মিয়ানমারের আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সীমান্তে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।
Published : 27 Aug 2015, 09:15 PM
বান্দরবানের থানচিতে গোলাগুলিতে এক বিজিবি সদস্য আহত হওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ফিরে পিলখানায় বাহিনীর সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।
বুধবারের গোলাগুলির পর বান্দরবান সীমান্তে সৈন্য সমাবেশের পাশাপাশি রাঙামাটি সীমান্তেও তল্লাশি চালায় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ।
মেজর জেনারেল আজিজ বলেন, “সকাল থেকে আমাদের অপারেশন শুরু হয়। আমরা দুর্গম এলাকা ঘুরে আরাকান আর্মিদের ব্যবহৃত রাইফেলের গুলি, শেল এবং কোমরের বেল্ট উদ্ধার করেছি।
“সেখানে তাদের ট্রোলিংয়ের আলামত পেয়েছি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তারা ৮/১০ জনকে টেনে নিতে দেখেছে।”
গোলাগুলিতে আরাকান আর্মির আট থেকে দশজন আহত হয়েছে বলে ধারণা করছেন বিজিবি প্রধান।
বান্দরবান সীমান্তে গোলাগুলির পর পাশের জেলা রাঙামাটির রাজস্থলিতে বুধবার রাতে যৌথ অভিযানে আরাকান আর্মির এক ‘সহযোগীকে’ আটক করা হয় বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে।
আটক অং ইউ ইয়াং রাখাইনের (২০) জিম্মায় দুটি ঘোড়া, আরাকান আর্মির তিন সেট পোশাক, পোশাকের ৩০গজ কাপড়, তিনটি ল্যাপটপ, দুটি ডিজিটাল ক্যামরা, একটি হ্যান্ডিক্যাম, মোটর সাইকেল পাওয়া যায়।
বিজিবি প্রধান বলেন, “সে ঘোড়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তার কাছেও দুটি ঘোড়া পাওয়া গেছে।”
আটক যুবকের হাত মাইন বিস্ফোরণে বিচ্ছিন্ন হয়েছে বলে তার ধারণা।
আর কেউ আটক হয়েছে কি না- জানতে চাইলে মেজর জেনারেল আজিজ বলেন, “অপারেশন চলছে। দেখি আহতরা কোথায় চিকিৎসা নেয়।”
সীমান্তে প্রতিবেশী দেশটির বিদ্রোহীরা ঘাঁটি গেঁড়েছে কি না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে বিজিবি প্রধান বলেন, “তারা এই এলাকা হয়ে মুভ করতে পারে, সেটা অস্বীকার করছি না। তবে ঘাঁটি গেঁড়ে কারও অবস্থান করার সুযোগ নেই।”
বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা দ্রুততার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি। তবে যতদিন আমরা প্রয়োজন মনে করি, ওই সব এলাকায় অপারেশন অব্যাহত রাখব।”
বিদ্রোহীদের দমনে মিয়ানমারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ চলবে জানিয়ে মেজর জেনারেল আজিজ বলেন, “তারা তাদের সীমান্তে, আমরা আমাদের সীমান্তে অপারেশন চালাব। আর যে কোনো অপারেশনে আমরা একে অন্যকে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকি।”
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হেলিকপ্টারে বড় মোদক এলাকায় পৌঁছান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও বিজিবি প্রধান। ওই স্থানেই আগের দিন গোলাগুলি হয়েছিল।
প্রায় ৫ ঘণ্টা থেমে থেমে গুলি বিনিময়ের পর বাংলাদেশের সেনা ও বিজিবির যৌথ অভিযানে বিকালে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পিছু হটে।
মেজর জেনারেল আজিজ পিলখানায় সাংবাদিকদের বলেন, হামলাটি ছিল অতর্কিত ও অপ্রত্যাশিত।
“নৌকায় টহল দেওয়ার সময় অতর্কিতে হামলা করা হয়েছিল। আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। কারণ আমাদের সঙ্গে মিয়ানমার ও ভারতের সুসম্পর্ক। সীমান্তে কোনো উত্তেজনা নেই।”
বিজিবি সদস্যরা মঙ্গলবার ১০টি ঘোড়া আটক করে। ধারণা করা হচ্ছে, এর জের ধরেই দলটি বিজিবির উপর হামলা চালায়।
মেজর জেনারেল আজিজ বলেন, আগের দিন ১০টি ঘোড়া আটকানো হয়েছিল। ধারণা করছি, এগুলো দিয়ে তারা পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় রসদ আনা-নেওয়া করত। এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা হামলা চালাতে পারে।
“সবকিছু তদন্ত করা হচ্ছে,” বলেন তিনি।
আরাকান আর্মি সংখ্যায় কত ছিল-এই প্রশ্নের জবাবে বিজিবি প্রধান বলেন, “আমরা স্থানীয়দের কাছে জানতে পেরেছি, তারা সংখ্যায় বেশ ছিল।”
স্বাধীনতার পর পাহাড়ি এলাকার প্রায় ৫৩৯ কিলোমিটার সীমান্ত অরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে ১৭১ কিলোমিটার মিয়ামারের সঙ্গে, বাকিটা ভারতের সঙ্গে। মিয়ানমারের ১১০ কিলোমিটারে বিওপি স্থাপন করা হয়েছে।
বিজিবি প্রধান বলেন, “আমাদের দেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী রয়েছে- মিয়ানমারের এমন একটি অভিযোগ আমাদের হজম করতে হয় আমাদের পারমানেন্ট বিওপি না থাকায়। আরও ৩০/৩৫টি বিওপি স্থাপন করতে পারলে নতুন করে ১০০ কিলোমিটার সীমান্ত কভার করতে পারব।”
আরকান আর্মির সঙ্গে গোলাগুলির একটি ইতিবাচক দিকও দেখছেন বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনীর প্রধান।
“মিয়ানমার যে অভিযোগ করে আসছিল, আমাদের সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা অবস্থা করে, প্রশিক্ষণ নেয়। এখন তারা (মিয়ানমার) বুঝুক যে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক নেই বলেই আমাদের সঙ্গে গোলাগুলি হয়েছে।”