“শেষ দিকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এজন্য সবগুলো বই এখনো আনতে পারিনি,” বলেন প্রকাশক দেওয়ান আজিজ।
Published : 07 Feb 2025, 12:03 AM
চার বছরের আব্দুর রহমান ফাওয়াজ মা-বাবার সঙ্গে এসেছিল অমর একুশে বইমেলায়। শিশু চত্বরের বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে রঙিন বই দেখছিল সে।
ফাওয়াজের বাবা ইয়াসিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো অনেকবারই এসেছি, এবার ছেলেকে নিয়ে প্রথম এসেছি। এজন্য একটু বেশিই ভালো লাগছে। প্রথম বইমেলায় আসা ওর স্মৃতিতে থাকবে কি না জানি না। তবে আমার মনে থাকবে।”
বৃহস্পতিবার ছিল বইমেলার ষষ্ঠ দিন। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।
এদিন শিশু চত্বরে প্রবেশ করতেই নতুনত্ব চোখে পড়ল, এবার চত্বরটি আরো রঙিন।
বাংলা একাডেমির উল্টো দিকে ফটক দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করলেই হাতের ডান দিকে শিশু চত্বর লেখা ফটক। গাছ, ফূল, জেব্রা, জিরাফ, পাখির ছবি দিয়ে নকশা করা ফটকে চোখ আটকে থাকে।
শিশুতোষ বইয়ের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে বইমেলায় শিশু চত্বরে ফটক থাকত না। এবার ফটক থাকায় দূর থেকেই চোখে পড়ে শিশুদের জন্য বিশেষভাবে সাজানো মেলার এ অংশটি।
গেল বইমেলায়ও শিশু চত্বরে ছিল প্রাণ উচ্ছ্বাসের আয়োজন ‘সিসিমপুর’। এবার তা না থাকায় জায়গাটি খালি পড়ে আছে।
শিশু চত্বরের বিভিন্ন স্টলে ঘুরে দেখা যায়, নান্দনিক নকশা আর চাকচিক্য থাকলেও নতুন বইয়ের সংখ্যা এবার তুলনামূলক কম।
জুলাই অভ্যুথানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মেলা কেমন হবে, তা নিয়ে সংশয়ে থাকায় কোনো কোনো প্রকাশক বিনিয়োগের ব্যাপারে শঙ্কায় ছিলেন বলেছেন তারা।
‘পঙ্খীরাজ’ এবার এনেছে দেওয়ান আজিজের সম্পাদনায় ‘ছোটদের সেরা জোকস’ ও সৈয়দ আবু সুফিয়ানের ‘ভূতের বাড়ি’ নামে নতুন বই।
পঙ্খীরাজের প্রকাশক দেওয়ান আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার মেলা কেমন হবে, তা নিয়ে তো একটু দ্বিধায় ছিলামই। বই প্রকাশ করতে হলে তো বিনিয়োগ লাগে। তবে শেষ দিকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এজন্য সবগুলো বই এখনো আনতে পারিনি।
“আমরা চারটির মত নতুন বই এনেছি। সব মিলিয়ে ১০/১২টা নতুন বই আনার পরিকল্পনা আছে।”
‘ময়ূরপঙ্খী’ এনেছে তাহমিনা রহমানের ‘চকলেটের পাহাড়’, হাসান হাফিজের ‘পিঁপড়াবাহিনী ও ঘাসফড়িং’, ফারজানা তন্নীর ‘নতুন বন্ধু’, রাজিয়া সুলতানার ‘বাবির গাড়ি বুম বুম’।
শিশু চত্বরে আছে শব্দশিল্প প্রকাশন, ঝিঙেফুল, শিশুরাজ্য, ফুলঝুড়ি, পঙ্খীরাজ, শিশুবেলা, চিরন্তন প্রকাশ, শৈশব প্রকাশ, কাকাতুয়াসহ বিভিন্ন প্রকাশনী।
আছে বাংলা একাডেমির শিশুতোষ বইয়ের স্টলও। তবে একাডেমির স্টলের বিক্রয়কর্মীরা বলেন, এবারের মেলায় এখনো তারা শিশুতোষ কোনো নতুন বই প্রকাশ করেনি।
শিশুদের প্রকাশনী কেবল শিশুচত্বরে নয়, আছে উদ্যানের অন্য অংশেও।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে আছে শিশুতোষ বইয়ের প্রকাশনী ‘দোলন’। শিশুদের পত্রিকা হিসেবে যাত্রা শুরুর পর থেকে শিশুতোষ বিভিন্ন বইও প্রকাশ করছে তারা। এবারই প্রথম মেলায় প্রকাশনা হিসেবে স্টল বরাদ্দ পেয়েছে।
দোলন এর প্রকাশক কামাল মুস্তাফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এবার ১৫টির মত নতুন বই প্রকাশের পরিকল্পনা করেছি। কিছু বই প্রকাশ হয়েছে, আর কিছু বই আসার অপেক্ষায় এখন ছাপাখানায় আছে।”
শুক্রবার ছুটির দিন থেকে বইমেলা আরো বেশি জমজমাট হবে বলে আশা এই তরুণ প্রকাশকের।
জুলাইয়ের গল্প শোনাতে নতুন মঞ্চ
বইমেলার ষষ্ঠ দিন থেকে শুরু হল জুলাই গণঅভুত্থানের ‘শহীদদের’ স্মরণ ‘জুলাইয়ের গল্প’ শীর্ষক একটি নতুন কার্যক্রম। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে কথা বলেন ‘শহীদ’ আনাসের বাবা ও মা। সঞ্চালানায় ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক বিশেষ সেলের সেল সম্পাদক হাসান ইমাম।
এসেছে আরো নতুন বই
বইমেলার জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, মেলায় বৃহস্পতিবার নতুন বই এসেছে ৮০টি।
আগামী প্রকাশনী এনেছে হাসনাত আবদুল হাইয়ের উপন্যাস ‘জুলাই ক্যালাইডোস্কোপ’। বইটির ফ্ল্যাপে বলা হয়েছে- এপিকের মত এই উপন্যাসের কাহিনী শুরু হয়েছে সমকালে, যার ডানা সুদূরপ্রসারী হয়ে প্রসারিত মহাকালের দিকে। এছাড়া মেজর (অব.) নাসির উদ্দিনের লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ’ নামেও আরেক নতুন বই এনেছে আগামী।
প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য এনেছে সরদার আবদুর রহমানের ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাত দশক : ইসলামপন্থি দলগুলোর ভূমিকা’।
কথাপ্রকাশ এনেছে দন্ত্যস রওশনের ‘গল্পবেলা’, অনিন্দ্য প্রকাশ এনেছে মাহতাব হোসেনের থ্রিলার ‘৩ নম্বর প্লাটফর্ম’।
কবিতা পাঠ, বই নিয়ে আলোচনা
এদিন ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- টোকন ঠাকুর এবং জাকির আবু জাফর।
মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: মাহবুবুল হক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তারিক মনজুর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মাহবুব বোরহান ও মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আজিজুল হক।
কবিতা পাঠ করেন কবি সাখাওয়াত টিপু ও কবি জব্বার আল নাঈম। আবৃত্তি পরিবেশন করেন- শহীদুল ইসলাম ও আশরাফুল হাসান বাবু।
এছাড়া ছিল- শাহাবুদ্দিন আহমেদ দোলনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সুরসুধা সংগীতায়ন’ এবং সাইফুল ইসলামের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘উজান’-এর পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আজগর আলীম, সৈয়দ আশিকুর রহমান, খায়রুল ওয়াসি, মো. মানিক, অগ্নিতা শিকদার মুগ্ধ ও আঁখি আলম। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন- আব্দুল মতিন (তবলা), ডালিম কুমার বড়ুয়া (কি-বোর্ড), নাজমুল আলম খান (মন্দিরা) ও মো. আতিকুল ইসলাম (বাঁশি)।
শুক্রবার মেলায় যা থাকছে
শুক্রবার বইমেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। এর মধ্যে সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুদের উৎসাহ যোগাতে ‘শিশুপ্রহর’ উদযাপন করা হবে। তবে বিগত বছরের মতো এবার শিশুপ্রহরে থাকছে না ‘সিসিমপুর’।
অমর একুশে পালনে অংশ হিসেবে সকাল ৮:৩০টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সাত্তার।
এছাড়া সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ: গোলাম মুরশিদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সামজীর আহমেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন স্বরোচিষ সরকার ও গাজী মো. মাহবুব মুর্শিদ। সভাপতিত্ব করবেন মোরশেদ শফিউল হাসান।