শাহবাগে লাঠিপেটা করল পুলিশ, মামলাও পুলিশই করল

মামলায় পুলিশের উপর হামলা, দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2022, 12:59 PM
Updated : 8 August 2022, 12:59 PM

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে ঢাকার শাহবাগে বাম ছাত্র নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভে লাঠিপেটার পর তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করেছে পুলিশ।

ঘটনার পরদিন সোমবার শাহবাগ থানায় এসআই পলাশ সাহা বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় পুলিশের উপর হামলা, দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

এজহারে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সহ-সভাপতি অনিক রায়কে। ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সোহেল, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমা, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি তৌফিকা প্রিয়া, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য শান্তা ও ছাত্র ফেডারেশনের জুবা মনিকে আসামি করা হয়েছে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে রোববার সন্ধ্যায় শাহবাগ মোড়ে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে উঠিয়ে দেয়। তখন বাম ছাত্র নেতা-কর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে।

পুলিশি হামলায় ২০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে দাবি করে এর প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিল করে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো।
এদিকে পুলিশ দাবি করে আসছে, বিক্ষোভকারীরাই তাদের উপর প্রথম চড়াও হয়েছিল এবং সেখানে দুজন পুলিশ সদস্যও আহত হন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা ‘বিনা অনুমতিতে বেআইনিভাবে’ শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করার নামে রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করেন। পুলিশ তাদের রাস্তার যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার অনুরোধ করে। কিন্তু তারা হাতে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেলসহ ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

বিক্ষোভকারীদের হামলায় দুজন পুলিশ আহত হয়েছে জানিয়ে এজহারে বলা হয়, আসামিদের লাঠির আঘাতে রমনা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার বায়েজীদুর রহমান, সহকারী কমিশনার (প্যাট্রল) বাহা উদ্দীন ভূঞা আহত হন।

Also Read: জ্বালানির দাম বৃদ্ধি: শাহবাগে বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিপেটা

“পরে পুলিশ নিজেদের জানমাল ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে লাঠিপেটা করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷ ঘটনাস্থল থেকে বিক্ষোভকারীদের ব্যবহৃত তিনটি বিভিন্ন আকারের বাঁশের লাঠি, সাতটি বিভিন্ন আকারের কাঠের লাঠি ও ১২টি ইটের টুকরা জব্দ করা হয়।”

ওসি মওদুত বলেন, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ‘দাঙ্গার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেলসহ পুলিশের কাজে বাধা দেওয়াসহ হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে গুরুতর রক্তাক্ত ও হাড়ভাঙা জখমের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

পুলিশের এই মামলা দায়েরের প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

এক বিবৃতিতে দলটির সহসভাপতি নতুন কুমার চাকমা হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “সরকার একদিকে জ্বালানি তেলের দাম অন্যায্য ও অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে সাধারণ জনগণের রুজি রোজগারের উপর আঘাত হেনেছে। অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চাইলে তাদের উপর শারীরিকভাবে পুলিশ দিয়ে আক্রমণ চালাচ্ছে।”

ইউপিডিএফ নেতা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমাসহ বাম ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘হয়রানিমূলক’ মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবিও ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার নিন্দা জানিয়েছে।

সিপিবি সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে বলেন, “যারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিনা উসকানিতে হামলা করে, আন্দোলনকারীদের আহত করে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করল, তার বিচার না করে উল্টো আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা করল। এটা সরকারের স্বৈরাচারী আচরণেরই প্রকাশ।”

পুলিশি হামলার প্রতিবাদ

শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো।

দুপুরে ‘প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ' ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে এ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শাহবাগ মোড় হয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শেষ হয়।

‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সাদিকুল ইসলাম সোহেল বলেন, “রোববার আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। আমাদের অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জনাই। এই ঘটনার প্রতিবাদে শিগগিরই আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।”

কর্মসূচিতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীসহ ৮ টি বাম ছাত্র সংগঠন অংশ নেয়।

সরকারের সমালোচনা করে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সাদিকুল বলেন, “একলাফে তেলের দাম এত পরিমাণ কোথাও বাড়ানো হয় না। আমরা দেখতে পাচ্ছি জনগণের উপর এই সরকার অলিখিত যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মুদ্রাস্ফীতির কারণে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। অথচ এদিকে সরকারের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
“আইএমএফ থেকে তারা (সরকার) দুই হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। অথচ পি কে হালদার একাই দশ বারো হাজার টাকা বিদেশে পাচার করেছে।”