এদিন রাত পৌনে আটটার দিকে বৃষ্টি নেমেছে নেত্রকোণাতে।
Published : 20 Apr 2023, 09:46 PM
আগের কয়েকদিনের মতো আবহাওয়ার বার্তায় দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টির আভাস থাকার মধ্যে উত্তাপে আবার সব জায়গাকে ছাড়িয়ে গেছে চুয়াডাঙ্গা; সেখানে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪২.৮ ডিগ্রিতে৷
বৃহ্স্পতিবার টানা তাপপ্রবাহের আগের ধারা বজায় রেখে রাজশাহীতে আগের কয়েকদিনের মতো গরম অব্যাহত রয়েছে। এদিন সেখানে থার্মোমিটারে পারদ উঠেছে ৪২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে চার দিনের মাথায় আবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় রাজশাহীকে পেছনে ফেলেছে চুয়াডাঙ্গা।
গত সোমবার (১৭ এপ্রিল) পাবনার ঈশ্বরদীতে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, যা ছিল পাঁচ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে টানা সপ্তাহজুড়ে চুয়াডাঙ্গা জেলায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পাওয়া যাচ্ছিল।
এরপর থেকে দেশজুড়ে তাপমাত্রা পরিমাপের হিসাবে থার্মোমিটারে পারদ কিছুটা কমলেও গরমের অসহনীয় ভাব কমেনি। অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে জনজীবন। বৃষ্টির আকঙ্খা তীব্র হচ্ছে। আবহাওয়ার বার্তায় কোথাও কোথাও বৃষ্টির আভাসও থাকছে। এর মাঝে সিলেটে বৃষ্টি নামলেও তা স্বস্তি দিতে পারেনি দেশবাসীকে।
বৃহস্পতিবারও প্রার্থিত সেই বৃষ্টির পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এরমধ্যেই এদিন রাত পৌনে আটটার দিকে বৃষ্টি হয়েছে নেত্রকোণাতেও। সেখানকার বাসিন্দারা দেখা পেয়েছেন স্বস্তির বৃষ্টির; বইছে দমকা হাওয়াও।
এদিন সন্ধ্যার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ছাড়াও ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমলেও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে আবহাওয়ার বার্তা বলছে।
তবে গরমের তীব্রতা কমছে না। ঢাকাসহ দেশজুড়ে গরম হাওয়ায় অস্বস্তিকর অনুভূতি হচ্ছে আগের কয়েকদিনের মতোই। ঘরের বাইরে গেলেই অসহনীয় তাপে শরীরে জ্বালাপোড়া ভাব হচ্ছে। তপ্ত আবহাওয়ায় টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়ছে।
এমন অবস্থায় বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় আবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই হয়েছে। এ জেলা ও রাজশাহীসহ অন্তত পাঁচ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে।
তবে ঢাকায় থার্মোমিটারের পারদ কিছুটা কমে নেমে এসেছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যদিও তা রাজধানীবাসীকে আবহাওয়ার খরতাপ থেকে নিস্তার দিতে পারেনি। অসহনীয় গরমে আগের মতোই নাভিশ্বাস রাজধানীবাসীর।
ঈদের ছুটিতে ঢাকা ফাঁকা হলেও প্রখর রোদের আঁচ থেকে রক্ষা মিলছে না। বাড়িমুখী মানুষ বাইরের উত্তাপকে উপেক্ষা করেই ভিড় করছেন বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন ও লঞ্চ ঘাটে।
গরমে ত্রাহি অবস্থার মধ্যে রিকশাচালক জানে আলমের মত সবার প্রত্যাশা এখন বৃষ্টির। মিরপুর ১০ নম্বরে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা এ চালক বলেন, "দিনের বেলা অনেক গরম। বিকেল থেকে একটু বাতাস ছাড়ছে, এখন ভাল্লাগতেছে। বৃষ্টি হইলে দুনিয়া ঠান্ডা হইবো।"
ঈদের কেনাকাটায় বের হওয়া হাদিস মিয়ার কণ্ঠেও বৃষ্টির প্রত্যাশা।
বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে ৪২ দশমিক ৫, রংপুরে ৩৭ দশমিক ৪, ময়মনসিংহে ৩৫ দশমিক ৪, সিলেটে ৩৭ দশমিক ৪, চট্টগ্রামে ৩৭ দশমিক ৩ ও বরিশালে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
উত্তাপে চুয়াডাঙ্গাকে ছাড়াল রাজশাহী, আরও গরম ঈশ্বরদী
দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ঈশ্বরদীতে
সবশেষ আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।
তাপপ্রবাহের বিষয়ে এটি বলছে, রাজশাহী, পাবনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলাগুলোর ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বগুড়া, নওগাঁ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলাসহ এবং ঢাকা ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
গত সোমবার পাবনার ঈশ্বরদীতে এ মৌসুমের সর্বোচ্চ ও পাঁচ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করার দুদিন আগে শনিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। তারও আগে ১৯৯৫ সালে এবং ২০০২ সালে দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল সোমবারের সমান, ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দেশের ইতিহাসে এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়ামে, দেশে আবহাওয়ার রেকর্ড রাখা শুরুর পর এটাই সর্বোচ্চ।