর্কে পরিণত হওয়ার ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হবে, আরও ব্যপ্তি বাড়বে। বিভিন্ন পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের একটা নতুন অবয়ব দেখব।
১৯৮৬ সালে লি শিয়ানইয়ানের পর বাংলাদেশে আসা প্রথম চীনা রাষ্ট্রপ্রধান শি জিনপিং। ‘ওয়ান-বেল্ট, ওয়ান রোড’ নীতি ধরে এগিয়ে যাওয়া চীনের সহযোগিতা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে তার এই সফর।
বৈঠকে উঠে আসা বিষয়গুলোর ‘রাজনৈতিক দিক রয়েছে’ জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আগামীতে বিভিন্ন পর্যায়ে দুই দেশের সফর দেখা যাবে।
“ট্রেড ও ইনভেস্টমেন্টের নতুন ক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়েছে। আইসিটিতে নতুন ফ্রেমওয়ার্কের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে।”
সচিব বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্কটা বিশেষ করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লম্বা ইতিহাস আছে। নতুন কিছু ক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়েছে। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের কাঠামোগত চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
একইসাথে কৃষি, বাণিজ্য ও অন্যান্য খাতে সহযোগিতা আরো ‘গভীর ও বিস্তৃত’ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সচিব বলেন, “নতুন যে ক্ষেত্রগুলো আবিস্কৃত হয়েছে তারমধ্যে মেরিটাইম খাতে একটা বড় ধরনের কো-আপারেশন নিয়ে এমওইউ সই হয়েছে।
“বাংলাদেশ ও চায়নার সম্পর্কে যে বহুমাত্রিকতা আছে সেটা আরো গভীর ও বিস্তৃত হবে। একইসাথে আরো নতুন নতুন খাতে নতুন উদ্যোগ আপনারা দেখতে পাবেন।”
এই কাঠামো চুক্তির আওতায় বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য চীনারা প্রযুক্তি হস্তান্তর, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সহায়তা করবে বলে জানান সচিব।
শহীদুল হক বলেন, “একটি জিনিস দুই নেতাই বলেছেন যে, বাংলোদেশ ও চীনের সম্পর্কটা বিশ্বাস ও সময় পরীক্ষিত সম্পর্কে উন্নীত হয়েছে, সেজন্য এটা স্ট্র্যাটেজিক লেভেল পর্যায়ে গেছে।”
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ‘যে অর্জন’ সেটা চীনের রাষ্ট্রপতি ‘তিনবার বলেছেন’ জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের যে ইতিহাস, তা থেকে চীনেরও শেখার আছে।”
জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের বিষয়েও দুই দেশ এক সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে এবং এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বক্ষরিত হয়েছে বলে জানান তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ও তথ্য আদান-প্রদানেও এমওইউ হয়েছে।”
এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রামের কর্ণফুলী মাল্টিলেইন টানেল, ঢাকা বিশ্ববিদল্যায়ে কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বাংলাদেশ ফোর টায়ার ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার, ফেঞ্চুগঞ্জে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মোস্তফা কামাল।
শি জিনপিং বেলা ১১টা ৩৬ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রীয় এই অতিথিকে ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। লাল গালিচা সংবর্ধনার সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল তাকে গার্ড অফ অনার দেয়।
১৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকা এসেছেন শি, যে দলে ক্ষমতানীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও কয়েকজন মন্ত্রী রয়েছেন।
শনিবার সকালে সাভারে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পরপরই ঢাকা ছেড়ে ভারতের উদ্দেশে রওনা হবেন চীনের প্রেসিডেন্ট।