জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস।
Published : 05 Nov 2015, 01:08 PM
বুধবার সন্ধ্যায় নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের রাষ্ট্রীয় বাসভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ ঐকমত্য হয় হয় এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়।
বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, কৃষি, বন্দরের উন্নয়ন ও আইনের শাসন নিয়ে আলোচনা হয়। পরে শেখ হাসিনার সম্মানে নৈশভোজে পানি ব্যবস্থাপনা নিয়েও আলোচনা হয়।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
ব-দ্বীপ অঞ্চলে থাকায় বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে পানি সম্পদের ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে বলেও মত দেন তারা।
সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করতে গত জুনে দুদেশের মধ্যে ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য জোরদার ও টেকসই ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক ও ‘বাংলাদেশে ভূমি পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের ক্ষেত্রে’ আগ্রহপত্র সই হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেদারল্যান্ডসের পক্ষ থেকে আরও সহযোগিতার উপর জোর দেন তিনি শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে বাংলাদেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী।
দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা ও মার্ক রুট দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করার আশা প্রকাশ করেন।
অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতাকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের মূল বিষয় বলে উল্লেখ করেন তারা।
নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশি পণ্যের অন্যতম রপ্তানিকারক ও বিদেশি বিনিয়োগকারী অন্যতম শীর্ষ দেশ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।
দুই পক্ষই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির আগ্রহের কথা জানান।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ওষুধ, চামড়া, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, হালকা প্রকৌশল শিল্প, পাট, জাহাজ নির্মাণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, অবকাঠামো, তথ্য ও প্রযুক্তি এবং পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ করতে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
ডাচ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশ করলে প্রস্তাবটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে বলে জানান শেখ হাসিনা।
দেশের তৈরি পোশাক খাতকে ‘টেকসই শিল্পায়নের মডেল’ হিসেবে দাঁড় করাতে নেদারল্যান্ডস সরকারের সহযোগিতামূলক পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী।
এই প্রেক্ষাপটে পোশাক শিল্পে ‘অর্থায়নের সুযোগ’ ও ‘পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে’ নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতা চান তিনি।
ডাচ প্রধানমন্ত্রী এই শিল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
এসময় বিশ্ব শান্তি রক্ষায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন দুই পক্ষ।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সেনা ও পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন ডাচ প্রধানমন্ত্রী।
২০১৭-১৮ মেয়াদে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে সাফল্যের প্রশংসা করে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও উন্নয়নশীল বিশ্বের নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডাচ প্রধানমন্ত্রী।
জলবায়ু পরিবর্তনকে মানবজাতির সামনে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনার ক্ষেত্রে একমত হন দুই প্রধানমন্ত্রী।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম, মূখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, নৌ পরিবহণ সচিব শফিক আলম মেহেদী, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক ও নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল।