ডনাল্ড লু বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যই এ সফরে এসেছিলেন, বলেন তিনি।
Published : 18 May 2024, 09:31 PM
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ‘চমৎকার’ দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু সংস্কার হলে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ঢাকা সফরের সময় বৈঠকে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু এ বিষয়ে তার দেশের মনোভাব জানিয়ে গেছেন।
শনিবার চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়িতে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন হাছান মাহমুদ।
নগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ সভায় তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছিলেন, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যই এ সফরে এসেছিলেন।
“আমার সাথে বৈঠকে কীভাবে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সে বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন। এমনকি আমরা যদি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু রিফর্ম (সংস্কার) করি, তাহলে আমাদের জিএসপি সুবিধাও ফিরিয়ে দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন তারা।”
অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে লুর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে তাদের একটি বিশেষ তহবিল আছে। সেখান থেকে তারা আমাদের সহযোগিতা করার কথাও বলেছেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘চমৎকার’ সম্পর্কের কারণে ‘বিএনপির মাথা খারাপ’ দাবি করে মন্ত্রী বলেন, “আমরা সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই কাজ করছি।”
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তার বক্তব্যের বেশির ভাগজুড়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সমালোচনা করেন।
বিএনপিকে ‘জালিয়াত দল’ আখ্যা দিয়ে কয়েকটি ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, “আপনাদের মনে আছে গতবছর ২৮ অক্টোবর জো বাইডেনের ভুয়া উপদেষ্টাকে বিএনপি হাজির করেছিল। তিনি যখন বিএনপি কার্যালয়ে, তখন দেখি শুধু ইংরেজি বলেন। পুলিশ যখন ধরে নিয়ে গেল তখন দেখি গড়গড়াইয়া বাংলা বলেন।
“তার আগে বিএনপি কংগ্রেসম্যানদের সই জাল করেছিল। সেই সময়ে (বিএনপি) বলেছিল, ভারতের অমিত শাহ ফোন করেছিলেন। অমিত শাহর অফিস থেকে বলা হল, তিনি কাউকে ফোন করেননি, যে আওয়াজ ছাড়া হয়েছিল সেটা অমিত শাহর নয়।”
তার ভাষায়- দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি দেখে বিএনপি ও তাদের দোসরদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে দেখি জিএম কাদেরেরও মাথা খারাপ হয়ে যায়।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির কার্যক্রম সম্পর্কে বলতে গিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “আমরা দেখেছি বিএনপি প্রতিদিন বিভিন্ন দূতাবাসে ঘুরে বেড়াত। আর দেনদরবার করত, নির্বাচনটা যাতে বন্ধ করা যায়, কোনো লাভ হয় নাই। নির্বাচন হয়েছে, ৪২ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। যদি নির্বাচনের দিন কুয়াশা এবং প্রচণ্ড ঠান্ডা না থাকত তাহলে আরও বেশি মানুষ ভোট দিত।
“আর বিএনপি যদি নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা, মানুষের ওপর হামলা, ট্রেনের মধ্যে শিশুসন্তানসহ পুরো পরিবারকে জ্বালিয়ে হত্যা না করত, তাহলে ভোটের হার ৬০ শতাংশের বেশি হত।”
বিএনপি নেতা মঈন খানের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “উনার প্রতি সম্মান রেখে বলছি, তিনি রাজনীতির বাইরে এখন জ্যোতিষীর দায়িত্বও পালন করা শুরু করেছেন। বঙ্গবন্ধু যখন দেশ পরিচালনা করছিলেন তখন মঈন খানের বাবা আবদুল মোমেন খান খাদ্য সচিব ছিলেন।
“খাদ্যবাহী জাহাজ ভারত মহাসাগর থেকে ফেরত যাবার পেছনে তার বাবার কারসাজি ছিল, যাতে দেশে খাদ্য সংকট তৈরি হয়। খাদ্য সংকট তৈরি করে বঙ্গবন্ধুকে অজনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে আবদুল মোমেন খানের ভূমিকা ছিল।”
সেটির পুরস্কার স্বরূপ জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করার পর আবদুল মোমেন খানকে মন্ত্রীর মর্যাদায় খাদ্য উপদেষ্টা বানিয়েছিলেন দাবি করে তিনি বলেন, “১৯৭৯ সালের নির্বাচনের পর মোমেন খান সংসদে খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে বক্তব্যে বলেছিলেন, খাদ্যের জন্য দরকার হলে দেশ বিক্রি করে দিব। ওনারই সন্তান জনাব মঈন খান।”
দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে, বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে হলে, শেখ হাসিনার বিকল্প একমাত্র শেখ হাসিনা, এই দেশে আর কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, নগর কমিটির সহসভাপতি ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শফিক আদনান, শফিকুল ইসলাম ফারুক, শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর ও মশিউর রহমান।