২৪৮ কোটি টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জন এবং ৫৭ কোটি টাকা কানাডায় পাচারের অভিযোগ আনা হচ্ছে এসব মামলায়।
Published : 09 Feb 2025, 08:26 PM
ঋণ কেলেঙ্কারিতে গাড্ডায় পড়া রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ২৪৮ কোটি টাকার ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ’ অর্জন এবং ৫৭ কোটি টাকা কানাডায় পাচারের অভিযোগ চারটি মামলা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেছেন, কমিশন রোববার তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে। সোমবার এসব মামলা দায়ের করা হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে একসময় ভালো অবস্থানে থাকা বেসিক ব্যাংকের চার হাজার কোটি টাকার অনিয়মের খবর সামনে এলে সমালোচনা শুরু হয়। আব্দুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকাকালে বেনামি ও ভুয়া ঋণ দিয়ে বিপুল এসব অর্থ আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এই প্রেক্ষাপটে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে বেসিক ব্যাংকের দুই হাজার ২৬৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ৫৯টি মামলা করে দুদক। কিন্তু সেসব মামলার কোনোটিতেই আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি না করায় নতুন করে সমালোচনা শুরু হয়।
প্রায় ৭ বছর তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের জুনে ৫৯ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় দুদক। এর মধ্যে ৫৮টিতে বাচ্চুর নাম আসে।
অভিযোগপত্রভুক্ত আসামির তালিকায় আছেন ৪৬ ব্যাংক কর্মকর্তা ও ১০১ জন গ্রাহক। তবে এসব মামলার কোনোটিতে পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করেনি দুদক।
ওই ৫৯ মামলার মধ্যে ১৪টিতে চলতি মাসেই অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত।
শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে অনুমোদন করা দুদকের নতুন মামলায় ৬৮ কোটি ৭৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন এবং ৫৬ কোটি ৫৭ লাখ ১০ হাজার ২০৬ টাকা কানাডায় পাচারসহ মোট ১২৪ কোটি ৯৩ লাখ ৬ হাজার ২৭৫ টাকার ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ’ অর্জনের অভিযোগ আনা হচ্ছে।
দুদক বলছে, কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তিনি ‘মিথ্যা তথ্য’ দিয়েছেন এবং ‘অবৈধভাবে’ উপার্জিত অর্থ ‘কানাডায় পাচার’ করেছেন।
দুদক কর্মকর্তা আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ৫৮টি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণামূলকভাবে ঋণ দিয়ে অবৈধভাবে ওই অর্থ উপার্জন করেন।''
দ্বিতীয় মামলায় বাচ্চুর সঙ্গে তার স্ত্রী শিরিন আকতারকে আসামি করা হচ্ছে। স্বামীর সহায়তায় ৩৬ কোটি ৫১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৬ টাকার ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হচ্ছে শিরিনের বিরুদ্ধে।
তৃতীয় মামলায় বাচ্চুর সঙ্গে আসামি হতে যাচ্ছেন তা ছেলে শেখ ছাবিদ হাই অনিক। তিনি তার বাবার সহায়তায় ৪৩ কোটি ৬২ লাখ ৬০৬ টাকার ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হচ্ছে।
তিনি বাবার কাছ থেকে ২৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দামের ২ কাঠা জমি পেলেও সম্পদ বিবরণীতে তা গোপন করেছেন এবং ‘অবৈধভাবে’ উপার্জিত ৮৭ লাখ ৬২ হাজার টাকা কানাডায় পাচার করেছেন বলে অভিযোগ আনা হচ্ছে।
চতুর্থ মামলায় বাচ্চুর সঙ্গে আসামি হচ্ছেন তার মেয়ে শেখ রাফা হাই। তিনি বাবার সহায়তায় ৪০ কোটি ৪১ লাখ ৪৫ হাজার ১৬৪ টাকার ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদকের ভাষ্য।
দুদক বলছে, রাফা তার বাবার কাছ থেকে ৮৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা দামের ৬ কাঠা জমি পেলেও সম্পদ বিবরণীতে তা গোপন করেছেন। ‘অবৈধভাবে’ উপার্জিত ৭৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা কানাডায় ‘পাচার’ করেছেন।
জাতীয় পার্টির সাবকে সংসদ সদস্য আব্দুল হাই বাচ্চুকে ২০০৯ সালে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। এরপর থেকে ব্যাংকটির ঢাকার গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখায় বড় অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটতে থাকে।
ঋণে অনিয়মের পাশাপাশি ব্যাংকটিতে নিয়োগেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ সেসময় প্রকাশ পায়; ২০২২ সালে জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিও তাদের পর্যবেক্ষণে বিষয়টি তুলে ধরে।
সংবাদ মাধ্যমে এসব ঘটনা প্রকাশ হতে শুরু করলে ২০১৪ সালে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলাম ও উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোনায়েম খানকে সরিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পরির্ষদ ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করে। পরে আব্দুল হাই বাচ্চু পদত্যাগ করেন বেসিক ব্যাংক থেকে।