ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বাড়ানোর আলোচনা

পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের এই বৈঠকে আদানির বিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

ঢাকায় বুধবার দুই পক্ষের বৈঠকে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।

দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে ‘ফরেন অফিস কনসালটেশনে’ বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা করেছে বাংলাদেশ ও ভারত. যার বড় অংশজুড়ে ছিল বিদ্যুৎ।

বুধবার দুপুরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় খাতরা এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উভয় দেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।

বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরার সময় মাসুদ বিন মোমেন ভারতের সঙ্গে জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির কথা বলেন। তবে আদানির বিদ্যুতের প্রসঙ্গ আসেনি আলোচনায়।

তিনি বলেন, “আমরা ভারত হতে বর্তমানে প্রায় ১১শ ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি। ভারত হতে আমাদের বিদ্যুৎ আমদানি আগামী দিনে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলেও আমরা আশা করছি।”

ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জ্বালানির বাজারে অস্থিরতা নিয়ে এই খাত নিয়ে আলোচনায় জোর ছিল বাংলাদেশের।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “চলমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহে আমি গুরুত্ব আরোপ করেছি। ভারত হতে জ্বালানি আমদানি করতে বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপ লাইন উদ্যোগের বিষয়েও আলোচনা করেছি। ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনার বিষয়েও ভারতের সহযোগিতা চেয়েছি।”

বাংলাদেশের ভেতরে সঞ্চালন লাইনের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি

আদানির বিদ্যুৎ আসা, কলকাতার মামলা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- সেই প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “এ বিষয়ে কোনেো আলোচনা হয় নাই। আমরা এটা কমপিটেন্ট মিনিস্ট্রিও না।

“এটা নিয়ে লেটেস্ট যারা আলোচনা করার কথা, তারা করেছে কি-না আমি জানি না। আমাদের ওভারঅল সহযোগিতার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”

ভারতকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর বাণিজ্য অংশীদার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে যে সমস্ত ট্যারিফ বা বাধা আছে, সেগুলো দূর করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছি। আমরা ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছি।

“এছাড়া দু’দেশের মধ্যে যে কমপ্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট বা সেফা, সেটা সম্পাদনের জন্য আলোচনা দ্রুত সময়ের মধ্যে করার বিষয়ে আলোচনা করেছি।”

আঞ্চলিক পর্যায়ে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বাড়ানোর কাজ বেগবান করা নিয়েও দুই পক্ষের আলোচনা হয়েছে।

তিস্তা, সীমান্ত, রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “আমরা বলেছি, বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী ও গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হিসেবে আমরা বিদ্যমান যে অনিষ্পন্ন ইস্যু রয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তির বিষয়ে ভারতের সহায়তা আমরা কামনা করি।”

তিস্তাসহ সব আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে দ্রুত চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হয়েছে।

“সেই সঙ্গে গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে স্বাক্ষরিত চুক্তির বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে ভারতকে বলেছি।”

সীমান্ত হত্যার বিষয়ে আলোচনার কথা তুলে ধরে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “সীমান্ত হত্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। এটিকে শূন্যে নামিয়ে আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে ভারত সরকার উদ্যোগ নেবে বলে আমরা প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি।”

তিস্তা চুক্তি ও সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়ে ভারতের বক্তব্য কী ছিল- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “তাদের কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের যে সমস্যা, এটা এখনও বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু তারপরও আমাদের যে আবেদন, সেটার ব্যাপারে তারা তাদের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিয়েছে।

“তারা বলেছে যে, (সীমান্তে) একটি মৃত্যুও কাঙ্ক্ষিত নয়। তবে, কিছু কিছু এলাকাতে যে ধরনের চোরাকারবারি বা ওই ধরনের কিছু একটিভিটিজ আছে, সেগুলার ব্যাপারে বিএসএফ এবং বিজিবি যদি আরও সজাগ থাকে, তাহলে হয়ত এগুলো আমরা আরও কমিয়ে আনতে পারি বা জিরোতে যাতে আনা যায়।”

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ভারতের সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে এবং ভারতের প্রতিক্রিয়া কী ছিল, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “তারাও কাজ করছে। আমরা বলেছি যে, তাদের যদি কোনো সুযোগ থাকে, তাহলে তারা যেন এই প্রক্রিয়াতে একটা জোরদার সক্রিয় ভূমিকা রাখে।”

প্রধানমন্ত্রীর সফর

আগামী সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “ভারতের পররাষ্ট্র সচিব প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ নেতৃত্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন এবং বাংলাদেশ একটি রোল মডেল হিসেবে অভিজ্ঞতা শেয়ার করবে জি-২০ বিভিন্ন মিটিংগুলো হচ্ছে বর্তমানে।

“ইতোমধ্যে গ্লোবাল সাউথের ভয়েজ হয়ে একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন ভার্চুয়ালি এবং আগামী সেম্পেম্বরে জি-২০ যে সম্মেলন হবে ওখানে তিনি ভূমিকা রাখবেন বলে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছি।”

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকের বিষয়ে এক প্রশ্নে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, নয়া দিল্লির আগ্রহে এই বৈঠক হয়েছে।

“এটা ওরাই রিকোয়েস্ট করেছে। আমরা সেই রিকোয়েস্টে সাড়া দিয়েছি। যে সমস্ত বিষয় আমাদের প্রধানমন্ত্রীর গত দিল্লি সফরে ছিল, সেখানে যে সমস্ত সিদ্ধান্ত হয়েছিল, দুপক্ষেরই কিছু ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক বা ওদের যে কাঁটাতারের বেড়ার কিছু অংশ বাকি রয়েছে ত্রিপুরাতে, সে ব্যাপারে যে সমস্ত সমঝোতা হয়েছিল, সেগুলার বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল, সে যাতে রিজল্ভ করা যায়, সেটার ব্যাপারেই তারা বসেছেন। এবং আমার ধারণা অচিরেই এই কাজগুলো শুরু হবে।”