এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিড়া-মুড়ির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে, গুড়ের দাম বেড়ে গেছে ২০ টাকা, বেড়েছে মোমবাতির দামও।
Published : 24 Aug 2024, 11:11 PM
দেশের উত্তর পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলে বন্যার্তদের সহায়তার জন্য শুকনো খাবার কিনতে গিয়ে দাম বেড়ে যাওয়ার চিত্র দেখে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছে মানুষ। বাড়তি দামেও এখন চিড়া, মুড়ি, গুড়ের মত শুকনো খাবার পাওয়া যাচ্ছে না।
শনিবার বিকালে ঢাকার কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের নিচতলায় গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতারা ত্রাণ বিতরণ চিড়া-মুড়ি কিনতে এসে খালি হাতে ফেরত যাচ্ছেন।
খামার বাড়ির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কেনাকাটা করতে গিয়ে দোকানে দোকানে ঘুরেও ব্যর্থ জন শরীফুল ইসলাম। অথচ চিড়া-মুড়ি নিয়ে রাতেই ফেনীর উদ্দেশে রওনা দেওয়ার ইচ্ছা ছিল তাদের।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এক দোকানদারের কাছে অগ্রিম টাকা দিয়ে অর্ডার দিয়েছি। কাল নাকি মালগুলো দেবে। আমাদের আজ রাতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল। আগামীকাল যখন মালগুলো পাব তখন রওনা হব ফেনীর উদ্দেশে।”
এই বাজারে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এসেছেন নাফিজ আকন্দ ও তার কয়েকজন সহপাঠী। তারা রোববার ভোরে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে কুমিল্লা যেতে চেয়েছিলেন। ধানমন্ডির কোথাও চিড়া-মুড়ি না পেয়ে কারওয়ান এসেছিলেন। এখানেও চিড়া-মুড়ি পাননি তারা। যে-সব দোকানে এই পণ্য দুইটি ছিল সেসব ঘর এখন খালি পড়ে আছে।
কারওয়ান বাজারে মেসার্স মায়ের দোয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, “পুরো বাজারে কোথাও চিড়া-মুড়ি পাইবেন না। আজ দুপুর ১২ টা পর্যন্তও বাজারে চিড়া-মুড়ি ছিল। এরপর থেকে আর কারও কাছে নাই। আজ রাত ৮ টা থেকে ৯ টা বাজবে চিড়ার গাড়ি আসবে। মাল দরকার ১ হাজার টন, আর পাইতাছি মাত্র ৫০ টন। কেমনে কী করমু?”
তিনি বলেন, “তিন দিন ধরে দোকানে ক্রেতাদের চাপ অনেক বেশি। গাড়ি আসার সঙ্গে সঙ্গে সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক ক্রেতাকে খালি হাতে ফেরত পাঠানো লাগতেছে। কেউ কেউ অগ্রিম অর্ডারও দিচ্ছে। তাদেরকে মিল থেকে চিড়া-মুড়ির গাড়ি এলে দেওয়া যাবে।”
দাম কত বাড়ল
কারওয়ান বাজারে শনিবার দুপুর পর্যন্ত চিড়া-মুড়ি পাওয়া গেছে। দাম ছিল ৭০ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের সপ্তাহে দাম ছিল ৬০ টাকা করে।
একইভাবে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে গুড় বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে।
মূলত চিড়া-মুড়ির সঙ্গে দামে প্রভাব পড়েছে গুড়ের।
নিজে খাওয়ার জন্য আখের গুড় কিনতে এসেছেন শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, “ইচ্ছা কইরা দাম বাড়াইছে ভাই। আমি চিনি কম খাই, গুড় খাই বেশি। তাই সবসময় কিনি। এটার দাম আমার অজানা না। এখন চাহিদা বেশি তাই দাম বাড়াইয়া দিছে দোকানদাররা।”
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি কেজি চিড়া গত সপ্তাহেও ৫৬ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন ৬২ থেকে ৬৩ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এরপর পরিবহণ খরচে প্রতি কেজিতে ২ টাকা ধরা হয়। সে কারণে চিড়ার কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
কারওয়ান বাজারে বিকেলে আধা ঘণ্টায় বোতলজাত পানির চারটি ট্রাক দেখা গেছে। পানির ডিলারদের বেড়েছে ব্যস্ততা।
তেজগাঁও এলাকার কোনো পরিবেশকের কাছে আগে ১০০ কেইস বোতলজাত পানি আসলেও এখন দৈনিক আসছে ১৫০০ থেকে ১৬০০ কেইস।
আকিজ কোম্পানির বোতলজাত পানি ‘স্পা’ এর পরিবেশক মো. ফিরোজ আলম কারওয়ান বাজারে ট্রাক ভর্তি বোতলজাত পানি নিয়ে এসেছিলেন।
তিনি বলেন, “প্রতিটি বোতলের গায়ের রেট ৪০ টাকা। আর আমরা ডিলাররা ২৫ টাকায় ছেড়ে দেই প্রতিটি বোতল।”
দাম বেড়েছে মোমবাতিরও
বন্যা উপদ্রুত এলাকায় বিদ্যুৎ নেই বলে মোমবাতির চাহিদা আছে। ত্রাণ হিসেবে খাবারের পাশাপাশি এই উপকরণটাও কিনতে আসছে মানুষ।
ক্রেতারা বলছেন, আগের তুলনায় মোমবাতি প্রতিটি তিন থেকে চার টাকা বেড়ে গেছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় মোমবাতি, বিস্কুট ও খাওয়ার স্যালাইন কিনতে সব দোকানেই ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। তবে বেশিরভাগ দোকানিই মোমবাতি দিতে পারছেন না। যেসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে সেসবে আবার দাম আগের তুলনায় বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে এক ডজন মোমবাতির পাইকারি দাম ছিল ৭০ টাকা। এখন সেই মোমবাতি ৯০ টাকা দিয়েও কোম্পানি থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।
আকবর আলী মোমবাতি কিনতে এসে অতিরিক্ত দাম শুনে বলছেন, “ম্যাক্সিমাম দোকানে মোমবাতি শেষ। আর যে কয়েকটা দোকানে আছে দাম বেশি চায়।”
ভোক্তার অভিযানে দুই দোকানে জরিমানা
দুর্যোগের সময়ে কেউ যেন সুযোগ নিতে না পারে তাই সরকারি কঠোর তদারকির দাবি করছেন ক্রেতারা।
কারওয়ান বাজারে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, “সুযোগ সন্ধানীরা থেমে নেই। তারা চাহিদা বেশি হওয়ার সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন ভোক্তা অধিদপ্তরের কঠোর নজরদারি খুবই দরকার।”
বাজার তদারকি চলছে ও শনিবার কারওয়ান বাজারের দুই দোকানিকে ‘অসৎ উপায় অবলম্বনের দায়ে’ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানালেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, “আসলে কিছু ব্যবসায়ী চরম সুযোগসন্ধানী। তারা সুযোগ পেলেই দাম বাড়ায়।”