কোথাও খুঁটি উপড়ে পড়েছে, আবার কোথাও বিতরণ লাইন ছিঁড়ে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় মেরামত প্রক্রিয়া শনিবারে গড়াবে বলে আভাস দিয়েছেন বিদ্যুৎকর্মীরা।
Published : 17 Nov 2023, 10:23 PM
ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র আঘাতে খুলনা থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত উপকূলের বিস্তীর্ণ জনপদ ১২ ঘণ্টার বেশি সময়ের জন্য বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
কোথাও খুঁটি উপড়ে পড়েছে, আবার কোথাও বিতরণ লাইন ছিঁড়ে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় মেরামত প্রক্রিয়া শনিবারে গড়াবে বলে আভাস দিয়েছেন বিদ্যুৎকর্মীরা।
পিজিসিবির নিয়মিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুক্রবার বিকাল ৫টায় সারাদেশে ৪ হাজার ৭৮৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছিল। আগের দিন একই সময়ে বিদ্যুতের ব্যবহার ছিল ১০ হাজার ২৯১ মেগাওয়াট।
অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দক্ষিণাঞ্চল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় দেশের মোট চাহিদা ৫৩ শতাংশ কমে যায়।
ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে শুক্রবার বেলা ১টার দিকে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’। পরের দুই ঘণ্টায় বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে বেলা ৩টার দিকে তা পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, পটুয়াখলীতে বিকাল ৩ টা ৪০ মিনিটে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১০২ কিলোমিটার উঠেছিল।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই উপকূলীয় এলাকায় ভারী বর্ষণ শুরু হয়। তখনই নোয়াখালীর কিছু এলাকার বিদ্যুৎ চলে যায়। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে চলে যাওয়া বিদ্যুৎ শুক্রবার রাতেও ফিরে আসেনি। ফলে এসব এলাকায় মোবাইল ফোনের চার্জ দেওয়া, পানি সরবরাহ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।
তবে ঝড়ের তীব্রতা কমে আসায় শুক্রবার বিকালেই খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে বলে জানান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পরিচালন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মোহা. শামছুল আলম।
তিনি রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুপুরের দিকে ঝড়ের কারণে খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠী, পটুয়াখালী, ভোলা অঞ্চলের বড় একটি বিতরণ অঞ্চলের সংযোগ বন্ধ রাখতে হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হওয়ায় বিকাল নাগাদ সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
শহরাঞ্চলের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও গ্রামাঞ্চলে পল্লী বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কোম্পানির স্থানীয় সমিতিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নোয়াখালী অঞ্চলে পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ১৬ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন রয়েছে যার অধিকাংশই বন্ধ। অনেক এলাকায় খুঁটি পড়ে গেছে, অনেক জায়গায় একটি-দুটি খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে কয়েক কিলোমিটার বিতরণ লাইন অকেজো হয়েছে।
“আমরা এখনও মেরামতের মধ্যেই আছি। পুরোপুরি মেরামত শেষ করতে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।”
নোয়াখালীর একটি উপশহরের বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। ফলে ফ্রিজে থাকা খাবার নষ্ট হচ্ছে, বাসার পানি সরবরাহ ব্যবস্থাসহ সবকিছু ব্যহত হচ্ছে।
পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার তুষার কান্তি মণ্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখানে অনেক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুপুরের দিকে তিন-চার ঘণ্টার জন্য প্রায় পুরো বিতরণ অঞ্চলই বন্ধ ছিল। রাতের মধ্যে হয়ত ৫০ ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরিয়ে আনা যাবে। গাছপালা পড়ে অনেক পোল ভেঙে গেছে। রাতের মধ্যে অনেক এলাকায় আমরা পৌঁছাতেই পারিনি। অনেক এলাকার খবরও আমাদের কাছে আসেনি। রাতে ঝড় থামলেও বৃষ্টি অব্যাহত আছে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মকর্তা দেবাশীস চক্রবর্তী জানান, ঝড়ের কারণে অনেক এলাকায় বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিকাল পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র নিরূপন করতে পারেননি। তবে এরই মধ্যে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরিয়ে আনা গেছে।