মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে এসব তথ্য পাঠানো হয়েছে বলে জানান মুখপাত্র।
Published : 03 Dec 2023, 11:07 PM
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য সাংবাদিকদের পাঠিয়ে মন্ত্রণালয় আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিকল্প মুখপাত্র রফিকুল আলমকে এ প্রশ্ন করা হয়।
এর মাধ্যমে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে কি না-সেটা ‘জানা না থাকার’ দাবি করে তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে এসব তথ্য পাঠানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সিলেট-১ আসন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম রাজশাহী-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তাদের দলীয় মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও জমা দেওয়ার তথ্যের সচিত্র তথ্য সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে জানানো হয়েছিল।
এরপর সিলেটে নির্বাচনি এলাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠানের তথ্যও ওই হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ এবং ইমেইলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা।
সর্বশেষ শনিবার নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং কাউন্সিলরদের সঙ্গে মোমেনের মতবিনিময়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রকে প্রশ্ন রাখা হয়, “পররাষ্ট্রমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়া, টাইমলি জানানো হয়েছে। বা প্রচারণার বিষয়গুলো। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে গিয়েছে নাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বপ্রণোদিত হয়ে দিয়েছে? এটা নির্বাচন কমিশন থেকে অনুমোদন নিয়ে করছেন কি না।”
উত্তরে রফিকুল আলম বলেন, “প্রথম কথা হচ্ছে-তথ্য শেয়ার করা। এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। আপনি নিজস্ব ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারেন, কার সিদ্ধান্ত। তবে এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত।”
নির্বাচন কমিশনের অনুমতির বিষয়ে তিনি বলেন, “দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিয়ে এটা দেওয়া হচ্ছে কি না।
“আমি যে জিনিসটা বুঝতে পারি, এটা পাবলিক নলেজ। সেই জিনিস আবার বলার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি এখানে নেওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, এটা আমি নিশ্চিত না। যেটা আমরা সবাই দেখছি, আপনারা পত্রিকাতে লিখছেন, জানাচ্ছেন।”
আচরণবিধির বিষয়ে জানতে চাইলে মুখপাত্র রফিকুল উল্টো জানতে চান, আচরণবিধির কোন জায়গায় লঙ্ঘন হয়েছে?
কোনো প্রার্থী সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে প্রচার চালাতে পারবেন না, আচরণবিধির এমন তথ্য তুলে ধরলে তিনি বলেন, “এখানে প্রচার-প্রচারণা কোথায় হল? এটা শুধু সংখ্যা।”
মনোনয়পত্র দাখিল এবং প্রচার অনুষ্ঠানের খবর ইমেইলে জানানোর কথা জানালে তিনি বলেন, “এটা আমার জানা নাই। জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলুন।”
আচরণবিধিতে যা আছে
সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধির ‘সরকারি সুবিধাভোগী কতিপয় ব্যক্তির নির্বাচনি প্রচারণা সংক্রান্ত বাধা নিষেধ’ শীর্ষক ১৪ ধারায় বলা হয়েছে-
(১) সংসদের কোনো শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী কিংবা উক্ত মন্ত্রীদের পদমর্যাদা সম্পন্ন সরকারি সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন-পূর্ব সময়ের মধ্যে কোনো সফর বা নির্বাচনী প্রচারণায় যাইতে পারিবেন না:
বে শর্ত থাকে যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উক্ত নির্বাচনি এলাকার ভোটার হইলে তিনি কেবল ভোট প্রদানের জন্য উক্ত এলাকায় যাইতে পারিবেন।
(২) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনি এলাকায়, সংশ্লিষ্ট জেলায় বা অন্য কোথাও কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা উহার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাহাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচনি কাজে সরকারি প্রচার যন্ত্রের ব্যবহার, সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীগণকে ব্যবহার বা সরকারি যানবাহন ব্যবহার করিতে পারিবেন না এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ বা ব্যবহার করিতে পারিবেন না।
এরই মধ্যে শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেইসবুক পেইজে নির্বাচন কমিশনে জমা পড়া মনোনয়নপত্রের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।
‘ব্যাপক উৎসাহ এবং উৎসবের মধ্যে’ ২ হাজার ৭১১টি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কথা তুলে ধরা হয় ওই পোস্টে।
বিএনপির সাবেক ৩৩ নেতাসহ ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার তথ্য দিয়ে সেখানে বলা হয়, “এটি আসন্ন নির্বাচনের অংশগ্রহণমূলক প্রকৃতির কথা তুলে ধরছে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, “বিএনপির একটি অংশ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পরিবর্তে ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পত্তি পোড়ানো, অবরোধ, ধর্মঘট ও হরতালের পথ বেছে নিয়েছে এবং আসন্ন নির্বাচন বর্জন করছে (যদিও তাদের অনেক নেতা এতে অংশ নিচ্ছে)।”
ফেইসবুকের ওই পোস্টকে উদাহরণ হিসেবে টেনে এক সাংবাদিক জানতে চান, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি ইসির পিআরও হিসেবে করছে কি না?”
উত্তরে মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডলগুলো, এখানকার বিদেশি মিশনগুলো সক্রিয়ভাবে ফলো করে।
“ফেইসবুকে বা অন্য কোনো সোশাল মিডিয়াতে তথ্য শেয়ার করার পেছনে অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে, আমাদের যারা টার্গেট অডিয়েন্স, তাদেরকে দ্রুত রিচ আউট করা। এর বাইরে কিছু নয়।”