প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণের চক্রান্তে’ এফবিআইকে ঘুষ দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির এক নেতার ছেলের দণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ যে মামলাটি করেছিল, তাতেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সাংবাদিক শফিক রেহমানকে।
Published : 16 Apr 2016, 01:07 PM
শনিবার শফিক রেহমানকে রাজধানীর ইস্কাটন থেকে গ্রেপ্তারের পর তাকে ২০১৫ সালের অগাস্ট মাসের একটি মামলায় গ্রেপ্তারের কথা জানান ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার।
ওই মামলাটির এজাহারে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারের এফবিআইকে ঘুষ দেওয়ার কারণে দণ্ডের ঘটনায় তা করা হয়েছে।
বাংলাদেশি এক রাজনীতিকের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত তথ্য পেতে এফবিআইয়ের এক সদস্যকে ঘুষ দেওয়ায় ২০১৫ সালে সিজারের কারাদণ্ড হয়।
ওই রাজনীতিকের নাম মার্কিন আদালতের নথিপত্রে প্রথমে উহ্য রাখা হলেও প্রসিকিউশনের নথিতে তাকে ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা’ বলা হয়।
সিজারের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে রায়ে বলা হয়, ‘অপহরণ,ভয় দেখানো ও তথ্য ক্ষতি করাই’ ছিল তার তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্য।
সিজার কিছু তথ্য বাংলাদেশি ‘একজন সাংবাদিককে’ সরবরাহ করেছিলেন এবং বিনিময়ে ‘প্রায় ৩০ হাজার ডলার’ পেয়েছিলেন বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।
ওই ঘটনাটি নিয়ে ২০১৫ সালের ৩১ মে ডিবির পরিদর্শক ফজলুর রহমান পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন, যা ৪ অগাস্ট পল্টন থানায় মামলায় রূপান্তরিত হয়। বিএনপিঘনিষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে ওই মামলায়ই গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মারুফ সরদার বলেন, “২০১৩ সালে শফিক রেহমান বিদেশ গিয়েছিলেন। তখন এই ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।”
শনিবার গ্রেপ্তারের পর শফিক রেহমানকে এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিন হেফাজতে রাখতে আদালতের সায় পেয়েছে পুলিশ।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, জাসাসের সহসভাপতি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন এবং দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থানরত বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র করছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি নেতার ছেলের দণ্ডের পর আওয়ামী লীগ নেতারাও দাবি করেন, শেখ হাসিনার ছেলেকে অপহরণের ষড়যন্ত্রে তারেক রহমানসহ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব জড়িত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা জয় যুক্তরাষ্ট্রে সিজারের বিরুদ্ধে ওই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন বলেও মামলায় তুলে ধরা হয়েছে।
বিএনপির ‘হাইকমান্ড’ থেকে নিজের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও জয় প্রকাশ করেছিলেন বলে এতে বলা হয়। বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনার কথাও উল্লেখ করেন ডিবি কর্মকর্তা ফজলুর।
নিউ ইয়র্কের আদালত বিএনপি নেতার ছেলে সিজারকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ঘুষ লেনদেনে মধ্যস্থতাকারী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জোহানেস থালেরকেও আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেয়।
তথ্য পেতে ২০১১ সালে তারা ঘুষ দিয়েছিলেন এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাস্টিককে।
বাংলাদেশে পুলিশের করা মামলাটিতে ওই রায়ের বিবরণ দিয়ে বলা হয়েছে, “প্রাপ্ত তথ্যসমূহ পর্যালোচনা করে সন্দেহ করা হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশসহ বিশ্বের যে কোনো দেশে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের জীবননাশসহ যে কোনো ধরনের ক্ষতির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন এবং এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে বিএনপির হাই কমান্ড দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অর্থায়ন করছে।”
শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি বলেছে, সরকারের বিরুদ্ধে লেখার জন্যই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেছেন, শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সরকারের ‘চরম স্বেচ্ছাচারিতার’ প্রকাশ ঘটেছে।
যুক্তরাজ্যের নাগরিক এই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনে জানানো হয়েছে বলেও জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।