পাইকারি বাজারে দাম বাড়তির প্রভাব পড়েছে পাড়া-মহল্লার বাজারেও।
Published : 07 Sep 2024, 12:25 AM
বাজারে চড়তে শুরু করেছে ডিম ও মুরগির দাম, তবে সবজি ও মাছে প্রকার ভেদে বাড়া-কমা উভয়ই দেখা গেছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমে খুচরায় ডজনপ্রতি বেড়েছে ৭ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত। মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা।
শুক্রবার ঢাকার কাপ্তান বাজার, কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়া বাজারে ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
এ দিন ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১৫৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা আগের সপ্তাহে ১৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ফার্মের মুরগির সাদা ডিম বিক্রি হয়েছে ডজনপ্রতি ১৫০ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ১৪৪ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।
ক্রেতাদের এক ডজন হাঁসের ডিম কিনতে দেখা গেছে ২২০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ২০৫ টাকা পর্যন্ত ছিল।
কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা মো. রিফাত বলেন, “এখন দাম একটু বাড়তির দিকে। ডজনপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। পাঁচ-ছয় দিনের ব্যবধানে এখন এমন বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
পাইকারি বাজারে দাম বাড়তির প্রভাব পড়েছে পাড়া-মহল্লার বাজারেও।
শুক্রবার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি করা হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। সাদা ডিম ক্রেতারা নিচ্ছেন ডজনপ্রতি ১৫৬ টাকায়; আর হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২২৫ টাকায়।
কাপ্তান বাজারে ডিমের আড়তদার মুস্তাফিজ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ বলেন, “আজ (শুক্রবার) পাইকারিতে প্রতিটি লাল ডিমের দাম গেছে ১২ থেকে ১২টাকা ২০ পয়সা, প্রতিটি সাদা ডিমের ১১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১১ টাকা ৮০ পয়সা। হাঁসের ডিম পিসপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৬ টাকা ৮০ পয়সা।
“গত সপ্তাহে সব ধরনের ডিমে গড়ে প্রতিটিতে ২০ থেকে ৩০ পয়সা কম ছিল।“
তাহলে খুচরা পর্যায়ে দাম বেশি কেন- এমন প্রশ্নে মাসুদ বলেন, খুচরায় লাল ডিম প্রতি হালি ৫২ টাকার বেশি বিক্রি হওয়ার কথা নয়।
“আমাদের পাইকারি হিসাবে লাল ডিম হালি প্রতি পড়ে ৪৮ থেকে ৪৮ টাকা ৮০ পয়সা। সেই ডিম সব খরচ মিলে খুচরায় কোনোভাবেই ৫২ টাকার ওপরে যাওয়ার সুযোগ নেই। যারা বাড়িয়ে বিক্রি করছেন, তারা অন্যায় করছেন।”
ডিমের দাম কমানোর একটি উপায়ের কথাও বলেছেন মাসুদ। তার মতে, ফিডের অর্থাৎ মুরগির খাবারের দাম যদি কমানো সম্ভব হয়, তাহলে ডিমের দাম এমনিতেই কমে যাবে।
অবশ্য কাপ্তান বাজারের চেয়ে তেজগাঁওয়ের আড়তে ডিমের পাইকারি দাম কম দেখা গেছে।
ডিমের পাইকারি দোকান আমানত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আমানত হোসেন বলেন, পাইকারিতে এক সপ্তাহ আগে প্রতিটি লাল ডিম ছিল ১১ টাকা ৩০ পয়সা, এখন সেটা ১১ টাকা ৮০ পয়সা। একটি সাদা ডিমের দাম ছিল ১১ টাকা ১০ পয়সা, এখন যা ১১ টাকা ৬০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। হাঁসের ডিম ছিল প্রতিটি ১৫ টাকা, এখন ১৬ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে।
আমানত হোসেনের মতে, মূলত বন্যার কারণে ডিমের দাম বাড়ছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, “উৎপাদন খরচের বিচারে লাল ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৫০ টাকা পর্যন্ত যৌক্তিক। এর বেশি হলে সেটা অতিরিক্ত দাম বলব।”
ডিমের উৎপাদনে বন্যার প্রভাবের কথা বলছেন সুমনও। তিনি জানাচ্ছেন, দেশে মোট সাড়ে ৪ কোটি ডিম উৎপাদন হত। বন্যার পর থেকে ২০ লাখ কমেছে। তাই ডিমের সরবরাহ কমেছে।
ফার্মের মুরগির কেজিতে ৫, সোনালিতে ১০ টাকা বেড়েছে
শুক্রবার বাজারে ফার্মের মুরগির দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে এখন ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সোনালি মুরগিতে ১০ টাকা বেড়ে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারের নূরজাহান চিকেন ব্রয়লার হাউজের বিক্রেতা মো. নাঈম বলেন, “মুরগির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। এর কারণ হইলো যে, বন্যায় অনেক মুরগি মারা গেছে। আর সামনে আরেকটু দাম বাড়তে পারে।”
বাজারে গরুর মাংস আগের দামেই বিক্রি চলছে। প্রতি কেজি মাংসের দাম ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কমেছে টমেটো-সিমের দাম
বাজারে সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে ২০ টাকা কমে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। এসব টমেটো আমদানি করা। বিক্রেতারা বলছেন, এখন আমদানি ভালো; তাই দামও একটু কমতির দিকে।
সপ্তাহের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি দাম কমেছে শিমের। গত সপ্তাহে কেজিপ্রতি শিম ছিল ১০০ টাকা, যা কমে শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি।
১০ টাকা কমেছে ঢেঁড়সের দাম, বাজারে কেজিপ্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর প্রতিটি লাউ ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
আগের দামেই বিক্রি চলছে শসা। শুক্রবার বাজারে হাইব্রিড শসা ৪০ ও দেশি শসা ৫০ টাকা দরে কিনেছেন ক্রেতারা। পেঁপে বিক্রি করতে দেখা গেছে ৩০ টাকা দরে।
বাজারে দাম চড়ে থাকা কিছু সবজি আগের দরেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। মানভেদে কেজিপ্রতি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ও করলা ৬০ টাকা এবং চিচিঙ্গা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বেড়েছে ফুলকপি ও বাঁধাকপির। প্রতিটির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি পটলের দাম ১০ টাকা বেড়েছে, ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। আর ধুন্দলের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা, শুক্রবার বিক্রেতাদের ৬০ টাকা দরে বেচতে দেখা গেছে।
এক দিনের ব্যবধানে কাচা মরিচের দাম ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি। তবে আগের শুক্রবারেও কাচা মরিচের একই দাম ছিল বলে দাবি করেছেন কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. রবিউল ইসলাম।
তিনি বলেন, “শুক্রবার একটু দাম বেশিই থাকে। অন্যান্য দিন দাম তুলনামূলক কম থাকে। আর এখন বাজারে বন্যার প্রভাব নাই আগের মত। বাজারে কিছু সবজির দাম কমছে, আবার কিছু সবজির দাম বাড়ছে।
“সরাসরি সবজির বাজার কম না কি বেশি, তা বলার সুযোগ নাই। চাহিদা যেটা বেশি আর মাল কম, দাম সেটার বেশি। আবার চাহিদা কম কিন্তু বাজারে মাল অনেক, সেটার দাম কম।”
কারওয়ান বাজারের কেনাকাটা করতে দেখা গেল নির্জন ঘোষ নামে এক ব্যক্তিকে। কথা হলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আজ একটু কম মনে হচ্ছে বাজার দর। একচুয়ালি বন্যার সময়ের তুলনায় কম। এই কয়দিন দাম বেশি ছিল মনে হচ্ছে।”
বাজারে আগের দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে পেঁয়াজ। ফরিদপুরের পেঁয়াজের কেজি ১১০ টাকা ও পাবনার পেঁয়াজ ১১৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এসব বাজারে আলুর কেজি ৫৫ টাকা, আদা ২২০ ও রসুন ২২০ টাকা দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ-রসুন বিক্রেতা নাজমুল আলম বলেন, “রসুনের দাম কেজি প্রতি ৫-৭ টাকা বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে ২ টাকা কমছে মনে হইল। কিন্তু সেটা খুচরাতে প্রভাব নাই।”
মাছের বাজার
বাজারে আগের সপ্তাহের মত তেলাপিয়ার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা। কৈ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা দরে।
১০ থেকে ২০ টাকা দাম বেড়েছে পাঙ্গাস, বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। অথচ সপ্তাহখানেক আগেও বাজারে ১৬০ টাকা কেজিতে মাছটি পাওয়া গিয়েছিল।
বাজারে রুই বিক্রি চলছে ২৮০ থেকে ৪২০ টাকা দরে। এটিও সপ্তাহখানেক আগে ২৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছিল। তবে এখন ২৮০ টাকার নিচে মিলছে না।
রুই ও পাঙ্গাস ছাড়া মাছের বাজারে সপ্তাহখানেক দামে তেমন পরিবর্তন নেই বলে তথ্য দিলেন কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা আল আমিন।