এনবিআর বলছে, ‘একটি ন্যায়নিষ্ঠ সমতাভিত্তিক কর ব্যবস্থার’ জন্য এমন সুযোগ ‘বৈষম্যমূলক’।
Published : 02 Sep 2024, 09:54 PM
অপ্রদর্শিত অর্থ হিসেবে বিবেচিত কালো টাকা বৈধ বা সাদা করার সুযোগ আর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার চার দিনের মাথায় এবার প্রজ্ঞাপন করে তা বাতিল করা হয়েছে।
ক্ষমতার পালাবদলের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ঢালাওভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
এর কারণ হিসেবে দেশের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটি বলছে, ’একটি ন্যায়নিষ্ঠ সমতাভিত্তিক কর ব্যবস্থার’ জন্য এমন সুযোগ ‘বৈষম্যমূলক’।
এ বিষয়ে এক বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর বলেছে, “একজন নিয়মিত করদাতাকে তার আয়ের উপর সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর প্রদান করতে হয় এবং একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে প্রদেয় করের উপর আরও সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ হারে সারচার্জ প্রদান করতে হয় বিধায় মাত্র ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদান করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ করে দেওয়া একটি ন্যায়নিষ্ঠ সমতাভিত্তিক কর ব্যবস্থার জন্য বৈষম্যমূলক।”
আগের সরকার অর্থনীতিবিদ ও সাধারণ করদাতাদের সমালোচনার পরও চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিনাপ্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ, নগদ টাকা এবং শেয়ারসহ যেকোন বিনিয়োগ ১৫ শতাংশ কর দিয়ে তা বৈধ করার সুযোগ দেয়।
তবে সরকার পতনের পর দায়িত্বে আসা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সুযোগ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এর চার দিনের মাথায় তা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন করা হল; যাতে বলা হয়েছে, “১৫ শতাংশ আয়কর পরিশোধ করে নগদ অর্থসহ অপরিদর্শিত সমজাতীয় পরিসম্পদ প্রদর্শনের বিশেষ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্তি করা হল।”
তবে চলতি বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগেরে জন্য দেওয়া আরেকটি সুযোগের বিষয়ে এ প্রজ্ঞাপনে কিছু বলা হয়নি।
এতে করে স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্লোর স্পেস ও ভূমি আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত থাকলে তা নির্ধারিত হারে আয়কর দিয়ে বৈধ করার বিধানটি বহাল থাকছে।
অর্থ আইনের বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী, স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্লোর স্পেসের ক্ষেত্রে মৌজাভেদে প্রতি বর্গমিটারে ৫০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা আয়কর দিয়ে তা বৈধ করা যাবে।
এছাড়া ভূমির ক্ষেত্রে মৌজাভেদে প্রতি বর্গমিটারে ৩০০ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা আয়কর দিলে তা বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
এ পরিসম্পদ অর্জনের উৎস বিষয়ে আয়কর আইন ২০২৩ বা অন্য কোনো আইনে যা কিছু থাকুক না কেন, আয়কর কর্তৃপক্ষসহ অন্য কোনো সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যক্তির কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। যদি সেই ব্যক্তি ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ২০২৪-২৫ করবর্ষের রিটার্ন বা সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করেন।
তবে কর ফাঁকির কার্যধারা চলমান থাকলে কিংবা যেকোনো আইনের অধীন ফৌজদারি মামলার কার্যধারা চলমান থাকলে এই নিয়মে কর পরিশোধ করা যাবে না।
এদিন এনবিআর অপরিদর্শিত অর্থ ঢালাওভাবে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বাতিলের বিষয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটি সত্যিকারের বৈষম্যমুক্ত, ন্যায়ানুগ ও প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।”
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বা অর্থ সাদা করার পরও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে কোনো বাধা না থাকার প্রভাব পড়ে কালো টাকা সাদা করায়। সবশেষ ২০২৩-২৪ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেউ কালো টাকা সাদা করেনি।
তবে এর আগের বছর ২০২১-২২ অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করেন দুই হাজার ৩১১ জন; অর্থের পরিমাণে তা এক হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা।
এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত নগদ অর্থ, ব্যাংক আমানত প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়।
একইসঙ্গে বর্গমিটার প্রতি নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে প্লট-ফ্ল্যাট প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়।
এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তখন ১১ হাজার ৮৫৯ জন করদাতা কালো টাকা সাদা করেন। এরমধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন ২৮৬ জন, জমিতে এক হাজার ৬৪৫ জন, ফ্ল্যাটে দুই হাজার ৮৭৩ জন এবং নগদ অর্থ প্রদর্শন করেছেন সাত হাজার ৫৫ জন।
আরও পড়ুন
বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত
১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ
কালো টাকা: শুধু প্রতিষ্ঠানকে সাদা করতে দেওয়ার পক্ষে এফবিসিসিআই
'কালো টাকা' বিনিয়োগের সুযোগের প্রশংসায় রিহ্যাব
অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ কেন?
'অপ্রদর্শিত' আয়ে কেনা জমি-ফ্ল্যাট বিনাপ্রশ্নে বৈধ করার সুযোগ