উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। তবে কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী সাত দিন সব হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ থাকবে।
Published : 01 Sep 2024, 06:25 PM
চিকিৎসকদের উপর হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাসে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শর্ত সাপেক্ষে স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগমের সঙ্গে বৈঠকে তারা সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত কর্মবিরতি স্থগিত করতে সম্মত হন। তবে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আগামী সাত দিন দেশের সব হাসপাতালের আউটডোর সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার বিকালের এ বৈঠকে উপদেষ্টা দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি, মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, হাসপাতালের পরিচালক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক ও সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আগের রাতে মারধরের শিকার চিকিৎসক ইমতিয়াজকে দেখতে যান। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বৈঠকে আলোচনার ভিত্তিতে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি স্থগিত করতে সম্মত হয়েছেন।
”তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তিনটা দাবি তাদের-হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা দিতে আইনশৃংখলা বাহিনী মোতায়েন, চিকিৎসা সুরক্ষা আইন করতে হবে। তাদের দাবি শুনেছি, কথা বলেছি। আক্রমণকারীদের কালকের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে। বাকি দাবিগুলো ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। এরপর তারা আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।“
উপদেষ্টার বক্তব্যের পর হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হাসপাতালের সব সার্ভিস এরপর থেকে চালু করা হবে।
তবে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও পরিচালকের বক্তব্যে দিয়ে যাওয়ার পরপরই সাংবাদিকদের সামনে আসেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক ডা. মো. আব্দুল আহাদ বলেন, উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দেশের সব হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিরাপত্তা চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তাদের জানিয়েছেন শুধু বিভাগীয় হাসপাতালে নিরাপত্তা দেওয়ার মত জনবল আছে। এ কারণে তারা কর্মসূচি শর্তসাপেক্ষে স্থগিত করেছেন।
"তার মানে হলো একজন চিকিৎসকের নিরাপত্তার জন্য একজন পুলিশ, বিজিবি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দিতে হবে। যেসব হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে সেসব হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আমরা চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু করব, জরুরি অস্ত্রোপচার হবে। কোনো ধরনের রুটিন সেবা, আউটডোর সেবা চালু থাকবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে না ততক্ষণ ইমার্জেন্সি চালু করা হবে না।"
তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
"যদি ওই সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করে জনসম্মুখে না আনা হয় তাহলে আগামীকাল রাত ৮টার পর আবার শাটডাউন চলবে।"
তিনি বলেন, কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী সাত দিন সারাদেশের সব হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ থাকবে।
"এই সাত দিনের মধ্যে আমাদের আরও দুটি দাবি ছিল এগুলো পূরণ করতে হবে। এর একটা হল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায় স্বাস্থ্য পুলিশ নিয়োগ দিতে হবে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।"
এর আগে হামলার প্রতিবাদ এবং নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতিতে সঙ্গে আলোচনা করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামানের কক্ষে এ বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহও ছিলেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার রাতে তিন দফায় হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এরপর রাতেই কাজ বন্ধ করে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। অন্য চিকিৎসকরাও তাদের কর্মবিরতিতে সংহতি জানালে রোববার সকাল থেকে হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য স্থানেও চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে গেলে দুর্ভোগে পড়েন রোগিরা।
হামলাকারীদের আটক ও শাস্তির পাশাপাশি সারা দেশে চিকিৎসক ও রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ দুই দফা দাবি জানানো হয় চিকিৎসকদের তরফ থেকে। কিন্তু দাবি পূরণের আশ্বাস না মেলায় দুপুরে সারা দেশে সব চিকিৎসাকেন্দ্রে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করে ছয় দফা দাবি জানানো হয়।