এ বছর হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৮৩ হাজার ৩১১ জন।
Published : 09 May 2024, 10:19 AM
নড়াইলের মো. আবদুল হক হজে যাওয়ার জন্য প্রায় ২৫ বছর ধরে তিলে তিলে টাকা জমিয়েছেন। স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে এসে আবেগে আপ্লুত তিনি।
সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে ধরা গলায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “টাকা-পয়সা ছিল না। কোনোদিন ভাবি নাই আল্লাহ আমার স্বপ্ন পূরণ করবেন। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানানোর ভাষা আমার নাই।"
আবদুল হকসহ ৪১৫ জন যাত্রী নিয়ে বছরের প্রথম হজ ফ্লাইট সৌদি আরবের জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১৯ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৩৩০১ ফ্লাইটটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। সৌদি আরবের স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টায় তাদের জেদ্দায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
চাঁদপুরের কচুয়া থেকে হজ করতে যাচ্ছেন মো. শাহ আলম। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হজের ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমি খুশি। আমাদের ইমিগ্রেশন পর্যন্ত কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। আশা করি, সৌদি আরবে নেমেও কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না।"
ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান প্রথম হজ ফ্লাইটের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, “সৌদি সরকারের সাথে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে আল্লাহর মেহমানদের পবিত্র হজ পালন নির্বিঘ্ন করতে সকল উদ্যোগ নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।"
হজ যাত্রী পরিবহনের দায়িত্বে থাকা এয়ারলাইন্সগুলোর উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন “বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও অন্যান্য এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে আমি অনুরোধ জানাব, আপনারা হজ যাত্রীগণকে সর্বাত্মক সহযোগিতার চেষ্টা করবেন। যাত্রীসেবায় সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের পরিচয় দেবেন৷ হজযাত্রীদের লাগেজ, বোর্ডিং আনলোডিংয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবেন। তাদের খাবার-দাবারের মানের দিকেও বিশেষ যত্নবান হবেন।"
অন্যদের মধ্যে সংসদ সদস্য খসরু চৌধুরী, সাজ্জাদুল হাসান, বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল উদ্দীন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল হামিদ জমাদ্দার, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেন, শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিমান জানিয়েছে, হজের আগে ১১৬টি ‘ডেডিকেটেড’ ফ্লাইট পরিচালনা করবে তারা। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে জেদ্দা ও মদিনায় এসব ডেডিকেটেড ফ্লাইট পরিচালিত হবে৷
এরমধ্যে ঢাকা থেকে জেদ্দায় ৮২টি, চট্টগ্রাম থেকে জেদ্দায় ১৭টি, সিলেট থেকে জেদ্দায় ৫টি, ঢাকা থেকে মদিনায় ৯টি, চট্টগ্রাম থেকে মদিনায় ২টি এবং সিলেট থেকে মদিনায় একটি ডেডিকেটেড ফ্লাইট পরিচালিত হবে।
এছাড়া হজ শেষে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স মোট ১২৫টি ‘ডেডিকেটেড’ হজ ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এর মধ্যে জেদ্দা থেকে ঢাকায় ৭৩টি, জেদ্দা থেকে চট্টগ্রামে ১৫টি, জেদ্দা থেকে সিলেটে ২টি, এছাড়া মদিনা থেকে ঢাকা ২২টি, মদিনা থেকে চট্টগ্রামে ৯টি এবং মদিনা থেকে সিলেটে ৪টি ফ্লাইট আসবে।
বিমানের পাশাপাশি সৌদি আরবের বিমান পরিবহন সংস্থা ফ্লাইনাস ও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স বাংলদেশ থেকে হজযাত্রীদের পরিবহন করবে। হজযাত্রীরা দুটি ব্যাগে ২৩ কেজি করে মোট ৪৬ কেজি মালামাল পরিবহন করতে পারবেন প্রতিবার।
এদিকে চলতি বছর হজযাত্রীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়ার সময় দ্বিতীয় দফা বাড়িয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এক বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্ধিত সময়ের মধ্যে ভিসা কার্যক্রম শেষ না করায় দ্বিতীয় দফায় শনিবার পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন হজ হতে পারে। চলতি বছর বাংলাদেশের জন্য ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের সৌদি আরবে হজ করতে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু নিবন্ধন করেছেন ৮৩ হাজার ৩১১ জন।
এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার ৩১৯ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছেন ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজে খরচ হবে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। আর বিশেষ প্যাকেজে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং বিশেষ প্যাকেজে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা খরচ নির্ধারণ করেছে হজ এজেন্সিগুলোর সমিতি- হাব।