বাংলাদেশে ৬৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য দায়িত্বরত পরিদর্শকদের গড়ে প্রতি মাসে অন্তত ২০টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে হয়।
Published : 11 Sep 2016, 05:37 PM
একজন ব্যক্তির উপর ২০টি বিদ্যালয় পরিদর্শনের ভার চাপিয়ে শিক্ষার মান নিশ্চিত কীভাবে সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির এক বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী ২০টি বিদ্যালয়ের ভার একজন পরিদর্শকের উপর বলে তথ্যটি বেরিয়ে আসে।
তবে বাস্তব চিত্র আরও খারাপ বলে মনে করেন গণশিক্ষা নিয়ে কাজ করে আসা সংস্থা গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা তো গড় হিসাব। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর বাস্তবতাটা কী এসেছে? বাস্তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক কর্মকর্তাকে হয়ত ৩০টি স্কুল পরিদর্শন করতে হয়।”
গত ২৩ অগাস্ট রাজধানীর তেজগাঁওয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো অফিসে সংসদীয় কমিটির সভায় বিদ্যালয় পরিদর্শকের অপ্রতুলতা নিয়ে কথা ওঠে বলে বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা যায়।
এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াছ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে নিয়মিত স্কুল পরিদর্শনের কোনো বিকল্প নেই। এ বিষয়ে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য কমিটির পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।”
সংসদীয় কমিটির নথি থেকে জানা যায়, ৬৫ হাজার বিদ্যালয়ের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (টিইও)/সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (এটিইও) পদ রয়েছে আড়াই হাজারের মতো। এ হিসাবে একজন কর্মকর্তাকে গড়ে প্রতিমাসে ২০টিরও বেশি স্কুল পরিদর্শন করতে হচ্ছে।
সংসদীয় কমিটি বলেছে, একজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতি মাসে কীভাবে গড়ে ২০টিরও বেশি বিদ্যালয় পরিদর্শন করবে? কীভাবে শিক্ষার মান নিশ্চিত করবে?
কমিটির বক্তব্যের জবাবে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, প্রতিজন টিইও/এটিইও সর্বোচ্চ ২০টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করবেন- এই বিবেচনায় মোট কর্মকর্তার প্রয়োজন ৩ হাজার ২০২ জন। তবে পদ রয়েছে ২ হাজার ৫৮৯টি পদ রয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ও কার্যপরিধি বেড়ে যাওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরসহ বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীর নতুন পদ সৃজনে সুপারিশ করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার যদি তার নীতি অনুযায়ী পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দেয়, তাহলে অবশ্যই সমাধান সম্ভব। এছাড়া একজন অতিরিক্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পদও সৃষ্টি করা যায়। সেটা করলে কাজটা ভাগ করে নেওয়া যাবে।”
বৈঠকের কার্যবিবরণীতে দেখা গেছে, একজন এটিইও প্রতিমাসে ১০টি করে স্কুল পরিদর্শন করবেন বলে কমিটির মৌখিক নির্দেশনা ছিল। এতে আরও অতিরিক্ত ৩ হাজার ৮১৫ জন এটিইও প্রয়োজন। ৩৭ হাজার স্কুল চালানোর জন্য যে জনবল ছিল, তা দিয়ে এখনও চলছে। অথচ এখন স্কুলের সংখ্যা ৬৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে।
রাশেদা কে চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা নেতিবাচক বাস্তবতা। কোনো পদই খালি থাকা উচিৎ না।”
তিনি আরও বলেন, “আরেকটি বিষয় হলো, পরিদর্শন যে করে সেটাতে শ্রেণিকক্ষের ভিতরের অবস্থা ফুটে উঠছে কি না। শিক্ষার মান বাড়াতে হলে শ্রেণিকক্ষের ভিতরে কী হচ্ছে, সেটা জানা সবচেয়ে জরুরি।”