রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা তদন্তে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা সাপ্তাহিক ছুটির প্রথম দিন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন।
Published : 18 Mar 2016, 09:33 PM
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মীর্জা আবদুল্লাহ হেল বাকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের একটি দল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যায়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকেও দলটি ব্যাংকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজে ছিল বলে জানান তিনি।
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ১৫ মার্চ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে মুদ্রা পাচার ও সাইবার অপরাধ দমন আইনে নগরীর মতিঝিল থানায় মামলা করলে তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।
পরদিনই অনুসন্ধান কাজের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিদর্শন শুরু করে পুলিশের এই বিভাগ। অনুসন্ধান শুরুর প্রথম দিনই মামলার শুনানি করে সিআইডিকে তদন্তের প্রতিবেদন দিতে আগামী ১৯ এপ্রিল দিন ঠিক করে দেয় ঢাকার একটি আদালত।
মামলার আগেই ‘হ্যাকিংয়ের’ মাধ্যমে অর্থ লোপাটের এই ঘটনায় ‘ছায়া তদন্তে’ নামে র্যাব।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে জালিয়াতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে ৩৫টি ভুয়া নির্দেশনা পাঠিয়ে বাংলাদেশের প্রায় এক বিলিয়ন টাকা সরানোর চেষ্টা হয়। এর মধ্যে ৩০টি নির্দেশনা ঠেকিয়ে দিতে পারলেও বাকিগুলোতে ৮১ মিলিয়ন ডলার যায় ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে, ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কার একটি ব্যাংকে পাঠানো হলেও শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।
ফিলিপিন্সের পত্রিকা ডেইলি ইনকোয়ারার এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর মার্চের শুরুতে বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আসে। তারা জানায়, সুইফট তথা সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন মেসেজিং সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে এ অর্থ সরানো হয়।
এই জালিয়াতি বাংলাদেশ ব্যাংক না কি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে হয়েছে তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। অর্থ লোপাটের তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শক ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিক্স যুক্তরাষ্ট্র সিলিকন ভ্যালির প্রতিষ্ঠান ফায়ারআইকে সম্পৃক্ত করেছে ১১ মার্চে এক খবরে জানায় রয়টার্স।
মামলার পর তদন্তে নামা সিআইডি এ কাজে ফিলিপিন্স, শ্রীলঙ্কা এবং যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলছে বলে জানান সিআইডির কর্মকর্তা মীর্জা আবদুল্লাহ হেল বাকী।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাটি শুধুমাত্র বাংলাদেশে ঘটেনি। ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে; সে কারণে তদন্ত কাজে তাদের সাথেও আমাদের যোগাযোগ রক্ষা করতে হচ্ছে।
“সবার সাথে সমন্বয় করে চলা হবে। তাদের তদন্তের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হবে।”
শুক্রবার বাংলাদেশ ব্যাংকে বিভিন্ন কম্পিউটার পরীক্ষা ছাড়াও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সিআইডির তদন্ত দল।
মীর্জা আবদুল্লাহ হেল বাকী বলেন, “আমরা ব্যাংকের নির্ধারিত কিছু কম্পিউটার তদন্তের আওতায় এনেছি। এগুলোই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।”
সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করতে যেসব প্রযুক্তির প্রয়োজন হয় সেসবের সর্বশেষ ভার্সন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের কাছে রয়েছে বলে দাবি করেন বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির অপর এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনার অনেক পরে দায়িত্ব পাওয়ায় তাদের বেশ ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।
“দেরির কারণে তদন্তের ফলাফল পুরোপুরি অনুকূলে আসবে কি না- তা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল।”
বিষয়টি গোপন রাখায় চাপের মধ্যে মঙ্গলবার গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন সাত বছর ধরে ওই দায়িত্ব পালন করে আসা আতিউর রহমান। এর পরপরই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দুই ডেপুটি গভর্নরকে সরিয়ে দেওয়ার কথা জানান এবং নতুন গভর্নর হিসেবে ফজলে কবিরের নাম ঘোষণা করেন।
এদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনা ‘ধামাচাপা’ দিতে গভর্নর আতিউর রহমানসহ কয়েকজনকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হচ্ছে কিনা- শুক্রবার সেই প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান।
ওই ঘটনায় অর্থমন্ত্রীও সন্দেহের বাইরে নন বলে এর আগের দিন মন্তব্য করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।