প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের ষড়যন্ত্রে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব জড়িত বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা।
Published : 08 Mar 2015, 09:37 PM
বাংলাদেশের এক রাজনীতিকের বিষয়ে তথ্য পেতে যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআইয়ের এক সদস্যের সঙ্গে ঘুষ লেনদেনের দায়ে প্রবাসী এক বিএনপি নেতার ছেলের কারাদণ্ডের রায় ধরে এই অভিযোগ করেছেন তারা।
রোববার সংসদে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরাও একই অভিযোগ তুলে এর তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
অনির্ধারিত আলোচনায় তারা এই দাবি তোলার সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অধিবেশনে ছিলেন।
আলোচনার এক ফাঁকে স্পিকারের চেয়ারে থাকা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়াও বিষয়টি তদন্তের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশি এক রাজনীতিকের বিষয়ে মার্কিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত তথ্য পেতে এফবিআইয়ের এক সদস্যকে ঘুষ দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিএনপি নেতার ছেলেকে গত বুধবার কারাদণ্ডের রায় দেয় সে দেশের আদালত।
দণ্ডিত রিজভী আহমেদ ওরফে সিজার (৩৬) বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে। পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাটের ফেয়ারফিল্ড কাউন্টিতে বসবাস করেন মামুন।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের নথিপত্রে বাংলাদেশি রাজনীতিকের নাম উহ্য রাখা হলেও বিভিন্ন সংবাদপত্রের খবর, ওই রাজনীতিক হলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জয়। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, জয়কে অপহরণ করতেই তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছিল।
রোববার সংসদে এ বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রায় উদ্ধৃত করে বলেন, “রিজভী আহমেদ স্বীকারোক্তি দিয়েছে সে বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে এই ষড়যন্ত্র করেছে। এই হাই কমান্ড বলতে আমরা কী বুঝি?
“আমরা শুধু এর নিন্দা জানাচ্ছি না। আরও তদন্ত করতে হবে। প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি দিতে হবে। এই হাই কমান্ড কোথা থেকে এল? হাফ এ মিলিয়ন ডলার কে দিল? তা তদন্ত করা দরকার।”
সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বলেন, “এটা একটা ভয়াবহ ঘটনা। জয়কে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্রের মাস্টারমাইন্ড হচ্ছে বিএনপি।
“বিএনপির হাই কমান্ড কারা? স্বতন্ত্র তদন্ত হতে হবে। সরকারকে বলব, অনতিবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে, প্রয়োজনে আমেরিকা গিয়ে, বিএনপির কারা কারা টাকা দিতে চেয়েছিল.. দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড বলতে আমরা তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমুকে বুঝি না। বুঝি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। বিএনপির হাইকমান্ড বলতে বুঝি খালেদা জিয়াকে। আর বিএনপির সেকেন্ড হাইকমান্ড বলতে বুঝি তারেক রহমানকে।
“এখানে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। আমাদের কোনো এজেন্সি এর তদন্ত করেনি, করেছে এফবিআই। বিচার করেছে ওখানকার (যুক্তরাষ্ট্র) আদালত। আমাদের সরকারের প্রভাব নেই।”
জিয়া পরিবার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত দাবি করে সুরঞ্জিত বলেন, “এর আগেও ২১ অগাস্ট আমাদের হত্যা করতে চেয়েছিল। ওই হাওয়া ভবন থেকে নির্দেশ গিয়েছিল। হাওয়া ভবন চালাতো তারেক রহমান।
“হাইকমান্ড কে, কারা? কী উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র করেছিল? সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তদন্ত করতে হবে।”
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “দরকার হলে আমেরিকায় গিয়ে এ বিষয়ে তদন্ত করতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব সহযোগিতা করবে।”
স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী এই ঘটনার তদন্তে সংসদ থেকে প্রস্তাব গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দেন।
সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমালোচনাও করেন।
“গত বুধবার মার্কিন আদালতে রায় হয়েছে। এ নিয়ে পত্রিকায় আর সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি হয়েছে। আজ সংসদে কথা উঠেছে। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোনো কথা বলেনি। আগামীতে এ ধরণের বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্রিফিং করবেন যাতে করে অনলাইনে কোন ধরণের বিভ্রান্তি না ছড়ায়।”
জাসদের মইনউদ্দিন খান বাদল বলেন, “১৫ অগাস্টে জিয়া, ২১ অগাস্টে মা-ছেলে। বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার এই ষড়যন্ত্রে মা-সন্তানের ভূমিকা রয়েছে।”
বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র নিয়ে প্রকাশিত খবরের ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপও দাবি করেন ১৪ দলের এই নেতা।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, “দেশের বড় বড় আইনবিদ, শিক্ষিত ও সুশীল সমাজের মুখে এখন কোনো কথা নেই। একটা শব্দও বের হয়নি। তাদের বিবেক শয়তানের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। যারা বিবেক বিক্রি করেছে তাদের স্থান হবে আস্তকুড়ে।”
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, “খালেদা জিয়া এই ষড়যন্ত্রে জড়িত। কোর্টের রায়ে তা প্রমাণ হয়েছে। তদন্ত হওয়া দরকার। তাহলে পুরো মুখোশ উন্মোচন হবে।”
মার্কিন আদালতের রায়ের পরেও সুশীল সমাজের প্রতিক্রিয়া না থাকায় এর সমালোচনাও করেন তিনি।
আলোচনার শেষে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, “আইন, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রায়ের কপি সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করবেন। প্রয়োজনে আরও তদন্ত করে হাইকমান্ডকে চিহ্নিত করতে পদক্ষেপ নেবেন। প্রয়োজনে এর বিচার করতে হবে।”
একই সঙ্গে জাসদ সংসদ সদস্য বাদলের উত্থাপিত শেখ হাসিনার হত্যা ষড়যন্ত্রের বিষয়টিও পর্যালোচনা ও তদন্ত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।