সম্পত্তির তথ্য গোপন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
Published : 20 Oct 2015, 12:28 PM
তিনি অবৈধভাবে ১০ কোটি ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৩২ টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন ঘোষণা করে, ওই সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে।
মঙ্গলবার ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার সাত বছর আগের এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।
এই রায় যখন হল, বিএনপির সাবেক ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক খোকা তখন ‘চিকিৎসার জন্য’ নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন। তাকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার চলে।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় খোকার আইনজীবী মহসিন মিয়া বলেন, তারা ‘ন্যায়বিচার পাননি’।
অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত এই রায় দিয়েছে।
রায়ে বলা হয়, আসামি খোকা অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার পাশাপাশি নয় কোটি ৬৫ লাখ তিন হাজার টাকার সম্পদের ওপর প্রযোজ্য কর ফাঁকি দিয়েছেন।
রায়ে দুদক আইনের ২৬ এর ২ ধারা অনুযায়ী ‘মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় কারণে’ খোকাকে তিন বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে আদালত। ওই টাকা দিতে না পারলে তাকে আরও এক মাস জেল খাটতে হবে।
আর অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ায় ২৭ এর ১ ধারা অনুযায়ী খোকার ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের রায় হয়েছে। পাশাপাশি তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন বিচারক। জরিমানার টাকা দিতে না পারলে ভোগ করতে হবে আরও ৬ মাসের সাজা।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছে, সাদেক হোসেন খোকা সাবেক মন্ত্রী, সাংসদ ও মেয়রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে এলেও অবৈধ সম্পদ রেখে অপরাধ করেছেন। আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হলেও তা করেননি। তার প্রতি নমনীয় হওয়ার সুযোগ নেই।”
বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ২ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক শামসুল আলম রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
ঢাকার সাবেক মেয়র খোকার পাশাপাশি তার স্ত্রী ইসমত আরা এবং ছেলে ইসরাক হোসেন ও মেয়ে সারিকা সাদেককেও মামলায় আসামি করা হয়।
ওই বছর ১ জুলাই দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা খোকার ছেলে ও মেয়ের নাম বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। আর অভিযোগপত্র হওয়ার আগেই ইসমত আরা হাই কোর্টে গিয়ে তার বিরুদ্ধে এ মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ পান।
এরপর ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলায় খোকার বিচার শুরু হয়। অবশ্য তার মাস ছয়েক আগেই তিনি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
এ মামলায় দুদকের পক্ষে মোট ৪০ জনের জবানবন্দি শোনে আদালত। তবে আদালতের দৃষ্টিতে পলাতক থাকায় সাক্ষীদের জেরা করার সুযোগ পাননি খোকার আইনজীবী।
গত ৪ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিচারক আবু আহমেদ জমাদার মামলাটি রায়ের জন্য রাখেন।
যেসব সম্পদ বাজেয়াপ্ত হবে
রায়ে যে ১০ কোটি পাঁচ লাখ ২১ হাজার ৮৩২ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর যেসব সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে খোকার মালিকানাধীন গুলশান ২ নম্বর সেক্টরের ৭২ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের পাঁচ কাঠা জমি এবং তার উপর ছয়তলা ভবনও রয়েছে, যার দাম দুই কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
মেসার্স বুড়িগঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ২৭ খণ্ড কৃষিজমি, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ৩৪ খণ্ড কৃষিজমিসহ মোট ৬১টি দলিলে ১৩৩.৫৯৫২ একর জমি রয়েছে। এসব জমির চার মালিকের মধ্যে খোকার অংশ হিসেবে সাত কোটি ৩৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা দামের ১০০.১৯৪৬ একর জমি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এছাড়া বুড়িগঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে হাবিব ব্যাংকে জমা করা টাকা থেকে ২৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩ টাকা নিয়ে মোট ১০ কোটি পাঁচ লাখ ২১ হাজার ৮৩২ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।