“আমরা এখনো তদন্ত করছি। তদন্তের প্রয়োজনে ভারতের একটি টিম এখানে (বাংলাদেশে) আসবে। প্রয়োজনে আমাদের একটি টিমও সেখানে (ভারত) যাবে।”
Published : 23 May 2024, 03:35 PM
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যাকারীদের ‘চিহ্নিত করা হয়েছে’ বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রায় সব কিছু চিহ্নিত হয়েছে। কারা হত্যা করেছে, তাদের চিহ্নিত করে প্রায় কাছাকাছি এসে গেছি। এখন শুধু ঘোষণার বাকি।”
দুই দেশের গোয়েন্দারা একমত হতে পারলে সেই ঘোষণা দেওয়া হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা এখনো তদন্ত করছি। তদন্তের প্রয়োজনে ভারতের একটি টিম এখানে (বাংলাদেশে) আসবে। প্রয়োজনে আমাদের একটি টিমও সেখানে (ভারত) যাবে।”
ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।
এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার।
পরে বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আনারকে কলকাতার ওই বাসায় ‘পরিকল্পিতভাবে খুন’ করা হয়েছে। তবে তার মরদেহ এখনও পাওয়া যায়নি।
ভারতীয় পুলিশের কাছ থেকে এ বিষয়ে তথ্য পওয়ার পর বাংলাদেশের পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেটুকু তথ্য তারা পেয়েছেন, তাতে খুনিরা বাংলাদেশের।
লাশ না পেয়ে হত্যার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন তদন্তকারীরা, সেই প্রশ্ন বুধবার থেকেই ঘুরছে। বৃহস্পতিবার এ প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা হত্যা করেছেন, ‘তাদের মুখ থেকে শুনেই’ নিশ্চিত হওয়া গেছে।
“ভারতীয় পুলিশ এবং বাংলাদেশের পুলিশ কাজ করছে। আমরাতো সুনিশ্চিত হয়েছি তাকে হত্যা করা হয়েছে।”
আনার খুন হওয়ার পর তার বিরুদ্ধেও চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আসছে সংবাদমাধ্যমে। বলা হচ্ছে, সোনা চোরাচালান নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “তিনি তিনবাবের এমপি। ওই জায়গাটা (ঝিনাইদহ) একটু সন্ত্রাস কবলিত এলাকা। বর্ডার এলাকা। সেই এলাকার তিনি এমপি। কি কারণে হত্যা হয়েছে সুনিশ্চিত না হয়ে আমাদের বলা ঠিক হবে না। নিশ্চিত হওয়ার পর জানানো হবে।”
ভারতের একটি ফ্ল্যাটে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, ভারতীয় গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে, তাহলে কোনো ভারতীয়র জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় কি না, সেই প্রশ্নে আস্দুজ্জামান খান বলেন, “কোনো কিছুই উড়িয়ে দিইনি। আমরা বলছি তদন্ত চলছে। দুই দেশের গোয়েন্দারা কাজ করছে।”
“এখন পর্যন্ত তথ্য হল, বাংলাদেশের মানুষ এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে। ভারতের কেউ জড়িত থাকলে তাদের গোয়েন্দারা আমাদের জানাবে।”
এই হত্যাকাণ্ডের সাথে কারা কারা জড়িত, এর মোটিভ কী, সবই তদন্ত শেষে বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
বুধবার বিকালে নিউ টাউনের সঞ্জীভা গার্ডেনস নামের ওই বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ঘুরে দেখে কলকাতার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী।
তিনি বলেন, “আমাদের কাছে যা তথ্য আছে তাতে এমপি আনোয়ারুলকে সর্বশেষ ১৩ মে এখানে ঢুকতে দেখা গেছে। এর আগে তিনি এখানে এসেছিলেন কিনা সেটি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে তার লাশ উদ্ধার করা যায়নি।”
লাশ উদ্ধার না করে কীভাবে তাকে হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হচ্ছেন জানতে চাইলে অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, “আমাদের কাছে ইনপুট আছে।”
পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনারকে খুন করা হয়েছে, সেই ফ্ল্যাটের মালিক সন্দ্বীপ রায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারী। ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
তবে আখতারুজ্জামান এখনো ধরা পড়েননি। ভারত থেকে নেপাল হয়ে এরইমধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে খবর পেয়েছে ঢাকার পুলিশ।
বাংলাদেশে এ বিষয়ে তদন্তে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এই আখতারুজ্জামানের বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে, এলাকায় তিনি শাহীন মিয়া নামে পরিচিত। তার ভাই কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র সহিদুজ্জামান।
কলকাতার পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমগুলো লিখেছে, ১৩ মে নিউ টাউনের ওই বাসায় শ্বাসরোধে খুন করা হয় আনারকে। পরে টুকরো টুকরো করে কাটা হয় দেহ। ১৬ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত তিন দিন ধরে দেহের অংশগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। তবে সেগুলো কোথায় ফেলা হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আনন্দবাজার লিখেছে, সঞ্জীভা গার্ডেনসের সিসি ক্যামেরার ভিডিও খতিয়ে দেখার পর তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বরাহনগর থেকে একটি গাড়িতে চেপে নিউ টাউনের ওই বাড়িতে আবাসনে পৌঁছান আনার। পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি সেই গাড়ির চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
এছাড়া একটি রাইড শেয়ারের গাড়িও দেখা গেছে সিসি ক্যামেরায়, যে গাড়িতে করে সন্দেহজনক কয়েকজন ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। সেই গাড়ির চালককেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে খবর দিয়েছে আনন্দবাজার।