মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ‘ব্যর্থ’ ২০ কোম্পানিকে উৎপাদন বন্ধের যে নির্দেশ হাই কোর্ট দিয়েছে, তা স্থগিতের আবেদন আপিল বিভাগে সাড়া পায়নি।
Published : 15 Jun 2016, 12:00 PM
হাই কোর্টের আদেশের স্থগিতাদেশ চেয়ে চারটি ওষুধ কোম্পানির করা আবেদন শুনে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারকের বেঞ্চ বুধবার হাই কোর্টে রুল ১৮ অগাস্টের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছে।
যারা এই রিট আবেদন নিয়ে এসেছেন, তাদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আপিল বিভাগের আদেশের পর বলেন, “আদালত কোনো স্থগিতাদেশ দেয়নি। ফলে হাই কোর্ট যে আদেশ দিয়েছিল রুল নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত তার কার্যকারিতা বহাল থাকছে।”
২০১৪ সালের ২০ সেপ্টম্বর ভেজাল এবং নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে।
বিশেষজ্ঞ কমিটি দেশের ৮৪টি ওষুধ কোম্পানি পরিদর্শন করে সেগুলোর সক্ষমতা মূল্যায়নের পর চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সংসদীয় কমিটিতে প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ ২০টি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল এবং ১৪ কোম্পানির সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক (নন-পেনিসিলিন, পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপ) ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিলের সুপারিশ করা হয়।
এ বিষয়ে ‘জীবন রক্ষাকারী ওষুধে ভেজাল’ শিরোনামে ১৯ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষেশজ্ঞ কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে গত মে মাসে হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে শুনানি করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ৭ জুন ২০ কোম্পানিকে সাত দিনের মধ্যে ওষুধ উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি ১৪টি কোম্পানিকে একই সময়ের মধ্যে এন্টিবায়োটিক উৎপাদন বন্ধের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
>> যে ২০ কোম্পানিকে সব ধরনের ওষুধ উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে-
এক্সিম ফার্মাসিউটিক্যাল, এভার্ট ফার্মা লিমিটেড, বিকল্প ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ড্রাগল্যান্ড লিমিটেড, গ্লোব ল্যাবরেটরিজ (প্রাইভেট) লিমিটেড, জলপা ল্যাবরেটরিজস লিমিটেড, কাফমা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ন্যাশনাল ড্রাগ ফার্মা লিমিটেড, নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, রিমো কেমিক্যালস লিমিটেড (ফার্মা ডিভিশন), রিড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, স্কাইল্যাব ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, স্টার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, টুডে ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
>> যে ১৪ কোম্পানিকে এন্টিবায়োটিক উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে-
আদ-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, আলকাদ ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, বেঙ্গল ড্রাগস অ্যান্ড কেমিক্যালস (ফার্মা) লিমিটেড, ব্রিস্টল ফার্মা লিমিটেড, ক্রিস্টাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, এমএসটি ফার্মা অ্যান্ড হেলকেয়ার লিমিটেড, অরবিট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, ফিনিক্স কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি লিমিটেড, রাসা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও সেভ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
আদেশে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ওষুধ প্রশাসনের পরিচালককে এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলে হাই কোর্ট।
৩৪টি কোম্পানির অনুমোদন বাতিলে ‘বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা’ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং এসব কোম্পানির লাইসেন্স ও এন্টিবায়োটিক উৎপাদনের অনুমোদন কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়।
স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সক্রেটারি জেনারেল ও র্যাব মহাপরিচালকসহ সাতজনকে চার সপ্তাহের মধ্যে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যালস, এমএসটি ফার্মা অ্যান্ড হেলকেয়ার লিমিটেড, আদ-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, ক্রিস্টাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে সোমবার চেম্বার আদালতে গেলে চেম্বার বিচারপতি স্থগিতাদেশ না দিয়ে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলে।
এর ধারাবাহিকতায় কোম্পানি চারটি লিভ টু আপিল করে, যার ওপর বুধবার আপিল বিভাগে শুনানি হয়।
আদালতে রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ও আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এমএসটির পক্ষে ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল এবং ইউনিভার্সেলের পক্ষে এ জে মোহাম্মদ আলী ও নুরুল ইসলাম সুজন শুনানি করেন।