থার্ড টার্মিনালে পৌঁছার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ১০ মিনিট ধরে হেঁটে বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেন।
Published : 07 Oct 2023, 12:14 PM
উন্নত যাত্রীসেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে শুরু হলো দেশের প্রধান বিমানবন্দর শাহজালালের থার্ড টার্মিনালের যাত্রা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সকালে দৃষ্টিনন্দন এই টার্মিনালের ‘সফট ওপেনিংয়ের’র সূচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরপরই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট আনুষ্ঠানিকভাবে থার্ড টার্মিনাল ব্যবহার করে ঢাকা ছেড়ে যায়।
টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হতে আরো একবছর লাগবে। আপাতত সীমিত পরিসরে এই টার্মিনালের কাজ চলবে, তাই একে ‘সফট ওপেনিং’ বলছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বেবিচক।
সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী থার্ড টামির্নালে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। শিশুদের একটি দল এ সময় নৃত্য পরিবেশন করে। পরে প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে ছবি তোলেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ১০ মিনিট ধরে হেঁটে টার্মিনালের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।
প্রথমেই তিনি প্রবেশ করেন ইমিগ্রেশন কাউন্টারে, সেখানে দায়িত্বরত ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। পরে প্রি-বোর্ডিং সিকিউরিটিজ স্ক্রিনিং জোন পরিদর্শন করেন।
এরপর মুভিং ওয়াকওয়ে দিয়ে থার্ড টার্মিনালের সম্পূর্ণ কাজের স্থিরচিত্র দেখতে ফটো গ্যালারি পরিদর্শন করেন এবং বোর্ডিং পাস এরিয়ায় যান। পরে উদ্বোধনী মঞ্চে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়েছে, যাত্রী সেবার আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার স্বার্থে নির্মাণাধীন এ টার্মিনালের হ্যান্ডলিংয়ের কাজটি দেওয়া হয়েছে একটি জাপানি কোম্পানিকে।
তবে আপাতত অন্য দুটো টার্মিনালের মত এ টার্মিনালেও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
এর আগে ‘সফট ওপেনিংয়ের’ প্রস্তুতি হিসেবে গত সোম ও বৃহস্পতিবার নির্মাণাধীন এ টার্মিনালের কিছু অংশ ব্যবহার করে দুটি উড়োজাহাজে যাত্রী ওঠানামা করেছে।
২০১৯ এর ২৯ ডিসেম্বর থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
তিন তলা থার্ড টার্মিনালের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা বছরে এক কোটি ৬০ লাখ। এই টার্মিনালের মোট ফ্লোর স্পেস ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার।
টার্মিনালটির দেয়াল আর ছাদ রাঙানো হয়েছে ষড়ঋতুর ছয়টি রঙের বিশেষ টাইলস দিয়ে। বিমানবন্দর থেকে বের হয়েই চোখে পড়বে জাতীয় ফুল শাপলা, জলে ভাসা পদ্ম।
নান্দকিতার পাশাপাশি যাত্রীদের জন্য অনেকগুলো সেবা পাওয়ার সুযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে নতুন টার্মিনালটি।
প্রকল্পের সঙ্গে একটি এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কার্গো টার্মিনাল, ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্কিং সুবিধার এপ্রোন করা হয়েছে। আগে শাহজালালে পার্ক করা যেত ২৯ টা উড়োজাহাজ।
টার্মিনালটিকে 'মাল্টি মডাল ট্রান্সপোর্টেশনের' সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। হাইওয়ে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রেলওয়ে যে কোন উপায়ে যাত্রীরা এখানে আসতে যেতে পারবেন।
ওই এলাকা দিয়ে যে মেট্রোরেলের যে লাইন হতে যাচ্ছে সেটিও যুক্ত হবে এই টার্মিনালে। এতে থাকছে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং, যেখানে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি থাকতে পারবে।
নতুন টার্মিনালের যাত্রীদের জন্য ১ হাজার ৩০০ বর্গমিটার আয়তনের একটি কাস্টমস হলও থাকবে। সেখানে থাকবে ৬টি চ্যানেল। এতে লাগেজ বেল্ট থাকবে ১৬টি, চেক ইন কাউন্টার থাকবে ১১৫টি। এর মধ্যে ১৫টিতে থাকবে অটোমেটেড চেকইন কাউন্টার। এর ফলে ইমিগ্রেশনের লম্বা লাইন আর দেখা যাবে না।
টার্মিনালটিতে ইমিগ্রেশনের কাউন্টার থাকছে ১২৮টি, এর মধ্যে অটোমেটেড ১৫টি।
এসব কাউন্টারের মধ্যে বিদেশগামী যাত্রীদের ইমিগ্রেশন হবে ৬৬টি কাউন্টারে। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য থাকছে ৫৯টি। ভিভিআইপি ইমিগ্রেশন কাউন্টার হিসেবে থাকছে তিনটি।
প্রথম পর্যায়ে এই টার্মিনালের সঙ্গে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ যুক্ত থাকবে। প্রকল্পের বেঁচে যাওয়া অর্থ দিয়ে আরও ১৪টি বোর্ডিং ব্রিজ তৈরির কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।