“আমরা প্রতিবেশি দেশটিতে নানা ধরনের বিরূপ পরিস্থিতি উদ্ভব হতে দেখেছি। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরকারিভাবে বক্তব্য দেয় না,” বলেন রফিকুল আলম।
Published : 09 Feb 2025, 07:31 PM
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙার ঘটনায় ভারত সরকারের দেওয়া বক্তব্যকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত’ বলছে বাংলাদেশ সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেছেন, “আমরা প্রতিবেশী দেশটিতে নানা ধরনের বিরূপ পরিস্থিতি উদ্ভব হতে দেখেছি। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো বক্তব্য দেয় না। অন্যদের কাছ থেকেও বাংলাদেশ একই ধরনের আচরণ আশা করে।”
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ৫ অগাস্ট ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই ঘটনার ছয় মাস পূর্তির দিন ভারতে বসে শেখ হাসিনার অনলাইনে ভাষণ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আগুন দেওয়া হয় ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-লুটপাট হয়।
বাংলাদেশ সরকার এ ধরনের হামলা-ভাঙচুর থামানোর আহ্বান জানালেও সেজন্য শেখ হাসিনাকেই দায়ী করেছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলেছে, “পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।”
বৃহস্পতিবার ঢাকায় ভারতের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একই বার্তা দেয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, “ভারতকে আমরা লিখিতভাবে অনুরোধ করেছি যে, শেখ হাসিনাকে বিরত রাখার জন্য, যেন উনি এ ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি না দেন। এটা বাংলাদেশের বিপক্ষে যাচ্ছে। আমরা এটার জবাব পাইনি এখনও।
“তাদের কয়েকদিনের কার্যকলাপের কারণে আমরা আজ (বুধবার) আরেকবার প্রতিবাদপত্র দিয়েছি। হাই কমিশনার এই মুহূর্তে নেই, ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে ডেকে তার হাতে প্রতিবাদপত্র দেওয়া হয়েছে। আমরা আবারও অনুরোধ করেছি, তাকে যেন বিরত রাখা হয়।”
অন্যদিকে ভারত বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে বর্ণনা করে বিবৃতি দেয়। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “হামলা-ভাঙচুরের এই ঘটনার অবশ্যই নিন্দা জানানো উচিৎ।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “বাঙালির পরিচয় গড়ে দেওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল্য যারা দেন এবং এ নিয়ে যারা গর্ববোধ করেন, তাদের প্রত্যেকেই এই বাসভবনের গুরুত্ব বোঝেন।”
ওই বিবৃতি দেওয়ার পরদিন নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে তলব করে দিল্লির অবস্থান তুলে ধরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সেখানে বলা হয়, “এটা খুবই দুঃখজনক যে, বাংলাদেশ সরকারের নিয়মিত বিবৃতিগুলোতে ভারতকে ক্রমাগত নেতিবাচকভাবে চিত্রায়িত করা হচ্ছে; অভ্যন্তরীণ সুশাসন প্রশ্নে তারা আমাদের দোষারোপ করে যাচ্ছে। বাস্তবিক অর্থে বাংলাদেশের এসব বিবৃতিই বিরাজমান নেতিবাচক পরিস্থিতির জন্য দায়ী।”
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে যে মন্তব্যগুলোর কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো তিনি ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে করেছেন, যাতে ভারতের কোনো ভূমিকা নেই। এগুলোকে ভারত সরকারের অবস্থানের সঙ্গে মেলানো হলে তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ইতিবাচক কিছু বয়ে আনবে না।
“ভারত সরকার যখন পরস্পরের জন্য মঙ্গলজনক সম্পর্কের প্রচেষ্টা চালাবে, তখন আমরা আশা করব, পরিস্থিতি ঘোলাটে না করে বাংলাদেশও একই ধরনের মনোভাব দেখাবে।”
ভারতের এসব বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রোববার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান পুনরায় তুলে ধরেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বক্তব্য ‘অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত’।
“আপনারা জানেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভারতে অবস্থান করে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন, যা বাংলাদেশের জনগণ ভালোভাবে নিচ্ছেন না।
“গত ৫ ফেব্রুয়ারি তার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এর মধ্যে অবস্থান স্পষ্ট করেছে।”
দিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনারকে তলবের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে তলবের বিষয়ে “কোনো মন্তব্য করতে পারব না।”
আরও পড়ুন-
দিল্লির কড়া জবাব, উল্টো দুষল ইউনূস সরকারকে
ধানমন্ডি ৩২: বেজমেন্টের পানি সরিয়ে মিলল না কিছুই