বইমেলায় স্টল বন্ধ রাখার কারণ হিসেবে ‘নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার’ কথা বলছেন ‘সব্যসাচীর’ প্রকাশক শতাব্দী ভবের স্ত্রী।
Published : 11 Feb 2025, 11:00 PM
ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রি ঘিরে উত্তেজনার পর থেকে অমর একুশে বইমেলায় বন্ধ রয়েছে ‘সব্যসাচী’ প্রকাশনীর স্টল।
মঙ্গলবার বিকালে মেলায় দেখা যায়, স্টলটির সামনের অংশ একটি ত্রিপলে ঢেকে রাখা হয়েছে।
ফের ‘উত্তেজনা ও হামলার’ আশঙ্কা থেকে স্টল বনধ রাখার কথা বলছেন প্রকাশক শতাব্দী ভবের স্ত্রী সানজানা মেহরান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “স্টল বন্ধ রেখেছি কারণ আমরা আসলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা শুনেছি কাল (সোমবার) যারা ‘হামলা’ করেছে, তারা আবারও ‘হামলা’ করতে পারে।
“শুনেছি যাত্রাবাড়ীতে তারা আমাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনও করেছে। সেই শঙ্কার জায়গা থেকেই আমরা স্টলটা বন্ধ রেখেছি।”
তসলিমা নাসরিনের বই রাখায় মেলার দশম দিন সোমবার সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণে ‘সব্যসাচী প্রকাশনার’ স্টলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ‘তৌহিদী জনতা’র নামে একদল লোক সেখানে চড়াও হন।
তারা স্টলটিতে গিয়ে প্রকাশককে ঘিরে ধরে স্লোগান দিতে থাকলে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ সব্যসাচীর প্রকাশক শতাব্দী ভবকে বইমেলায় তাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নিয়ে যায়।
পরে পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষও ঘিরে রাখে উত্তেজিত ওই ব্যক্তিরা। এই ঘটনায় তীব্র সমালোচনা হলে সোমবার রাতেই ওই স্টলে ‘বিশৃঙ্খলার’ ঘটনায় দোষীদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বলা হয়, “এ ধরনের বিশৃঙ্খল আচরণ বাংলাদেশে নাগরিকের অধিকার এবং দেশের আইন উভয়ের প্রতিই অবজ্ঞা প্রদর্শন করে।”
ঘটনা তদন্তে মঙ্গলবার সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলা একাডেমি। কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার মেলায় প্রতিদিনের মতই স্বাভাবিক চিত্র দেখা গেছে। আগের চেয়ে ভিড়ও বেড়েছে। স্টল ঘুরে ঘুরে বই দেখার পাশাপাশি পছন্দের বই কিনছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা।
এদিন মেলায় গাজীপুর থেকে আসা রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেলায় মব তৈরি করে কারও স্টল বন্ধ করাটা আমার কাছে অহেতুক লেগেছে। যার ইচ্ছে হবে বইটা কিনবে। ইচ্ছে না হলে কিনবে না। এভাবে দলবেঁধে স্টল বন্ধ করে দেওয়াটা বাজে উদাহরণ হল।”
আগারগাঁও থেকে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন সরকারি চাকরিজীবী অন্তু হাওলাদার। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “স্ত্রীকে নিয়ে এলাম। বেশ ভালোই ভিড় আছে। কিছু বই কিনলাম। সে ফিকশন পছন্দ করে, তাকে কিছু ফিকশন কিনে দিলাম। আমি আবার নন-ফিকশনের পোকা, তাই কিনলাম।”
বাড্ডা এলাকার অনামিকা সেন এসেছিলেন ছেলেকে নিয়ে। এর আগেও তিনি মেলায় এসেছিলেন।
অনামিকা বলেন, “আজ আসলাম বাচ্চাটাকে দেখাতে। বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। ও বই পড়তে ভালোবাসে। তাই কিছু বই কিনে দিলাম।”
মঙ্গলবার মেলার ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজের বেড়ে ওঠা আর জীবনযাপনের গল্প শোনান সম্প্রতি এবার একুশে পদকের জন্য মনোনীত আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন ও মামুন সারওয়ার।
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'আদর্শায়িত কল্পলোক ও শাহেদ আলীর দ্বিধাচিত্ত মন' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিবলী আজাদ। আলোচনায় অংশ নেন মোস্তাক আহমাদ দীন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন কবি মুস্তাফা মজিদ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন শফিকুল ইসলাম বাহার ও আনজুমান আরা।