“এই টাকা মূলধারায় নিয়ে না আসলে তো পাচার হয়ে যাবে। তাতে কার ক্ষতি? বরং মন্দের ভালো যে, দেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে,” বলেন রিহ্যাব সভাপতি।
Published : 09 Jun 2024, 08:12 PM
আবাসন খাতে ‘কালো টাকা’ বা অপ্রদর্শিত আয়ের বিনিয়োগের সুযোগকে ‘সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত’ বলে মনে করছে এ খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-রিহ্যাব।
সংগঠনটির সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেছেন, “নৈতিকভাবে সঠিক নাহলেও প্রস্তাবিত বাজেটে এই সিদ্ধান্তের ফলে আবাসন বিনিয়োগ আসবে, সরকারের রাজস্ব বাড়বে।”
তার ভাষ্য, “এটা তো আসলে মূল ধারার অর্থনীতিতে যুক্ত হচ্ছে। এই টাকার অস্তিত্ব তো আছে। তো সেই টাকাটা পড়ে থেকে তো লাভ নেই। এটা বিনিয়োগ করলে সরকারেরই লাভ।
“এই টাকা যদি মূলধারায় নিয়ে না আসেন, তাহলে তো টাকা পাচার হয়ে যাবে। তাতে কার ক্ষতি? বরং মন্দের ভালো এটা যে, দেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে রোববার দুপুরে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় একথা বলেন ওয়াহিদুজ্জামান।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি পর্যায়ে স্বাভাবিক কর হার বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে নিয়মিত কর দেওয়ার পরে অতিরিক্ত জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করারও সুযোগ থাকে। এবার ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
রিহ্যাব সভাপতি বলেন, “নৈতিকতার প্রশ্নে আমি বলব, যে জিনিসটা হয়ত সঠিক না। একজনকে ১৫ শতাংশ আরেকজনকে ৩০ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিচ্ছেন, এটা হয়ত উচিত না।
“কিন্তু আপনি যদি একজনকে টেক্সনেটের আওতায় নিয়ে আসেন, টিনের আওতায় নিয়ে আসেন, ভবিষ্যতে তো তাকে ট্যাক্স দিতে হবে।”
ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, “২০২০-২০২১ অর্থবছরে বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় ২০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় এসেছে। এর মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োগের সু্যোগ দেওয়া এটি বাস্তবসম্মত ও সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত।”
বাজেট ব্যবসাবান্ধব কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “সার্বিকভাবে দেখলে আংশিক ব্যবসাবান্ধব। আমাদের অন্য দাবিগুলো যদি যুক্ত করা হয়, তাহলে আমি বলব পুরোপুরি ব্যবসাবান্ধব।”
ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কমানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “পরিচালনা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বিপুল ব্যয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না রাজস্ব আয়। আমরা রিয়েল এস্টেট খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের পদ্ধতি পরিবর্তন করার অনুরোধ করব। বর্তমানে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় অত্যধিক।
“এর মধ্যে গেইন ট্যাক্স ৮ শতাংশ, স্ট্যাম্প ফি ১ দশমিক ৫ শতাংশ, রেজিস্ট্রেশন ফি ১ শতাংশ, স্থানীয় সরকার কর ২ শতাংশ, এমআইটি ৫ শতাংশ, মূল্য সংযোজন কর ৪ দশমিক ৫ শতাংশ মিলে মোট ২২ শতাংশ। এর সাথে যদি করপোরেট ট্যাক্স যোগ করা হয়, তাহলে রেজিস্ট্রেশনের খরচ প্রায় ৩০ শতাংশ।
“এবারের বাজেট পরবর্তী রেজিস্ট্রেশন খরচ সব মিলিয়ে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। আমরা ইতোপূর্বে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কমানোর প্রস্তাব দিয়ে আসছি।”
ওয়াহিদুজ্জামানের মতে, রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কম হলে ক্রেতারা জমির সঠিক মূল্য দেখাতে উৎসাহিত হবে। ফলে অপ্রদর্শিত অর্থ তৈরি হওয়া স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পাবে।
“দেশের অর্থনীতিতে বিপুল পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ বিদ্যমান, সে জন্য এই বড় অংকের নিবন্ধন ব্যয় কিন্তু দায়ী। নিবন্ধন ব্যয় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এমনকি বিশ্বের মধ্যেও সবচেয়ে বেশি। যেটা আমরা আগেও বলেছি। নিবন্ধন ব্যয় কমালে রাজস্ব আয় কমবে না, বরং আরও বাড়বে।”
পুরাতন ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয় নতুন ফ্ল্যাটের সমান হওয়াকে ‘অযৌক্তিক’ অভিহিত করে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, “পুরাতন ফ্ল্যাট বিক্রির সেকেন্ডারি মার্কেট গতিশীল নয়। এক্ষেত্রে সেকেন্ডারি মার্কেট ৫ বছরের পুরনো ফ্ল্যাট ৪ শতাংশ হারে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় সংক্রান্ত নিয়ম চালু হলে একদিক যেমন স্বল্পবিত্তরা ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন, তেমনি অনেক নাগরিকের কর্মসংস্থান হবে।”
রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি এম এ আউয়াল, সহসভাপতি মোহাম্মদ আক্তার বিশ্বাস, সহ সভাপতি (অর্থ) আব্দুর রাজ্জাক, দেলোয়ার হোসেন, প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া স্ট্যান্ডিং কমিটির পরিচালক মুহাম্মদ লাবিব বিল্লাহ্ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।