“হামলা-ভাঙচুরের এ ঘটনার অবশ্যই নিন্দা জানানো উচিৎ।”
Published : 07 Feb 2025, 01:04 AM
ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে অভিহিত করেছে ভারত।
বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেন, “হামলা-ভাঙচুরের এই ঘটনার অবশ্যই নিন্দা জানানো উচিৎ।”
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে হামলা-ভাঙচুরের বিষয়ে সংবাদমাধ্যম থেকে আসা প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় তারা এ বিবৃতি দিয়েছে।
বিবৃতিতে জয়সওয়াল বলেন, “দখলদারিত্ব ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠা শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাসভবনটি ৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) ধ্বংস করা হয়, যা দুঃখজনক।
“বাঙালির পরিচয় গড়ে দেওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল্য যারা দেন এবং এ নিয়ে যারা গর্ববোধ করেন, তাদের প্রত্যেকেই এই বাসভবনের গুরুত্ব বোঝেন।”
Our response to media queries regarding destruction of the historic residence of Sheikh Mujibur Rehman⬇️
— Randhir Jaiswal (@MEAIndia) February 6, 2025
🔗 https://t.co/iXyaihBjgq pic.twitter.com/ykekfByvke
এদিকে দিল্লি থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যকে ‘মিথ্যা ও উস্কানিমূলক’ অভিহিত করে এ ঘটনায় এদিন ঢাকায় ভারতের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ঢাকায় ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে তলব করে প্রতিবাদপত্র হস্তান্তরের কথা পরে বিফ্রিংয়ে তুলে ধরেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “ভারতকে আমরা লিখিতভাবে অনুরোধ করেছি যে, শেখ হাসিনাকে বিরত রাখার জন্য, যাতে করে উনি এ ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি না দেন। এটা বাংলাদেশের বিপক্ষে যাচ্ছে। আমরা এটার জবাব পাইনি এখনও। আমরা আজকে আবার…তাদের কয়েকদিনের কার্যকলাপের কারণে আমরা আরেকবার তাদেরকে প্রতিবাদপত্র দিয়েছি।”
প্রতিবাদ পাঠানোর কারণ ব্যাখ্যা করে উপদেষ্টা বলেন, “কারণ, তার এসব বক্তব্য প্রধানতই মিথ্যা। তিনি উল্লেখ করছেন, সেটা অস্থিতিশীলতার উস্কানি দিচ্ছে বাংলাদেশে। এ কারণে আমরা বলেছি, এই চর্চা বন্ধ করার জন্য তারা যেন ব্যবস্থা নেন।”
শেখ হাসিনার সরকার পতনের ছয় মাস পূর্ণ হয় গত বুধবার। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দেয়, রাতে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা, যিনি ৫ অগাস্ট পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতের দিল্লিতে আছেন।
বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে, যাদের নেতৃত্বে গত বছরের জুলাই-অগাস্টের গণ অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছিল।
সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ-বিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।”
পরে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফেইসবুকে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, “আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।”
এর আগেই বুধবার বিকেলে আলোচিত ‘কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’ ইলিয়াস হোসাইন ও পিনাকী ভট্টাচার্য ফেইসবুকে ‘ধানমণ্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন।
সেই আহ্বানে রাত ৮টা থেকেই বিপুল সংখ্যক মানুষ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জড়ো হয়। এক পর্যায়ে জনতা গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে তারা। লাঠিসোঁটা ও শাবল হাতে ভাঙচুরে যোগ দেন অনেকে। জানালার গ্রিল, কাঠ, ফটকের অংশ ভেঙে নিয়ে যেতে দেখা যায় কাউকে কাউকে।
অনেক ইতিহাসের সাক্ষী ওই বাড়িতে গত বছর ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন আগুন দেওয়া হয়েছিল। বুধবার ব্যাপক ভাঙচুরের পর ভেতরে পোড়ার মত যা কিছু আছে, তাতে ফের আগুন দেওয়া হয়। এসময় নারিকেল গাছের পাতাও জ্বলতে দেখা যায়। আগুন জ্বলতে দেখা যায় ৩২ নম্বরের ওই বাড়ির পাশের একটি ভবনেও।
ওই বাড়ি ঘিরে হাজার তিনেক মানুষের বিক্ষোভের মধ্যে রাত সোয়া ১১টার দিকে ক্রেন ও এক্সক্যাভেটর দিয়ে বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হয়। এরপর সারারাতে ভবনটির অর্ধেকের বেশি ভেঙে ফেলা হয়।
এসব কর্মসূচির কারণে ধানমণ্ডি এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলা হলেও রাতে রাস্তার ওপর দুটো পুলিশ ভ্যান ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোনো অবস্থান দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: