বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব সরকার আমিন বলেন, "এবার সিসিমপুর নিজ থেকেই আসেনি।”
Published : 07 Feb 2025, 03:45 PM
কেরানীগঞ্জ থেকে বাবার সঙ্গে একুশে বইমেলায় এসেছে নার্সারি শ্রেণিতে পড়ুয়া মেহরিন সাবা, শিশুচত্বরে এসেই জানতে পারলো এবার নেই 'সিসিমপুর মঞ্চ'। বইমেলায় আসবে না শিকু, ইকরি, হালুম, টুকটুকিরা। এজন্য বেশ মন খারাপ তার। মন ভালো করতে মেলায় ঘুরে ঘুরে বই কিনেছে ছোট্ট পাঠক সাবা।
সাবার বাবা নাসিম আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "গতবারও তো মেয়েকে নিয়ে মেলায় এসেছিলাম। সিসিমপুর মঞ্চের আয়োজনে খুব আনন্দ পেয়েছিল। এবার এখানে এসে জানলাম সিসিমপুর থাকবে না। এজন্য আমার মেয়ের মন খারাপ হয়েছে।"
কী বই কিনবে? জবাবে সাবা বললো, "রঙের বই কিনব। পড়ার বই, ছড়ার বইও কিনবো।"
এবার শিশুচত্বরে সিসিমপুর মঞ্চ নেই কেন? প্রশ্নে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব সরকার আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এবার সিসিমপুর নিজ থেকেই আসেনি।"
শিশুচত্বরে 'কিচিরমিচির' নামে সিসিমপুরের একটি বইয়ের একটি স্টল আছে। সেখানে কথা হয় স্টলের বিক্রয়কর্মী মানজার হোসাইনের সঙ্গে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সিসিমপুরের অর্থ দেয় যে দাতা সংস্থা, সেখান থেকে টাকা পাওয়া যায়নি। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় সিসিমপুর এবার আয়োজনটি করতে পারেনি।"
বিগত কয়েক বছর ধরে একুশে বইমেলার শিশুচত্বরকে মাতিয়ে রাখে সিসিমপুরের ইকরি, হালুম, টুকটুকিরা।
তবে এবার এই আয়োজনটি না থাকায় সাবার মত অনেক শিশুর মন খারাপ হয়েছে। ইকরি, টুকটুকিদের উপস্থিতি ছাড়া যেন অনেকটাই প্রাণহীন শিশুচত্বর।
শুক্রবার বইমেলার ষষ্ঠ দিন। মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায়, যা চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মেলায় ছিল 'শিশুপ্রহর'। অনেক বাবা-মা তাদের শিশু সন্তানকে নিয়ে মেলায় আসেন শিশুপ্রহরে। সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দেন বইয়ের দুনিয়ায়, কিনে দেন পছন্দের বই।
এবার মেলার শিশুচত্বরটি আরো রঙিন করে সাজানো হয়েছে। বাংলা একাডেমির উল্টোদিকের গেইট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করলেই হাতের ডান দিকে চোখে পড়বে শিশুচত্বর লেখা গেইট।
ভেতরে যেতে শিশুদের দেখা যায় ছোটাছুটি করতে, তবে এদিন তুলনামূলক ভিড় কম দেখা গেছে। বেশিরভাগ স্টলেই নেই নতুন বই। প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে মেলা জমবে কী না সেই সংশয়ে তারা নতুন বই কম আনছেন।
জুলাই অভ্যুথানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মেলা কেমন হবে, তা নিয়ে সংশয়ে থাকায় কোনো কোনো প্রকাশক বিনিয়োগ করতে শঙ্কায় ছিলেন বলে জানা গেছে।
পঙ্খীরাজ এবার এনেছে দেওয়ান আজিজের সম্পাদনায় ‘ছোটদের সেরা জোকস’৷ সৈয়দ আবু সুফিয়ানের 'ভূতের বাড়ি' নামে নতুন বই।
পঙ্খীরাজের প্রকাশক দেওয়াজ আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এবার মেলা কেমন হবে, তা নিয়ে তো একটু দ্বিধায় ছিলাম। বই প্রকাশ করতে হলে তো বিনিয়োগ লাগে। তবে শেষ দিকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এজন্য সবগুলো বই এখনো আনতে পারিনি। আমরা ৪টির মত নতুন বই এনেছি। সব মিলিয়ে ১০/১২টা নতুন বই আনার পরিকল্পনা আছে।"
ময়ূরপঙ্খী এনেছে তাহমিনা রহমানের 'চকলেটের পাহাড়', হাসান হাফিজের 'পিঁপড়াবাহিনী ও ঘাসফড়িং', ফারজানা তন্নীর 'নতুন বন্ধু', রাজিয়া সুলতাবার 'বাবির গাড়ি বুম বুম'।
শিশুচত্বরে আছে শব্দশিল্প প্রকাশন, ঝিঙেফুল, শিশুরাজ্য, ফুলঝুড়ি, পঙ্খীরাজ, শিশুবেলা, চিরন্তন প্রকাশ, শৈশব প্রকাশ, কাকাতুয়াসহ বিভিন্ন প্রকাশনী।
আছে বাংলা একাডেমির শিশুতোষ বইয়ের স্টলও। তবে একাডেমির স্টলের বিক্রয়কর্মীরা জানিয়েছেন এবারের মেলায় এখনো তারা শিশুতোষ কোনো নতুন বই প্রকাশ করেনি।
শিশুদের প্রকাশনী কেবল শিশুচত্বরে নয় আছে উদ্যানের অন্য অংশেও। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে আছে শিশুতোষ বইয়ের প্রকাশনী 'দোলন'।
এদিকে মেলার ছয় দিন হলেও এখনো সিসিমপুরের স্টলে নতুন কোনো বই আসেনি। বিগত বছরে প্রকাশিত বই বিক্রিতেই ব্যস্ত স্টলটির বিক্রয়কর্মীরা।
আয়োজন ব্যবস্থাপনার দিক থেকে অনেক বেশি রঙিন হলেও শিশুচত্বরে উপস্থিতি বিগত বছরের চেয়ে কম বলে জানান বিভিন্ন স্টলের বিক্রয়কর্মীরা। বিক্রিও এখনো জমে ওঠে নি।
আব্দুল্লাহ ও সুমাইয়াকে নিয়ে তাদের মা শারমিন সুলতানা বিভিন্ন স্টলে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তিনি বলেন, "এবার শিশুচত্বরকে ভালোমতো সাজানো হয়েছে। কিন্তু বইয়ের সংখ্যা কম।"
আগের খবর