ঋণে অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদকে অপসারণের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান খানকে।
Published : 30 Jun 2016, 06:23 PM
বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমডি হামিদকে অপসারণের পর দুপুরে ডিএমডি মিজানকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বিকালেই তাকে গ্রেপ্তার করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
৭৯২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণে অনিয়ম পাওয়ায় এমডি হামিদকে অপসারণের নির্দেশ পাঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
এই অনিয়মের মধ্যে মুন গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজকে দেওয়া প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে, যার অনুসন্ধান চালাচ্ছিল দুদক।
ওই ঋণ তুলে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করে দুদক। ওই মামলায়ই মতিঝিল থেকে মিজানকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান।
মুন গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে গত জানুয়ারিতে মিজানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অগ্রণী ব্যাংককে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন তাকে ব্যাংকের নিয়মিত কাজের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়াও হয়েছিল।
প্রণব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,বিকালে মতিঝিল থেকে মিজানের সঙ্গে ব্যাংকটির ডিজিএম মো. আখতারুল আলম এবং এজিএম মো. শফিউল্লাহকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
“ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার একটি জমিতে ভবন নির্মাণের নামে আয়-ব্যয়ের ভুয়া হিসাব দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ১০৮ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগে এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
মুন গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ওই জমিটির (মিজান টাওয়ার) মালিকানা দাবি করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলেও তার মালিকানা স্বত্বের বৈধতা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে।
দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়, “আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যদের লাভবান করে প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে ওই জমির গ্রাহক মিজানুর রহমানকে ১০৮ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে পর্যায়ক্রমে ৯৪.৮ কোটি টাকা উত্তোলন ও গ্রহণ করে ব্যাংকের তথা রাষ্ট্রের সম্পদের ক্ষতিসাধন ও আত্মসাৎ করেছেন।”
সকালে এমডি হামিদকে অপসারণের নির্দেশনা আসার পর ডিএমডি মিজানকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বলে জানান অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমডি অপসারণের পর অর্থ মন্ত্রণালয় এক চিঠি দিয়ে সিনিয়র ডিএমডিকে ভারপ্রাপ্ত এমডি করতে বলেছিল। সে মোতাবেক মিজানুর রহমান খানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।”
এমডি অপসারণের পর ভারপ্রাপ্ত এমডি গ্রেপ্তার হওয়াকে বড় ধাক্কা মনে করছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির কর্মকর্তারা।
সে বিষয়ে জায়েদ বখত বলেন, “আমরা যতটুকু জেনেছি, মিজানুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে নেওয়া হয়েছে। যদি সত্যিই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলে অর্থ মন্ত্রণালয় যে ব্যবস্থা নিতে বলে আমরা সে ব্যবস্থাই নেব।”
এর আগে সকালে তিনি জানান, ৭৯২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণে অনিয়ম পাওয়ায় এমডি হামিদকে অপসারণের নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সঙ্গে সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তির পরও গত বছরের ১১ জুলাই এমডি পদে হামিদের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে আদেশ জারি করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী, কয়েক দিন পরই ১০ জুলাই তার মেয়াদ শেষের কথা।
হামিদের ‘যত অনিয়ম’
# ২০১১ সালে অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই এমডি নিজে তানাকা ট্রেডকম ইন্টারন্যাশনালের ১২০ কোটি টাকা ঋণের জামানত পরিবর্তন করে দেন।
# ২০১৫ সালে ওই কোম্পানিকে ১১ কোটি টাকা ঋণ নবায়ন করে দেন এমডি। ৪৬ কোটি টাকা ঋণখেলাপি হওয়ার পরও তা নিয়মিত দেখানো হয়।
# ঋণঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা লঙ্ঘন করে ২০০ কোটি টাকা ঋণপত্র সীমা দুই বার নবায়ন করেন এমডি।
# মুন গ্রুপের মালিক মিজানুর রহমান মিজান ও তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে ব্যাংককে ঝুঁকিতে ফেলেন।
এসব অনিয়মের অভিযোগে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কেন এমডিকে অপসারণ করা হবে না- তা জানতে চেয়ে নোটিস দিয়েছিল ব্যাংলাদেশ ব্যাংক।
পরে তিনি যে জবাব দেন তাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সন্তুষ্ট হতে না পারায় চলতি মাসে শুনানি শুরু হয়।
শুরুতে আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে ৯০৬ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ আনা হলেও পরে ৭৯২ কোটি টাকা অনিয়মের জন্য অভিযোগ গঠন করা হয়।
শুনানি শেষে ২১ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কমিটি তাকে অপসারণে সুপারিশ জমা দেয়, যা বৃহস্পতিবার কার্যকারিতা পেল।
মুন গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারি অনুসন্ধানে সম্প্রতি এমডি হামিদসহ অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক ১৪ সদস্যকে তলব করেছিল দুদক।