নতুন যমুনা রেলসেতু চালুর সঙ্গে সঙ্গে এদিন থেকেই বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হচ্ছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
Published : 11 Feb 2025, 11:44 PM
দীর্ঘ অপেক্ষার পর পরীক্ষামূলক যাত্রা শেষে যমুনা রেল সেতুতে চালু হচ্ছে যাত্রীবাহী ট্রেন; এর মধ্যে দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ইতি ঘটছে ট্রেন চলাচলের।
বুধবার সকাল থেকে নিয়মিত ট্রেন চলবে নতুন তৈরি এ রেল সেতুতে। রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রথম পাড়ি দেবে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে উত্তর পাশে অবস্থিত এ সেতু দিয়ে।
প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুরর রহমান বলেন, সকাল ১০টায় ওই ট্রেন যমুনা রেল সেতু অতিক্রম করার সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কাল (বুধবার) সকাল ৭টায় সিল্কসিটি ট্রেন ছেড়ে আসবে, ১০টার দিকে ওই ট্রেনটি সেতু অতিক্রম করবে। পর্যায়ক্রমে সিডিউল অনুযায়ী বাকি ট্রেনগুলো যাবে।”
৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যমুনা রেলসেতুতে দুটি লাইন থাকলেও প্রথমে একটি লাইন দিয়েই উভয়দিকে ট্রেন চলাচল করবে বলে জানান তিনি।
মাসউদুরর রহমান বলেন, কাল ঢাকা থেকে যেতে ডান পাশের লাইন, অর্থাৎ সেতুর উত্তর পাশের লাইনটি দিয়ে ট্রেন চলবে। আপাতত একটি লাইনে উভয়দিকে ট্রেন চলবে।
তবে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। যোগাযোগ উপদেষ্টাসহ কর্মকর্তারা ওই অনুষ্ঠানে থাকবেন। ওই দিন থেকে দুই লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে যোগ করেন তিনি।
নতুন এ রেল সেতু চালুর সঙ্গে সঙ্গে বুধবার থেকেই বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হচ্ছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়।
বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর ওপর উজানে আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতু নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন করে সরকার। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর রেলসেতুরটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।
প্রথমে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা নির্ধারিত হলেও পরে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন এসেছে দেশীয় উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-জাইকা। দেশের বৃহত্তর এ রেল সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের এ রেলসেতু ব্যবহারের জন্য ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হয়।
প্রকল্পের শুরুতে এই সেতুর নাম ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের ডিসেম্বরে সেতুর নাম পাল্টে যমুনা রেল সেতু রাখা হয়।